অর্থ-বাণিজ্য, Publish: 12/07/2018
ব্যয় হবে ৩ হাজার ৩৩৮ কোটি ৯৩ লাখ টাকা
ই-পাসপোর্ট তৈরির মেশিন কেনা হচ্ছে
ই-পাসপোর্ট অটোমেটেড বর্ডার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার আওতায় ২ মিলিয়ন পাসপোর্ট ক্রয় এবং ২৮ লাখ পাসপোর্ট বানানোর সরঞ্জাম কেনা হচ্ছে। এতে ব্যয় হবে ৩ হাজার ৩৩৮ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। জি টু জি (সরকার টু সরকার) ভিক্তিতে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে এসব পণ্য ও সেবা জার্মানি থেকে ক্রয় করা হবে। বুধবার সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ কক্ষে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এ সংক্রান্ত একটি ক্রয়প্রস্তাবের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভাপতি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। বৈঠকে কমিটির সদস্য, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিনিয়র সচিব এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণলয়ের সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোস্তাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

অতিরিক্ত সচিব মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ ই-পাসপোর্ট অটোমেটেড বর্ডার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ২ মিলিয়ন পাসপোর্ট বুকলেট ক্রয় এবং ২৮ মিলিয়ন পাসপোর্ট তৈরির সব উপাদানসহ আনুষঙ্গিক হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার ও ১০ বছরের রক্ষণাবেক্ষণসহ সব সেবা ক্রয়ের একটি প্রস্তাব কমিটি অনুমোদন দিয়েছে। এসব ক্রয়কার্য সম্পাদন করতে ব্যয় হবে ৩ হাজার ৩৩৮ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। এসব পণ্য ও সেবা জি টু জি (সরকার টু সরকার) ভিত্তিতে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে জার্মানি থেকে ক্রয় করা হবে।

যন্ত্রে অপাঠযোগ্য কাগুজে পাসপোর্টের দিন শেষ হয়েছে বেশ আগেই। যন্ত্রে পাঠযোগ্য পাসপোর্টের (মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট-এমআরপি) ধারণাও প্রায় শেষ। কারণ যুগ এখন ইলেকট্রনিক বা ই-পাসপোর্টের। এর মধ্যে বিশ্বের ১১৯টি দেশে চালু হয়ে গেছে এ পাসপোর্ট। পিছিয়ে নেই বাংলাদেশও। ডিসেম্বর থেকে চালু হতে পারে ই-পাসপোর্ট। বৈঠকে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে ৫০ হাজার মেট্রিক টন গম সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এজন্য সরকারকে ব্যয় করতে হবে ১০৭ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আন্তর্জাতিক কোটেশনের মাধ্যমে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে প্যাকেজ-৬ এর আওতায় ৫০ হাজার মেট্রিক টন গম ক্রয়ের একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। ২৫৩ দশমিক ৩৮ মার্কিন ডলারে প্রতি মেট্রিক টন হিসেবে এ গম সরবরাহ করবে সিঙ্গাপুরভিত্তিক প্রতিষ্ঠান মেসার্স অ্যাগ্রোকোর ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড। এ হিসাবে ৫০ হাজার মেট্রিক টন গম সংগ্রহ করতে সরকারের ব্যয় হবে ১০৭ কোটি ৬৭ লাখ টাকা।

কোন দেশ থেকে এসব গম আনা হবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট কোনো দেশের উল্লেখ নেই। সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান যেখান থেকে পারবে সেখান থেকে গম সরবরাহ করে দেবে।
বৈঠকে ঢাকা শহরের সাবওয়ে নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য টিপসা স্পেন নামক একটি প্রতিষ্ঠানকে পরামর্শক নিয়োগের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের এ প্রকল্পের জন্য ব্যয় হবে ২১৯ কোটি ৪৪ লাখ ৪১ হাজার টাকা।

দেশের চাহিদা মেটাতে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদে ১৫ বছর মেয়াদে ভারত থেকে ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ক্রয় করবে সরকার। এ ব্যাপারে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদে ১৫ বছর মেয়াদে ভারত থেকে ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ক্রয়ের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। চলতি বছরের ১ আগস্ট থেকে ভারতের সেমক্রপ গায়ত্রী পাওয়ার লিমিটেডের কাছ থেকে কয়লাভিত্তিক এ বিদ্যুৎ দেশের সঞ্চালন লাইনে যোগ হবে।
অতিরিক্ত সচিব বলেন, স্বল্প মেয়াদে চলতি বছরের ১ আগস্ট থেকে ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত আসা বিদ্যুতের প্রতি কিলোওয়াটের দাম হবে ৪ টাকা ৬৯ পয়সা। আর দীর্ঘমেয়াদে ২০২০ সালের ১ জুলাই থেকে ২০৩৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত আসা প্রতি কিলোওয়াট বিদু্যুতের দাম পড়বে ৬ টাকা ১৭ পয়সা।
তিনি আরও বলেন, বৈঠকে ২০১৯ শিক্ষাবর্ষে বিনামূল্যে বিতরণের জন্য ১৩ কোটি ৭৪ লাখ ৭০ হাজার বই ছাপানোর একটি ক্রয়প্রস্তাবেরও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ১৮৮টি লটে দেশেই এসব বই ছাপানোর জন্য সরকারের ব্যয় হবে ৪৩৩ কোটি ৪৫ লাখ ৫৭ হাজার টাকা।

পাবনার সুজানগর উপজেলার গাজনা বিলের সংযোগ নদী খনন, সেচ সুবিধার উন্নয়ন এবং মৎস্য চাষ প্রকল্পের আওতায় তালিমনগর পাম্প হাউজ নির্মাণ কাজের ভেরিয়েশন প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পরিচালিত বাংলাদেশ ডিজেল পাম্প বাস্তবায়িত এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২২২ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। চট্টগ্রাম মুসলিম ইনস্টিটিউট সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্সের লাইব্রেরি ভবন, অডিটরিয়াম ভবন, পাবলিক প্লাজা, ফুড গার্ডেন, মিউজিয়াম, ক্যাফে ভবন, ব্ল্যাক স্টেজ, উন্মুক্ত গ্যালারি ও মঞ্চ, ভূগর্ভস্থ জলাধার পাম্প হাউজ, গভীর নলকূপ স্থাপন ও লিফট সরবরাহের কাজ পেয়েছে জিকেবিপিএল ও এনডিই। এতে ব্যয় হবে ১৬৫ কোটি ৯০ লাখ টাকা। এছাড়াও ৪৭০ কোটি টাকার তিনটি প্রকল্প বাস্তবায়নের অনুমোদন দিয়েছে কমিটি।

গাবতলী-নবীনগর ৪ লেন মহাসড়ককে এক্সপ্রেসওয়েতে উন্নীতকরণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) ভিত্তিতে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) ভিত্তিতে গাবতলী-নবীনগর ৪ লেন মহাসড়ককে এক্সপ্রেসওয়েতে উন্নীতকরণ প্রকল্পের নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। তবে এ প্রকল্পে কত টাকা ব্যয় হবে সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা নীতিগত অনুমোদন তাই ব্যয়ের কথাটি উল্লেখ করা হয়নি।