শিল্প বাণিজ্য, Publish: 12/10/2018
বিক্রয় তথ্য গোপন করে নিউজিল্যান্ড ডেইরি�র বড় অঙ্কের ভ্যাট ফাঁকি
মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগের তালিকায় এবার যুক্ত হলো নিউজিল্যান্ড ডেইরি’র মতো প্রতিষ্ঠানের নাম। প্রতিষ্ঠানটি বিক্রয় তথ্য গোপন করে প্রায় ১৩ কোটি টাকা ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে বলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রাথমিক পরীক্ষায় ধরা পড়েছে। এনবিআরের সংশ্লিষ্ট অফিস ধারণা করছে, এ প্রক্রিয়ায় অতীতেও বিশাল অঙ্কের ভ্যাট হয়েছে। কিন্তু যথাযথ পরীক্ষা না হওয়ায় এতদিন ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এ অভিযোগে ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানটির কাছে ভ্যাটের অর্থ পরিশোধে প্রাথমিক দাবিনামা জারি করেছে এনবিআরের বৃহত্ করদাতা ইউনিট বা এলটিইউ-ভ্যাট অফিস। ১৫ দিনের মধ্যে এ অর্থ পরিশোধ কিংবা কারণ দর্শানোর জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে প্রতিষ্ঠানটিকে। এ কিছু প্রক্রিয়া ও নির্দিষ্ট সময়সীমা শেষে চূড়ান্ত দাবিনামা জারি করা হবে। এর পরও অর্থ পরিশোধ না করলে কিংবা আইনি প্রক্রিয়ায় না গেলে আরও কিছু প্রক্রিয়া শেষে প্রতিষ্ঠানটির ব্যাংক হিসাব জব্দের মতো কঠোর সিদ্ধান্তও আসতে পারে।
নিউজিল্যান্ড ডেইরি ফার্মল্যান্ড, রেডকাউ, ডিপ্লোমা, ফার্মল্যান্ড গোল্ড, রেডকাউ বাটার অয়েল ছাড়াও নুডল্স এবং চিপসের মতো পণ্য বিপণন করে থাকে। এর মধ্যে রেডকাউ, ডিপ্লোমাসহ বেশকিছু দুগ্ধজাত পণ্য দীর্ঘদিন ধরেই দেশের বাজারে বেশ পরিচিত। প্রতিষ্ঠানটির উত্পাদন ইউনিট নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের ভুলতা এলাকায়। সম্প্রতি এলটিইউ-ভ্যাট বিভাগের কর্মকর্তাদের একটি দল ভ্যাট আইনের ২৬ ধারা অনুযায়ী ওই কারখানায় আকস্মিক অভিযান চালায়। অভিযানকালে প্রতিষ্ঠানটিতে রক্ষিত নথিপত্র, হিসাবরক্ষণকারী সফ্টওয়্যার জব্দ করে। এসব নথিপত্র পরীক্ষায় দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি বিক্রয়ের বিষয়ে এনবিআরের কাছে যে তথ্য প্রদান করেছে, প্রকৃত বিক্রয় এর চাইতে অনেক বেশি। দুই দফায় প্রতিষ্ঠানটি ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর ও ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে মোট ১২ লাখ ৯৫ হাজার ৫৯ লাখ টাকার ভ্যাট কম পরিশোধ করেছে।
এনবিআরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ইত্তেফাককে বলেন, প্রতিষ্ঠানটির আমাদের বিক্রয়ের যে তথ্য দিয়েছে, প্রকৃত বিক্রি তার চাইতে অনেক বেশি। তাদের কারখানা থেকে প্রাপ্ত নথিপত্র পরীক্ষায় তা পাওয়া গেছে। এ জন্য প্রাথমিক দাবিনামা জারি করা হয়েছে। এ অর্থ পরিশোধ না করলে কিছু আইনি প্রক্রিয়া শেষে শিগগিরই চূড়ান্ত দাবিনামা জারি করা হবে। তিনি বলেন, এলটিইউ-ভ্যাট অফিসের অধীনে ১৫৭টি প্রতিষ্ঠান ভ্যাট প্রদান করে। সম্প্রতি বেশকিছু প্রতিষ্ঠান আকস্মিক পরিদর্শন এবং নিরীক্ষায় এর প্রায় সবগুলোতেই বড় ধরনের ভ্যাট ফাঁকির তথ্য পাওয়া গেছে। এ ধরনের পরিদর্শন ও বিশেষায়িত নিরীক্ষা কার্যক্রম চলমান থাকবে বলেও জানান তিনি।
সূত্র জানায়, নিউজিল্যান্ড ডেইরির বিক্রীত পণ্যের ওপর ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট প্রযোজ্য রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির জব্দকৃত নথিপত্র পরীক্ষায় দেখা যায়, ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে মোট বিক্রয় হয়েছে প্রায় ৫২৪ কোটি টাকার পণ্য। অথচ ভ্যাট দপ্তরে দেখানো হয়েছে, ৪৪৪ কোটি টাকার বিক্রয়। আলোচ্য সময়ে ৭৯ কোটি টাকা কম বিক্রয় দেখানোর মাধ্যমে ভ্যাট ফাঁকি দেওয়া হয়েছে ১১ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। আর এর পরবর্তী বছর ভ্যাট অফিসকে বিক্রয় দেখানো হয়েছে, ৪৮৭ কোটি টাকা। অথচ এলটিইউ-ভ্যাট বিভাগের কর্মকর্তারা নথিপত্র পরীক্ষা করে প্রকৃত বিক্রয়ের পরিমাণ পেয়েছেন ৪৯৪ কোটি টাকার। ভ্যাট ফাঁকির পরিমাণ ১ কোটি ৯ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে ভ্যাট ফাঁকির পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১৩ কোটি টাকা। তবে কর্মকর্তারা ধারণা করছেন, প্রকৃত বিক্রয়ের সঠিক নথিপত্র পেলে এ ফাঁকির পরিমাণ আরও বেশি হতে পারে।