[ প্রথম পাতা ] 2018-05-27
 
আকাশপথে চাহিদা বেড়েছে, সব টিকেট শেষ
 
আজাদ সুলায়মান ॥ ঈদের বাকি এখনও বিশ দিন। তার আগেই শেষ অভ্যন্তরীণ রুটে আকাশ পথের সব টিকেট। কোথাও মিলছে না এয়ারলাইন্সের টিকেট। তিন হাজার টিকেট ৬ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে এতদিন। এখন তাও নেই। রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমান থেকে শুরু করে প্রাইভেট এয়ারলাইন্সগুলো চুটিয়ে ব্যবসা করছে। কিন্তু কেন এত চাহিদা আকাশ পথের। সব এয়ারলাইন্সেরই একই কথা - সড়কপথ রেলপথ ও নৌপথেরও একই অবস্থা। ওসবের টিকেটের যে দাম তার সঙ্গে সামান্য কিছু যোগ করলেই আকাশপথের টিকেট মিলে। সেজন্য অগ্রিম বুকিং দিয়েছেন ঘরমুখো নগরবাসী। আর এ সুযোগই এয়ারলাইন্সগুলো কাজে লাগিয়েছে। সুযোগ বুঝে কুপ মারার নীতিতে হঠাৎ বাড়িয়েছে টিকেটের দাম। এক ধাক্কায় দুই হাজার টাকার টিকেট তিন হাজার টাকা চলে গেছে। অঙ্কের হিসেবে ১৫০ শতাংশ। শুধু বাড়তি ভাড়াতেই থেমে থাকেনি তারা, এর সঙ্গে ফ্রিকোয়েন্সিও বাড়িয়েছে। আগে যেখানে দুটো ফ্লাইট অপারেট করা হতো এখন তিনটা করা হয়েছে। তারপরও চাহিদামতো টিকেট দিতে পারছে না এয়ারলাইন্সগুলো। ঈদ ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে এ চাহিদা আরও বাড়বে।

উল্লেখ্য, এ বছর রোজা ২৯টি হলে ঈদ হবে ১৬ জুন। ৩০টি রোজা হলে পরদিন ১৭ জুন ঈদ-উল-ফিতর। তবে ঈদের আগে ১৪ জুন হবে শেষ কর্মদিবস। তাই ১৪ ও ১৫ জুনের টিকেটের চাহিদা সবচেয়ে বেশি।

এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ ও রিজেন্ট এয়ারের সিইও আশীষ রায় চৌধুরি জানান, এয়ারলাইন্সগুলো সারা বছর যেমনই করুক, ঈদের সময় যৌক্তিক কারণেই যাত্রীদের চাহিদা সামাল দিতে গিয়ে কিছু বিজনেস পলিসি ঠিক করে। ঈদের সময় শুধু যাত্রীদেরই চাহিদা থাকে না, অনেক রথিমহারথীরও আব্দার রক্ষা করতে হয়। তখন টিকেটের দাম না বাড়িয়েই আর কি করার আছে ।

