অথনীতি, Publish: 13/01/2018
শিল্পে গ্যাস-বিদ্যুত্ সংকট তবুও অবৈধ সংযোগ
ডলার সংকটে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এলসি ** ব্যাংক-আর্থিক খাতে অব্যবস্থাপনা ** দফায় দফায় জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি ** নগরজুড়ে অসহনীয় যানজট ** রাস্তাঘাটের বেহাল দশা
ইউরোর দরপতন, ব্রেক্সিট এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন প্রভাবের কারণে এমনিতেই আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্য প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হচ্ছে। সেইসাথে গ্যাস সংকটসহ নানা কারণে এটি আরো তীব্র হচ্ছে। ব্যাংক ঋণ ও বাড়ি ভাড়াসহ অন্যান্য ব্যয় মিটিয়ে অনেক ব্যবসায়ীর পক্ষে কারখানা চালিয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। শিল্পে নতুন বিনিয়োগ উত্সাহিত করতে রাজস্ব নীতিসহ অন্যান্য সব নীতি কৌশলসমূহ বছর বছর পরিবর্তন না করতে বিভিন্ন সময়ে দাবি জানাচ্ছে ব্যবসায়ীরা। বর্তমানে সারাদেশে দু’হাজার শিল্প-কারখানার মালিক গ্যাস সংযোগের আবেদন করে প্রতীক্ষায় রয়েছেন। যথাসময়ে সংযোগ না পেয়ে এরই মধ্যে অনেকে ঋণখেলাপির খাতায় নাম লিখিয়েছেন। চালু বহু কারখানা নির্ধারিত চাপে গ্যাস পায় না। এ জন্য কেউ কেউ সিলিন্ডার গ্যাসও ব্যবহার করেন কারখানায়। শিল্প খাতে চলমান দীর্ঘদিনের স্থবিরতার মধ্যেই এ সমস্যাগুলো উদ্যোক্তাদের ভাবিয়ে তুলছে। তবে দিনের পর দিন এসব সমস্যা যেন জিঁইয়ে রাখা হচ্ছে। ২০১৮ সালের জন্য শিল্প খাতের এমন শঙ্কার কথাই বলছেন উদ্যোক্তারা।

ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী

সামষ্টিক অর্থনীতিবিদ

বাংলাদেশের অর্থনীতি নানামুখী চ্যালেঞ্জের মধ্যেও এগিয়ে যাচ্ছে। বাজেটের আকার বৃদ্ধির সাথে সাথে মানুষের জীবনমান উন্নয়নের বিষয়টি চলে আসে। এদেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় অভ্যন্তরীণ সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা খুবই প্রয়োজন। এ জন্যে যথাযথভাবে কর কাঠামোর বিন্যাস এবং আদায়ের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি কর আদায়ের পর যারা করদাতা রয়েছেন, তারা যেন কর দিয়ে তার সর্বোত্তম ব্যবহার ও প্রতিদান পান সেজন্যে সেবা ব্যবস্থাপনার মান উন্নত হওয়া বাঞ্ছনীয়। সরকার বিদ্যুত্ উত্পাদনে জোর দিয়েছে, সেইসাথে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এই সুবিধা পৌছে দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। দেশে অবকাঠামোগত বিনির্মাণে সাম্প্রতিককালে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। তথ্য প্রযুক্তিখাতের বিকাশ ও ধীরে ধীরে সম্প্রসারিত হয়েছে। সরকার অবকাঠামো বিশেষ করে সড়ক ও রেল পথের উন্নয়নে জোর দিলেও নৌপথ উন্নয়নে আরো কার্যকর ভূমিকা নেওয়া প্রয়োজন। কেননা, পরিবহন খরচ কমাতে হলে নৌপথ ব্যবহার বাড়াতে হবে। তার মতে, বিনিয়োগকারীদের উত্পাদন খরচ অনেক ভাবে কমিয়ে আনা সম্ভব। বিশেষ করে ঘুষ, দূর্নীতি নিমূল করাসহ আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমিয়ে আনা প্রয়োজন। কেননা, এসব জটিলতার কারণে একজন বিনিয়োগকারী বিনিয়োগ করতে অনেক কিছু চিন্তা ভাবনা করেন। বিনিয়োগকৃত অর্থ সঠিক সময়ে ফিরে পাবার অনিশ্চয়তা নিয়ে বিনিয়োগকারীরা এগিয়ে আসে না।  সরকার মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে, দীর্ঘ মেয়াদে সেটি অবশ্যই প্রয়োজন। কিন্তু বর্তমান বিনিয়োগ পরিবেশের দ্রুত উন্নয়নে মেগা প্রকল্পের সাথে সাথে ছোট ছোট কিছু ব্যবসা সহায়ক পরিবেশ উন্নতির প্রকল্পও বাস্তবায়ন করতে হবে। তাহলে দ্রুত এর ফল পাওয়া সম্ভব হবে।

 উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সীমিত সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার সুনিশ্চিতকরণ করা প্রয়োজন এবং তা যথাযোগ্য তদারকির মাধ্যমে নিবিড় পরিচর্যার মাধ্যমে বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেয়া বাঞ্ছনীয়। এজন্য পরমুখাপেক্ষী না থেকে অভ্যন্তরীণ উত্স থেকে সম্পদ আহরণ এবং তার সুষ্ঠু বণ্টন ব্যবস্থার মাধ্যমে সুষম ব্যবস্থাপনায় বাস্তবমুখী পদক্ষেপ বাস্তবায়নের মাধ্যমে আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে উন্নয়ন করা বাঞ্ছনীয় হয়ে পড়েছে। এদেশের অর্থনীতি এখন পরমুখাপেক্ষীর শৃঙ্খল ভঙ্গ করে বরং অর্থনৈতিক উন্নয়নের হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। এখন সময় এসেছে ভবিষ্যতের বিনিয়োগ পরিস্থিতি উন্নতি করার। কেননা, অন্যদেশগুলো বসে নেই। বিশ্ব প্রতিযোগিতায় সবাই এগিয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার বিকল্প নেই।

০০০০০০০০০০০০০০০০০০

মাহমুদুর রহমান সুমন

গ্রিস-বাংলাদেশ চেম্বারের সেক্রেটারি

মাহমুদুর রহমান সুমন একজন উদীয়মান ও তরুণ উদ্যোক্তা। পিপি ওভেন ব্যাগ, বস্ত্র খাতসহ বিভিন্ন খাতে ব্যবসা করছেন তিনি। দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখার পাশাপাশি কর্মসংস্থান তৈরিতেও কাজ করছেন। বর্তমানে তিনি গ্রিস-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করছেন। একইসঙ্গে তিনি চায়না-বাংলাদেশ চেম্বারের পরিচালকও। সম্প্রতি ব্যবসা-বাণিজ্যের বর্তমান অবস্থা ও আগামী দিনের সম্ভাবনা নিয়ে কথা হয় এই উদ্যোক্তার। তিনি বলেন, গ্যাস-বিদ্যুতের সমস্যা সমাধান করে দেশের জনগোষ্ঠীকে কাজে লাগাতে পারলে এক অপার সম্ভাবনাময় দেশ হতে পারে বাংলাদেশ। একই সঙ্গে দেশি বিনিয়োগের পথ ধরে আসতে পারে বিদেশি বিনিয়োগ। সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা এক অচল শহরে রূপ দিয়েছে উল্লেখ করে এই উদ্যোক্তা বিনিয়োগ ও অর্থনীতির চাকা স্থবিরতার জন্য যানজটকে এক নম্বর সমস্যা হিসেবে দেখছেন। তিনি বলেন, বিদেশি ক্রেতাদের এখন ঢাকায় আসার কথা বললে যেন তারা আঁতকে উঠেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় সময় কাটাতে গিয়ে সব কিছুই স্থবির হয়ে পড়ছে বলে মনে করেন তিনি।

গ্যাস-বিদ্যুত্ খাতের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, এই খাতের উন্নতি যেমন হচ্ছে, তেমনি লুটপাটের মহোত্সব চলছে। তিনি তার নিজের শিল্প এলাকার চিত্র তুলে ধরে জানান, সেখানে প্রকৃত উদ্যোক্তারা গ্যাস পাচ্ছে না। তবে হাজার হাজার অবৈধ সংযোগ দিয়ে রীতিমতো চোরাকারবারিদের হরিরলুট চলছে গ্যাস খাতে। একই অবস্থা বিদ্যুতের বেলায়ও বলে জানান তিনি। একদিকে বৈধ গ্রাহক যেমন গ্যাস পর্যাপ্ত পাচ্ছেন না, তেমনি তাদের ঘাড়ে দফায় দফায় গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির খড়গ চলছে। নতুন বছরে এটি বিশ্ব বাজারে বাংলাদেশিদের তীব্র প্রতিযোগিতার মুখে ফেলবে।

তিনি বলেন, বিশ্বের যতগুলো সম্ভাবনাময় দেশ আছে বাংলাদেশ তার অন্যতম। বাংলাদেশের সুবিধাগুলোর অন্যতম হলো ডেমোগ্রাফিক্যাল ডিভিডেন্ড। সস্তা শ্রমের ফলে আমাদের বিনিয়োগের সম্ভাবনা অনেক। তবে যে পরিমাণে সম্ভাবনা আছে, সে হারে বিনিয়োগ হচ্ছে না। দেশি বিনিয়োগ না থাকার ফলে বিদেশি বিনিয়োগও আমরা পাচ্ছি না। কারণ হলো সব সময় বিদেশিরা কোনো দেশে বিনিয়োগের আগে সে দেশের বিনিয়োগের অবস্থা দেখে। মূল কথা হলো দেশি বিনিয়োগের পথ ধরেই বিদেশি বিনিয়োগ আসবে। তবে সস্তা শ্রমিকদের প্রশিক্ষণে উদ্যোক্তাদের যেমন চড়া মূল্য গুনতে হচ্ছে তেমনি আমাদের শ্রমিকদের দায়িত্বহীনতার কথাও মনে করিয়ে দেন তিনি।         

সাক্ষাত্কার :জসীমউদ্দিন