[ প্রথম পাতা ] 2018-04-17
 
দেশের প্রথম মেট্রো রেল চলবে আগামী বছরের ডিসেম্বরে
 
পার্থ সারথি দাস:

কোথাও খুঁটি তোলার জন্য মাটি খোঁড়া হচ্ছে। এক্সকাভেটর দিয়ে রাস্তার ওপরের পিচ তোলা হচ্ছে কোথাও। উত্তরায় তৃতীয় পর্বে ডিপো উন্নয়ন করা হচ্ছে। তৈরি করা হচ্ছে ভায়াডাক্ট। আগারগাঁও অংশে এক সপ্তাহের মধ্যে আকার পাবে আরো একটি ভায়াডাক্ট। আগারগাঁও থেকে মিরপুর-১২ পর্যন্ত মূল সড়কের মধ্যাংশ বন্ধ করে দিন-রাত চলছে কাজ। রাজধানী ঢাকার যানজট নিরসনে দেশের প্রথম মেট্রো রেল নির্মাণ প্রকল্পের এখন কর্মোৎসব চলছে। দিয়াবাড়ী, পল্লবী, তালতলা, শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও— সর্বত্রই পথচারী ও যাত্রীদের চোখ কাড়ছে কর্মযজ্ঞ।

গতকাল সোমবার মিরপুর-১০ থেকে শেওড়াপাড়ায় প্রায় ৪০ মিনিট যানজটে থেকে থেকে সামনে চলছিল গাড়ির সারি। জাবালে নূর পরিবহনের যাত্রী ইকবাল পারভেজ চৌধুরী যানজট নিরসনে এ প্রকল্পের দৃশ্য দেখতে দেখতেই বললেন, মাথার ওপর দিয়ে ট্রেন চললে নিচে আর বসে থাকতে হবে না ঘণ্টার পর ঘণ্টা।

রাজধানীর যানজট কমাতে ঢাকা মাস র‌্যাপিড ট্রানজিট বা এমআরটি-৬ (মেট্রো রেল) প্রকল্পের ওপরের অবকাঠামো দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার রেলপথ আগামী বছরের ডিসেম্বরে চালু হতে যাচ্ছে। ২০২০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশে মেট্রো রেল পথ বসানো ও তা চালু করা সম্ভব হবে।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ দশমিক ১ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলপথ হবে খুঁটির ওপর। তাতে ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহন করা হবে। উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত রেলস্টেশন থাকবে ১৬টি। মেট্রো রেলে থাকবে ১৪ জোড়া ট্রেন। প্রতি ট্রেনে থাকবে ছয়টি করে বগি। আর প্রতি ট্রেনে ৯৪২ জন যাত্রী বসে এবং ৭৫৪ জন দাঁড়িয়ে যাতায়াত করতে পারবে। চার মিনিট পর পর ট্রেন ছেড়ে যাবে। উত্তরা থেকে মতিঝিল চলাচলে সময় লাগবে ৩৭ মিনিট। জাপান থেকে ট্রেনের ইঞ্জিন-কোচ ও রেল ট্র্যাক কেনার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে চার হাজার ২৫৭ কোটি টাকা। ট্রেন হবে লাল-সবুজের।

জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা—জাইকার আর্থিক সহযোগিতায় নেওয়া এই প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীনে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)।

ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক কালের কণ্ঠকে জানান, প্রকল্পের সার্বিক কাজের অগ্রগতি হয়েছে ১৫ শতাংশ। মাটির ওপরে প্রকল্পের কাজ দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পের উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশ চালু করতে চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ। উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশ চালুর পর অন্যান্য অংশে তা বিস্তৃত করা হবে। ২৪ ঘণ্টায় তিন শিফটে কাজ এগিয়ে চলেছে।

ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট-এমআরটি ‘মেট্রো রেল’ নামেই পরিচিতি। প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, এই মেট্রো রেল প্রকল্পে এ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ১৩.৪০ শতাংশ অর্থ। ২০১৬ সালের ২৬ জুন প্রকল্পের নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০০৯ সালে প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছিল। ২০১২ সালের জুনে এটি অনুমোদন পায় একনেকে।

মেট্রো রেলপথ স্থাপন করা হবে ভায়াডাক্টের ওপর। এ মাসের প্রথম সপ্তাহে উত্তরার দিয়াবাড়ীতে দুটি পিয়ারের ওপর ভায়াডাক্ট বসানো হয়েছে। তারপর আগারগাঁও অংশে দুটি পিয়ারে কংক্রিট ঢালাই হয়েছে ভায়াডাক্ট বসানোর জন্য।

প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানান,  দিয়াবাড়ী থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার অংশে স্থানে স্থানে পিয়ার উঠে যাবে আগামী জুনের মধ্যে। দিয়াবাড়ী থেকে আগারগাঁওয়ের দিকে ও আগারগাঁও থেকে দিয়াবাড়ীর দিকে পিয়ার বসানো, ভায়াডাক্ট বসানো হলে রেলপথ স্থাপন করা হবে।

কয়েক দিন সরেজমিনে দেখা গেছে, দিয়াবাড়ীতে ২২ ও ২৩ নম্বর পিয়ারে ভায়াডাক্টের ‘প্রিকাস্ট সেগমেন্ট বক্স’ বসানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা জানান, ভায়াডাক্ট পূর্ণাঙ্গ রূপ পেতে ও নিজস্ব শক্তিতে দাঁড়াতে সময় লাগবে। মিরপুর-১২ থেকে মিরপুর-১১, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, তালতলা, আগারগাঁওয়ের কোথাও খুঁটি বা পিয়ার বসানোর জন্য মাটি খোঁড়া হচ্ছে, পাইলিং চলছে। মিরপুর থেকে বিজয় সরণির দিকে যেতে যেতে চোখে পড়ে সড়কের মধ্যাংশ বেষ্টনী দিয়ে বন্ধ করে রাখা হয়েছে। আড়াআড়ি পথচারী চলাচলের জন্য কোথাও সরু রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু বেষ্টনী দেওয়া অংশে কোথাও এক্সকাভেটর দিয়ে রাস্তার ওপরের অংশ, কোথাও মাটি তোলা হচ্ছে। ভারী ট্রাকে মাটি তুলে অন্যত্র সরানো হচ্ছে।

আগারগাঁওয়ে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার আগে মূল সড়কে পিয়ার বসানোর জন্য ঢালাইয়ের কাজ শুরু হয়েছে। ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক জানান, এখানে ভায়াডাক্ট দৃশ্যমান হবে কয়েক দিনের মধ্যে।

প্রকল্পের সর্বশেষ অগ্রগতি প্রতিবেদন অনুসারে, দিয়াবাড়ীতে প্রকল্পের ডিপো এলাকায় ভূমি উন্নয়নকাজ শতভাগ শেষ হয়েছে ও পূর্তকাজ হয়েছে ৪ শতাংশ। রেলের কোচ এবং ডিপোর যন্ত্রপাতি কেনায় কাজ এগিয়েছে ৯ শতাংশ। দিয়াবাড়ী থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ভায়াডাক্ট ও স্টেশন নির্মাণে অগ্রগতি ৫ শতাংশ। প্রকল্পের ১২টি জরিপ শেষ হয়েছে।

দিয়াবাড়ী থেকে মিরপুর হয়ে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১ দশমিক ৭ কিলোমিটার রেলপথ ও ৯টি স্টেশন নির্মাণে প্রকল্পের ২, ৩ ও ৪ নম্বর অংশ বাস্তবায়ন করছে ইতালিয়ান-থাই ডেভেলপমেন্ট কম্পানি। দোতলাসমান উচ্চতায় প্রতিটি রেলস্টেশন হবে ১৮০ মিটার দীর্ঘ। নিচতলায় থাকবে টিকিটঘর। সঙ্গে থাকবে স্বয়ংক্রিয় প্রবেশপথ। স্টেশনের দুই পাশ থেকে যাত্রীদের আসা-যাওয়ার পথ থাকবে।
Print Close  
Print Close  
News Source
            Top
            Top
 
Home / About Us / Benifits /Invite a Friend / Policy
Copyright © Hawker 2009-2010, Allright Reserved