সর্বশেষ শনিবার জানা যায়, ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের চাহিদা এবার গতবারের তুলনায় অনেক বেশি। এবার রমজানের অনেক আগে থেকে বুকিংয়ের বেশ চাপ শুরু হয়। শনিবার পর্যন্ত ৯৫ শতাংশ টিকেট শেষ। যেগুলো বাকি আছে তা বিক্রির জন্য নয়। সরকার ও মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ কর্তাব্যক্তি ও রথীমহারথীদের সৌজন্য কোটায় সংরক্ষিত রাখা আছে। যাতে চাহিবা মাত্রই তাদের সেবা করা যায়। বিমান, ইউএস বাংলা, নভো ও রিজেন্ট-সবাইকে এ ধরনের কোটা রাখতে হয়। চাহিদার তুলনায় টিকেট কম থাকায় বাড়তি ভাড়া গুণতে হচ্ছে যাত্রীদের। ঢাকা থেকে সৈয়দপুর রুটে যাত্রীদের ভাড়া (ওয়ানওয়ে) গুনতে হচ্ছে ৭ হাজার ৫০০ থেকে ৮ হাজার ৫০০ টাকা। অন্য সময়ে একই টিকেট বিক্রি হতো সর্বোচ্চ ৩ হাজার ২০০ টাকায়। একইভাবে ঢাকা থেকে যশোর রুটের ২ হাজার ৫০০ টাকার টিকিট বিক্রি হচ্ছে ৭ হাজার ৫০০ টাকায় এবং ঢাকা থেকে বরিশালে ৩ হাজার টাকার ওয়ানওয়ে টিকেটের দাম রাখা হচ্ছে ৬ হাজার ৫০০ থেকে ৭ হাজার ৫০০ টাকা। একই অবস্থা রাজশাহী রুটেও। এ রুটে টিকেট বিক্রি হচ্ছে ৭ হাজার ৫০০ টাকায়। একই টিকেটের দাম স্বাভাবিক সময়ে ৩ হাজার টাকা। সিলেট রুটে টিকেট তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকায়। অন্য সময়ে এ টিকেট দুই থেকে আড়াই হাজার টাকায় বিক্রি হয়। এ তুলনায় বরং চাপ কম চট্টগ্রাম রুটে। কারণ এ রুটে ফ্লাইট বেশি। বিমানের অনেক আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চট্টগ্রাম হয়ে দেশের বাইরে যায়। সুপরিসর এসব উড়োজাহাজে সিটও থাকে অনেক বেশি। ফলে অভ্যন্তরীণ অন্যান্য রুটের তুলনায় চট্টগ্রামে টিকেটের চাহিদা ও দামের মধ্যে স্বাভাবিকতা রয়েছে। তারপরও ৩ হাজার ৫০০ থেকে ৬ হাজার টাকা রাখা হচ্ছে টিকেটপ্রতি। আবার কক্সবাজার রুটে এয়ারলাইন্সগুলো টিকেট বিক্রি করছে ৩ হাজার ৫০০ থেকে ৭ হাজার টাকায়।

ঢাকা থেকে রাজশাহী যাবার অপেক্ষায় ইকরাম কবির। তিনি জানান- ঈদের টিকেট এখনও কাটেননি, কাটার অপেক্ষায়। আগামী ১৪ জুনের টিকেট বিক্রি হচ্ছে ৮ হাজার ২০০ টাকায়। সড়কপথের দুরবস্থার কারণে বেশি টাকা দিয়ে হলেও যেতে হচ্ছে আকাশপথেই। আবার রেলের টিকেটও একই অবস্থা থাকায় কোন উপায় নেই আকাশ ছাড়া।

আশীষ রায় চৌধুরির মতে, শুধু যে সড়কপথে দুরবস্থার জন্য মানুষ আকাশপথকে বেছে নেয়, তা নয়। এখন মানুষের ক্রয় ক্ষমতাও বাড়ছে। বিশেষ করে আকাশপথে যোগাযোগ ব্যবস্থা দ্রুত ও নিরাপদ হওয়ায় যাত্রীদের আগ্রহ বাড়ছে। ঈদে সড়ক, রেল ও নৌপথে ভোগান্তি কমাতে গ্রাহকরা সাধারণত ফেব্রুয়ারি থেকেই ঈদের টিকেট সংগ্রহ শুরু করেছেন। অভ্যন্তরীণ রুটগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাহিদা রয়েছে সৈয়দপুর ও রাজশাহী রুটে। এরই মধ্যে এ দুই রুটের প্রায় ৯৫ শতাংশ টিকেট বিক্রি হয়ে গেছে। সীমিতসংখ্যক যেসব টিকেট রয়েছে, তা বিশেষ কোটা হিসেবে পূর্ণ করা হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউএস বাংলার উপমহাব্যবস্থাপক কামরুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, ঈদ উপলক্ষে নয়, চাহিদার কারণেই মূলত টিকেটের দাম বেড়েছে। ইতোমধ্যে সৈয়দপুর, রাজশাহী, বরিশাল ও যশোরের সব টিকেট বিক্রি হয়ে গেছে। এখন অতিরিক্ত ৩৫টি ফ্লাইট চালুর জন্য সিভিল এভিয়েশনে আবেদন করা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে দু-একদিনের মধ্যে অনুমোদন পাওয়া গেলে টিকেট বিক্রি করা যাবে। ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স বর্তমানে ঢাকা থেকে সৈয়দপুর রুটে দৈনিক দুটি, যশোরে দুটি, রাজশাহীতে একটি ও বরিশালে সপ্তাহে চারটি ফ্লাইট চালায়।এছাড়া চট্টগ্রাম রুটে দৈনিক পাঁচটি, কক্সবাজারে দুটি ও সিলেটে একটি ফ্লাইট চলছে এয়ারলাইন্সটির।

