শেষের পাতা, Publish: 14/06/2018
সউদীতে হজের টাকা ট্রান্সফারে বিড়ম্বনা
৭৫৬ রিয়ালের মুয়াল্লেম কোটা শেষ : হজ ব্যবস্থাপনা ভেঙ্গে পড়ার আশঙ্কা
সউদী আরবে হজের টাকা ট্রান্সফার করতে বিড়ম্বনা চরমে পৌছেছে। কিন্ত দুই একটি বেসরকারী বাণিজ্যিক ব্যাংক আট থেকে দশ দিনেও বেসরকারী হজযাত্রীদের মুয়াল্লেম অফিসের সার্ভিস চার্জের কোটি কোটি টাকা জমা দেয়ার পরেও আইবিএএন-এর মাধ্যমে সউদী আরবে পৌছাতে পারেনি। এতে বিপুল সংখ্যাক হজ এজেন্সি’র মালিক জনপ্রতি ৭ শ’ ৫৬ রিয়ালের মুয়াল্লেম ধরে রাখতে পারেনি। এসব হজ এজেন্সি’র হজযাত্রীদের এখন ১২শ’ রিয়াল থেকে ১৫ শ’ রিয়ালের মুয়াল্লেমের সাথে চুক্তি করতে হবে। এতে হজ এজেন্সিগুলো মারাতœকভাবে আর্থিক ক্ষতি’র সম্মুখীন হবে। সউদী সরকার এবারই প্রথম মুয়াল্লেম অফিসের সার্ভিস চার্জের টাকা আইবিএএন-এর মাধ্যমে জামা নেয়ার বিধান জারি করেছে। অন্যান্য বছর হুন্ডির মাধ্যমে রিয়াল নিয়ে মক্কাস্থ মুয়াল্লেম অফিসে সার্ভিস চার্জের টাকা জমা দেয়ার সুযোগ ছিল। মক্কায় অনেক এজেন্সি’র স্বত্বাধিকারী এবার নগদ রিয়াল জমা দেয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে। হজের টাকা আইবিএএন-এর মাধ্যমে সউদী আরবে দ্রæত টাকা পাঠানো সম্ভব না হলে সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনার কার্যক্রম ভেঙ্গে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিমানে হজ ফ্লাইটের অগ্রিম হজ টিকিট বুকিং দিয়েও অনেক হজ এজেন্সি বেকায়দায় পড়েছেন। একাধিক সূত্র এতথ্য জানিয়েছে।
মক্কার ৯৯ নং মুয়াল্লেম থেকে ১৩৭ নং মুয়াল্লেম পর্যন্ত ৩৮ টি ৭৫৬ রিয়ালের মুয়াল্লেমের কোটা শেষ হয়ে গেছে। গতকাল বুধবার মক্কা থেকে রাজশাহী ট্রাভেলসের স্বত্বাধিকারী মুফতী মোস্তাফিজুর রহমান টেলিফোনে ইনকিলাবকে এতথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, যেসব হজ এজেন্সি আইবিএএন-এর মাধ্যমে হজ সার্ভিসের টাকা সউদীতে নিতে অহেতুক বিলম্বের ফাঁদে পড়েছে তারা ৭৫৬ রিয়ালের মুয়াল্লেম ধরতে পারেনি । এসব এজেন্সিকে হজযাত্রীদের সেবা নিশ্চিতকরণে জনপ্রতি ১৫শ’ রিয়ালের মুয়াল্লেম নিতে হবে। মুফতী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংক এবার মুয়াল্লেম সার্ভিস চার্জের টাকা এক দুই দিনের মধ্যেই সউদী আরবে পাঠিয়ে সুনাম অর্জন করেছে।
সউদী পর্বে মক্কা-মদিনায় হজযাত্রীদের বাড়ী ভাড়া এবং মুয়াল্লেম অফিসের সার্ভিস চার্জের টাকা যথাসময়ে পরিশোধ করতে না পারলে নির্ধারিত হজ ফ্লাইটও বাতিল হবার সম্ভাবনা রয়েছে। একাধিক হজ এজেন্সি’র স্বত্বাধিকারী এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন। সময়মতো সউদী আরবে মুয়াল্লেম-এর সার্ভিস চার্জের টাকা ও মক্কা-মদিনায় হজযাত্রীদের বাড়ী ভাড়ার টাকা পাঠানো সম্ভব না হওয়ায় সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে