[ অর্থ-বাণিজ্য ] 2018-04-17
 
বাণিজ্য ঘাটতি ১১০০ কোটি ডলার ছাড়াল
 
জিয়াদুল ইসলাম :

বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ছেই। চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসেই (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) এ ঘাটতি ১ হাজার ১০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। অর্থবছরের বাকি সময়ে এ ঘাটতি ১ হাজার ৩০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। শুধু বাণিজ্য ঘাটতিই নয়, এ সময়ে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যেও বড় ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এর পরিমাণ প্রায় ৬৩২ কোটি ডলার। মূলত রপ্তানি আয়ের চেয়ে আমদানি ব্যয় অধিকহারে বাড়ায় বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণও বেশি হয়ে পড়ছে।

রপ্তানি আয়ের চেয়ে আমদানি ব্যয় যেটুকু বেশি, তার পার্থক্যই বাণিজ্য ঘাটতি। সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ কাজ চলছে। এসব বড় বড় প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ায় প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম আমদানি বেড়ে গেছে। এছাড়া শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় মূলধনীয় যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানি বেড়েছে। এসব কারণেই বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ছে। তবে এ ঘাটতি মেটানো হয় রেমিট্যান্স ও বিদেশি বিনিয়োগ দিয়ে। এ খাতেও নিম্নগতি রয়েছে। ফলে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে (ব্যালান্স অব পেমেন্ট বা বিওপি) ঋণাত্মক হয়ে পড়েছে। এ অবস্থা বিদ্যমান থাকা দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি ভালো নয় বলে মনে করছেন তারা। এ বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, আমাদের আমদানি যে হারে হয়েছে সেই হারে রপ্তানির প্রবৃদ্ধি বাড়েনি। এ কারণেই বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে। এদিকে রেমিট্যান্স প্রবাহও এখন কম। সব মিলিয়ে চলতি হিসাব ঋণাত্মক হয়ে পরেছে। এ লেনদেনে ঘাটতি দীর্ঘমেয়াদি হলে তা অর্থনীতির জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াবে। তিনি বলেন, দেশে আমদানির পরিমাণ বেড়েছে এটা মূলধনী যন্ত্রপাতির জন্য হলে ভালো। তবে সে হারে দেশে বিনিয়োগ বাড়েনি। তাই আমদানির নামে অর্থ পাচার হচ্ছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা উচিত।

চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই আমদানি ব্যয় বাড়ছে অস্বাভাবিক গতিতে। কিন্তু সে অনুপাতে রপ্তানি আয় বাড়ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক লেনদেন ভারসাম্যের হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে পণ্য আমদানিতে বাংলাদেশ মোট ৩ হাজার ৫৮২ কোটি ডলার ব্যয় করেছে; যা গেল অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২৬ দশমিক ২২ শতাংশ বেশি। গেল অর্থবছরের একই সময়ে পণ্য আমদানিতে বাংলাদেশের ব্যয় হয়েছিল ২ হাজার ৮৩৮ কোটি ডলার। অন্যদিকে, এ সময়ে বিভিন্ন দেশে পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশের আয় হয়েছে ২ হাজার ৪০৮ কোটি ৮০ লাখ ডলার, যা গেল অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৮ দশমিক ০৮ শতাংশ বেশি। গেল অর্থবছরের একই সময়ে পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ আয় করেছিল ২ হাজার ২২৯ কোটি ১০ লাখ ডলার। এ হিসাবে সামগ্রিক বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৭৩ কোটি ২০ লাখ ডলার। গেল ২০১৬-১৭ অর্থবছরে জুলাই-ফেব্রুয়ারি আট মাসে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৬০৮ কোটি ৯০ লাখ ডলার। এদিকে, চলতি মুদ্রানীতিতে অর্থবছর শেষে বাণিজ্য ঘাটতি ১ হাজার ৩১০ কোটি ৪০ লাখ ডলার দাঁড়াবে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ২০১০-১১ অর্থবছরে; ৯৯৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার। ২০১১-১২ অর্থবছরে ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৯৩২ কোটি ডলার। আর গেল অর্থবছরে এ ঘাটতি ছিল ৯৪৭ কোটি ২০ লাখ ডলার। এ সময়ে সেবা খাতেও ঘাটতি বেড়েছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে প্রথম আট মাসে সেবা বাণিজ্যে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৯৫ কোটি ৬০ লাখ ডলার। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের একই সময়ে সেবা খাতে ঘাটতি ছিল ২১১ কোটি ৭০ লাখ ডলার। মূলত বিমা, ভ্রমণ ইত্যাদি খাতের আয়-ব্যয় হিসাব করে সেবা খাতের বাণিজ্য পরিমাপ করা হয়।

এদিকে, অর্থবছরের প্রথম আট মাসে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাব ভারসাম্যে (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট) বড় ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ। জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৩১ কোটি ৮০ লাখ ডলারে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে চলতি হিসাবে ঘাটতি ছিল মাত্র ৯৬ কোটি ডলারের মতো।
Print Close  
Print Close  
News Source
            Top
            Top
 
Home / About Us / Benifits /Invite a Friend / Policy
Copyright © Hawker 2009-2010, Allright Reserved