নভো এয়ারের এক কর্মকর্তা বলেন, নিয়মিত ফ্লাইটের টিকেট শেষ। এখন অতিরিক্ত ফ্লাইটের টিকেট বিক্রি করা হবে আগামী ১২ জুন থেকে। দৈনিক ২টা করে ফ্লাইট অপারেট করা হলে পরিস্থিতি সামাল দেয়া যাবে। তিনি বলেন-দাম কিন্তু এত বেশি রাখা হচ্ছে না। একটি ফ্লাইটের মোট আসনের মাত্র ১০ শতাংশ এখন বেশি দামে বিক্রি হয়েছে। দু’মাস আগেই ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ টিকেট কম দামেই বিক্রি হয়েছে। বাকি ৫০ শতাংশ টিকেট বিক্রি হয়েছে মধ্যম দামে। গোটা বিশ্বের এভিয়েশন খাতেই এ নিয়ম চালু আছে। সময় হাতে রেখে যেসব যাত্রী টিকেট কিনেছেন তারা সাশ্রয়ী মূল্যেই পেয়েছেন। নভোএয়ার বর্তমানে ঢাকা থেকে সৈয়দপুর রুটে দৈনিক চারটি, যশোরে তিনটি ও রাজশাহীতে একটি ফ্লাইট চালাচ্ছে। আর চট্টগ্রাম রুটে দৈনিক ছয়টি ও কক্সবাজারে চারটি ফ্লাইট পরিচালনা করছে। ঈদের আগের চারদিন ঢাকা-সৈয়দপুর, ঢাকা-যশোর এবং ঢাকা-রাজশাহী রুটে নিয়মিত ফ্লাইটের বাইরে দুটি করে মোট ২৪টি অতিরিক্ত ফ্লাইট চেয়েছে নভোএয়ারও। বাড়তি চাহিদার কারণেই অতিরিক্ত ফ্লাইট চাওয়া হয়েছে বলে জানান নভোএয়ারের সিনিয়র মার্কেটিং ম্যানেজার একেএম মাহফুজুল আলম। তিনি বলেন, ঈদের ছুটির কারণে চাহিদা বেড়ে যায়। এ কারণে বাড়তি ফ্লাইট চাওয়া হয়েছে।

রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমানেরও একই অবস্থা। এটি গত ২৫ মার্চ থেকে ঢাকা-কক্সবাজার রুটে সপ্তাহে ১০টি ফ্লাইট পরিচালনা করছে। পাশাপাশি ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে সপ্তাহে ৩২টি, ঢাকা-যশোর রুটে ৮টি, ঢাকা-বরিশাল রুটে ৩টি, ঢাকা-সিলেট রুটে ৩৪টি, ঢাকা-রাজশাহী রুটে ৪টি এবং ঢাকা- সৈয়দপুরে সপ্তাহে ৭ট্ িফ্লাইট পরিচালনা করছে বিমান।

আশীষ রায় চৌধুরি জানান- রিজেন্ট এয়ারওয়েজ ঢাকা-কক্সবাজার রুটে সপ্তাহে সাতটি, ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে ২৮টি, ঢাকা-যশোর রুটে ১৪টি ও ঢাকা- সৈয়দপুর রুটে সপ্তাহে ১৪টি ফ্লাইট পরিচালনা করছে। ঈদে বাড়তি চাহিদার কারণে সব এয়ারলাইন্সই অতিরিক্ত ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি চেয়ে বেবিচকে আবেদন করেছে। আজকালের মধ্যে তা পাওয়া গেলে বিক্রি করা হবে টিকেট।
Print Close  
Print Close  
News Source
            Top
            Top
 
Home / About Us / Benifits /Invite a Friend / Policy
Copyright © Hawker 2009-2010, Allright Reserved