[ নগর মহানগর ] 2018-04-17
 
মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর ৫ বছরের মধ্যে চালুর টার্গেট
ভিড়বে ১৬ মিটার গভীরতা ও ৩৫০ মিটার দৈর্ঘ্যরে জাহাজ, বাড়বে পণ্য হ্যান্ডলিং সক্ষমতা
 
আগামী ৫ বছরে মধ্যে অর্থাৎ ২০২৩ সাল নাগাদ চালু হবে বহুল প্রতীক্ষিত মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর। জাপান সরকারের অর্থায়নে কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়িতে এ বন্দর নির্মাণ করা হবে। এটি পরিচালনা ও তত্ত্বাবধানে থাকবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। জাপানের কাশিমা ও নিগাতা (পূর্ব) নামের দুটি বন্দরের আদলে গড়ে তোলা হবে দেশের প্রথম এ গভীর সমুদ্র বন্দর। ইতিমধ্যে প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্টাডি সম্পন্ন হয়েছে। চলতি বছরের মে মাসের মধ্যে ঋণ নেগোসিয়েশন কার্যক্রম শুরু হবে। জুনের মধ্যে করা হবে ডিটেইলড ডিজাইনের (ইঞ্জিনিয়ারিং) ঋণ চুক্তি। মাতারবাড়িতে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য নির্মাণ হতে যাওয়া বন্দরের সুযোগ-সুবিধার ওপর ভর করে হচ্ছে এ বন্দর- যেখানে থাকবে একটি কনটেইনার টার্মিনাল ও একটি মাল্টিপারপাস টার্মিনাল। বন্দরটিতে ভিড়তে পারবে ১৬ মিটার গভীরতার জাহাজ । এ বন্দর চালু হলে একদিকে দেশের ক্রমবর্ধমান আমদানি-রফতানি পণ্যের হ্যান্ডলিং বাড়বে, অন্যদিকে চাপ কমবে চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর।

চট্টগ্রাম বন্দর প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে সোমবার এক কর্মশালায় এসব তথ্য জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বন্দরের কর্মকর্তারা। বন্দর কর্তৃপক্ষ ও জাইকা (জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি) এ কর্মশালার আয়োজন করে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) জাফর আলমের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান কমডোর জুলফিকার আজিজ, বিশেষ অতিথি ছিলেন জাইকা প্রতিনিধি ওয়াতারু ওসাওয়া। এছাড়া বক্তব্য রাখেন ওসিডিআইয়ের সিনিয়র ডিরেক্টর ফর রিসার্চ তাকভশি শিমাদা।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে কর্মশালায় বলা হয়, দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এলাকায় সমন্বিত উন্নয়ন পরিকল্পনার লক্ষ্যে একটি মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নে জাপান সরকারকে আহ্বান জানায় বাংলাদেশ সরকার। এরই পরিপ্রেক্ষিতে জাইকা ২০১৬ সালে একটি মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করে যাতে মাতারবাড়িতে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও গভীর সমুদ্র বন্দরের সম্ভাবনার কথা বলা হয়। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে মাতারবাড়িতে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট উৎপাদনক্ষমতাসম্পন্ন কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য কয়লা আমদানি এবং জাহাজ থেকে কয়লা খালাসের জন্য ১৬ মিটার গভীর ও ২৫০ মিটার চওড়া যে চ্যানেল ও টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে, সেই একই চ্যানেল ব্যবহার করে একটি গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের সম্ভাবনা দেখা দেয়। এ চ্যানেলের ওপর নির্ভর করেই গড়ে তোলা হবে গভীর সমুদ্র বন্দর। এতে নতুন করে কোনো চ্যানেল করতে হবে না। কর্মশালায় জানানো হয়, বর্তমানে বাংলাদেশে যেসব সমুদ্র বন্দর রয়েছে তার কোনোটাই গভীর সমুদ্র বন্দর নয়। ফলে বেশি গভীরতার জাহাজ এসব বন্দরে প্রবেশ করতে পারে না। তাই একটি গভীর সমুদ্র বন্দরের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। বাংলাদেশের সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় মাতারবাড়ি সমুদ্র বন্দরকে অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসেবে গ্রহণ করা হয়। মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরে প্রাথমিক অবস্থায় দুটি টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। এতে ৩২০ থেকে ৩৫০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ১৬ মিটার গভীরতার (ড্রাফট) ৮ হাজার টিইইউএস কনটেইনারবাহী জাহাজ ভিড়তে পারবে। বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে ১৯০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ৯ দশমিক ৫ মিটার গভীরতার চেয়ে বড় জাহাজ প্রবেশ করতে পারে না। মাতারবাড়ি সমুদ্র বন্দরে প্রতিটি জাহাজে করে চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি পণ্য আসবে। এ বন্দর সমুদ্রের কিনারায় হবে না, চ্যানেল নির্মাণের মাধ্যমে বন্দরকে সমুদ্রের সঙ্গে যুক্ত করা হবে। চ্যানেলে যাতে পলি জমতে না পারে , সেজন্য ব্রেক ওয়াটার নির্মাণের মাধ্যমে পানির প্রবাহ রোধ করা হবে। মাতারবাড়ি থেকে সড়ক ও রেলপথে দেশের বিভিন্ন স্থানে পণ্য পরিবহনের জন্য সড়ক ও রেল অবকাঠামো গড়ে তুলতে নেয়া হয়েছে ব্যাপক পরিকল্পনা।

কর্মশালায় বলা হয়, দেশে ২০৪১ সালের মধ্যে বার্ষিক কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের পরিমাণ দাঁড়াবে ৫ দশমিক ৭ মিলিয়ন টিইইউএস থেকে ৬ দশমিক ৫ মিলিয়ন টিইইউএস এবং জাহাজের সংখ্যা দাঁড়াবে ৮ হাজার ২০০টি। এ বিপুলসংখ্যক কনটেইনার ও জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ের ক্ষমতা দেশের বর্তমান সমুদ্র বন্দরগুলোর নেই। তাই গভীর সমুদ্র বন্দরই এক্ষেত্রে প্রধান ভরসা।
Print Close  
Print Close  
News Source
            Top
            Top
 
Home / About Us / Benifits /Invite a Friend / Policy
Copyright © Hawker 2009-2010, Allright Reserved