ধরর্ণা দিয়েও কোনো সাড়া পাচ্ছে না হজ এজেন্সি’র মালিক-প্রতিনিধিরা। গুলশান সার্কেলের সংশ্লিষ্ট বানিজ্যিক ব্যাংকের এক্সিকিউটিভ অফিসার গতকাল বুধবার সউদী হজে টাকা পাঠাতে বিলম্ব সর্ম্পকে বলেন, গত ৭ জুন আমরা আইবিএএন-এর মাধ্যমে হজের টাকা সউদী আরবে পাঠিয়েদিয়েছি। সউদী আরবে আমাদের সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের শাখায় প্রয়োজনীয় রিয়ালের ব্যালেঞ্জ না থাকায় হজের টাকা পাঠাতে বিলম্ব হয়েছে। এতে কয়েক দিন সারা রাত আমরা (সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তাগণ) ঘুমাতে পারিনি। ৫৩ টি হজ এজেন্সি’ এ সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। এসব হজ এজেন্সিগুলো আজ-কালের মধ্যেই সউদী আরবে হজে টাকা পেয়ে যাবে ঐ ব্যাংক কর্মকর্তা দাবী করেন। তার মতে, আইবিএএন-এর মধ্যে হজের টাকা চব্বিশ ঘন্টায় সউদী আরবে পাঠানোর সুযোগ পাচ্ছে অনেক বেসরকারী হজ এজেন্সি। এক প্রশ্নের জবাবে মুফতী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মক্কা-মদিনায় হজযাত্রীদের বাড়ী ভাড়ার টাকা কত লাগবে তা’এখনো জানা যায়নি। আইবিএএন-এর মাধ্যমে বাড়ী ভাড়ার টাকা সউদীতে নেয়া হলে ভাড়া শেষে ঐ টাকা উদ্বৃত্ত হলে তা’ দেশে ফেরত আনা সম্ভব হয় না। এতে বাংলাদেশী হজ এজেন্সিগুলো আর্থিকভাবে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি বলেন, গত বছর (২০১৭) সালে আইবিএএন-এর মাধ্যসে সউদী আরবে হজের কার্যক্রম শেষে এক লাখ রিয়াল ব্যাংকে জমা রয়েছে। কিন্ত সউদী ব্যাংক এসব জমা অর্থ ফেরত দিচ্ছে না। তিনি এ ব্যাপারে ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান ও ধর্ম সচিব মো: আনিছুর রহমানের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
গোল্ডজয় ট্রাভেলস এন্ড ট্যুরস (৫০৭)-এর স্বত্বাধিকারী আলহাজ মো: শামসুল হক গত ৪ জুন কাকরাইলস্থ একটি বেসরকারী ব্যাংকের মাধ্যমে ৪২ লাখ টাকা এবং হাজরে আসওয়াদ ট্রাভেলস এন্ড ট্যুরসের ৩৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা মুয়াল্লেম অফিসের সার্ভিস চার্জ সউদী আরবে পাঠায়। দ্বারে দ্বারে দৌঁড়-ঝাপের পর গতকাল বিকেলে সউদী ব্যাংক থেকে উল্লেখিত টাকা পাওয়া গেছে বলে আলহাজ শামসুল হক জানান। নয়া পল্টনস্থ হজ এজেন্সি’র স্বত্বাধিকারী নূরুল্লাহ গত ৬ জুন ১শ’ ৪৫ জন হজযাত্রী’র ৬৬ লাখ ৭৫ হাজার টাকা একটি বেসরকারী ব্যাংকে জমা দিয়ে মঙ্গলবার পর্যন্ত আইবিএএন-এর মাধ্যমে সউদী আরবে পাঠাতে পারেনি। আগামী ২০ জুলাই এসব হজযাত্রীর বিমানের হজের টিকিট বুকিং দিয়ে তিনি এখন চরম হতাশায় ভুগছেন। তিনি সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনার স্বার্থে হজের টাকা সউদী আরবে পাঠাতে অহেতুক বিলম্বের বিষয়টি দ্রæত নিস্পত্তির জন্য ধর্মমন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন।