শিল্প বাণিজ্য, Publish: 12/10/2018
পোশাকবহির্ভূত পণ্যের রফতানি খরা কাটছে না
দেশের রফতানি আয় যতটুকু বাড়ছে, তা শুধু প্রধান পণ্য তৈরি পোশাকের কারণে। পোশাকবহির্ভূত অন্যান্য পণ্যে রফতানি বাড়ছে না। চামড়া, পাট, হিমায়িত চিংড়িসহ অন্যান্য খাত ঝিমিয়ে পড়েছে। তৈরি পোশাকের মতো এসব খাতে রফতানিতে নগদ সহায়তা রয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ অনেক বাজারে শুল্ক্কমুক্ত সুবিধাও পাচ্ছে।
চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) মোট ৯৯৪ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে। এর মধ্যে তৈরি পোশাক খাত থেকে এসেছে ৮১৯ কোটি ডলার। বাকি সব ধরনের পণ্য থেকে এসেছে মাত্র ১৭৫ কোটি ডলার। রফতানিতে পোশাক বহির্ভূত পণ্যের অবদান মাত্র ১৭ দশমিক ৬০ শতাংশ। অথচ রফতানি তালিকায় পণ্যের সংখ্যা ৭ শতাধিক।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) শীর্ষ ৭ পণ্যের তালিকায় তৈরি পোশাকের পরেই রয়েছে হোম টেক্সটাইল। একে পোশাক খাতের সমশ্রেণি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এর পরে রয়েছে হিমায়িত খাদ্য, কৃষিজাত পণ্য, পাট ও পাট পণ্য, চামড়া ও চামড়া পণ্য এবং প্রকৌশল। এই ৭টি পণ্য থেকে রফতানি আয়ের ৯৬ শতাংশ আসে।
প্রথম তিন মাসে চামড়া ও চামড়া পণ্যের রফতানি কমেছে আগের একই সময়ের চেয়ে ১৮ শতাংশ। গত অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে এ খাতের রফতানি আয় ছিল ৩২ কোটি ৪৬ লাখ ডলার। এই অর্থবছরের একই সময়ে যা কমে দাঁড়িয়েছে ২৬ কোটি ৮০ লাখ ডলার। এ সময়ে চামড়ার রফতানি কমেছে প্রায় ১২ শতাংশ। আর চামড়া পণ্যের রফতানি কমেছে ৫৪ শতাংশ।
দেশের কাচামাল ব্যবহারের পরও কেন রফতানি কমছে- জানতে চাইলে চামড়া, চামড়া পণ্য ও জুতা রফতানিকারক সমিতির সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ মাহিন সমকালকে বলেন, দুই বছর ধরে সাভার চামড়া শিল্পনগরীতে ট্যানারি স্থানান্তর নিয়ে জটিলতায় অনেক ক্রেতা বাংলাদেশ ছেড়ে গেছেন। তাদের আর ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি। কারণ অপ্রস্তুত চামড়া শিল্পনগরীতে স্থানান্তরের কারণে অনেক উদ্যোক্তা ক্রেতাদের সঙ্গে করা চুক্তি রক্ষা করতে পারেননি। এসব ক্রেতা এখন বাংলাদেশের প্রতিযোগী দেশগুলো থেকে পণ্য নিচ্ছেন। এ ছাড়া চামড়ার বিকল্প পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধির কারণে বিশ্ববাজারে চামড়া পণ্যের চাহিদা কমেছে। দুই কারণে চামড়া পণ্য নিয়ে খুব বেশি আশাবাদী হওয়ার সুযোগ নেই।
গবেষণা সংস্থা সানেম-এর নির্বাহী পরিচালক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক সেলিম রায়হান সমকালকে বলেন, অনেক কারণে রফতানিতে পোশাক বহির্ভূত খাত পিছিয়ে পড়ছে। এসব পণ্যের বৈশ্বিক চাহিদা কমে আসা একটা কারণ। তবে প্রধান কারণ হচ্ছে, রফতানি উন্নয়নে পোশাকের বাইরে অন্যান্য খাতে যথেষ্ট মনোযোগ দেওয়া হয়নি। নীতি ও অবকাঠামো সহায়তা
কিংবা গবেষণা সহযোগিতা- কোনোকিছুই সেভাবে দেওয়া হয়নি। এ কারণে বিনিয়োগও এসব খাতে কম হয়েছে।
আলোচ্য সময়ে চিংড়ি ও হিমায়িত মাছের রফতানি কমেছে ১৮ শতাংশেরও বেশি। গত অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে ১৭ কোটি ডলারের রফতানি আয় হয়। এ বছরের একই সময়ে তা ১৪ কোটি ডলারে নেমে এসেছে। দীর্ঘ দিন ধরে ধারাবাহিকভাবে রফতানি কমে আসার কারণ জানতে চাইলে ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি কাজী বেলায়েত হোসেন সমকালকে বলেন, বিশ্ববাজারে 'ভেন্নামি' চিংড়ি সাধারণ চিংড়ির তুলনায় অন্তত ২ ডলার কম দামে পাওয়া যাচ্ছে। ভিয়েতনাম ও থাইল্যন্ডের এই চিংড়ির কারণে বাংলাদেশের পণ্য বাজারে মার খাচ্ছে। দর কম হওয়ায় ভেন্নামির চাহিদাই বেশি।
পাট ও পাট পণ্যের রফতানি কমেছে ৮ শতাংশের বেশি। ২৪ কোটি ডলারের রফতানি ২২ কোটিতে নেমে এসেছে। বিশ্বব্যাপী পাট ও পাট পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধির মধ্যেও রফতানি কমে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে বেসরকারি পাটকল মালিকদের সংগঠন বিজেএমএর সচিব আব্দুল বারেক খান সমকালকে বলেন, পাট পণ্যের প্রধান বাজার হচ্ছে ভারত। মোট রফতানি আয়ের ৪০ শতাংশ আসত ভারত থেকে। কিন্তু গত দুই বছর ধরে সব ধরনের পাট পণ্যে অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক্কারোপের কারণে ভারতে পাট রফতানিতে ধস নেমেছে।