[ প্রথম পাতা ] 2018-05-27
 
১২ লাখ কোটি টাকার বিকল্প বাজেট অর্থনীতি সমিতির
 
আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য মোট ১২ লাখ ১৬ হাজার ৪০০ কোটি টাকার বিকল্প বাজেট প্রস্তাবনা দিয়েছে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি। সংগঠনটি রাজস্ব আয় ধরেছে ৯ লাখ ৯০ হাজার ৮২০ কোটি টাকা। বাকি ২ লাখ ২৫ হাজার ৫৮০ কোটি সরকারি-বেসরকারি যৌথ অংশীদারত্বের মাধ্যমে জোগান দেওয়া হবে। আর মধ্যম আয়ের দেশ বিনির্মাণ ও সরকারের আয় বাড়ানো এবং বাজেট বাস্তবসম্মত করতে রাজস্ব কমিশন গঠনের প্রস্তাব করেছে অর্থনীতি সমিতি। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বাজেট প্রস্তাবনা তুলে ধরে এসব কথা বলেন অর্থনীতি সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত ও সাধারণ সম্পাদক ড. জামালউদ্দিন আহমেদ। এই বিকল্প বাজেট প্রস্তাব একযোগে ঢাকাসহ চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, দিনাজপুর, ময়মনসিংহ, যশোর, কুষ্টিয়া, নড়াইল, নোয়াখালী ও চাঁদপুরে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির বাজেট প্রস্তাবনা ২০১৮-১৯’ উপস্থাপন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে তৈরি ৫৫ পৃষ্ঠার বিকল্প বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন শেষে ড. আবুল বারকাতের কাছে প্রশ্ন উত্থাপন করে জানতে চাওয়া হয়, ‘এখানে উপস্থিত আপনাদের (অর্থনীতি সমিতি) কেউ অর্থমন্ত্রী হলে এই বাজেট পেশ করবেন কি না?’ এর জবাবে বারকাত বলেন, ‘আমাদের এখান থেকে কেউ যদি অর্থমন্ত্রী হতো, তাহলে এ বাজেট পেশ করত।’

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা উচ্চাকাঙ্ক্ষার বাজেট প্রস্তাব কেউ কেউ বলতে পারেন, যারা গত অর্থবছরের বাজেটকেও উচ্চাকাঙ্ক্ষার বাজেট বলেছেন। আমাদের দেশে বিরোধী দলের কাজই হলো বাজেটের প্রস্তাবনার পর এটাকে উচ্চাকাঙ্ক্ষার বাজেট ও গরিব মারার বাজেট বলা।’ বাজেটে কালো টাকার ব্যবহার প্রসঙ্গে অর্থনীতি সমিতির সভাপতি বলেন, ‘আমাদের মতে দেশে পুঞ্জীভূত কালো টাকার আনুমানিক পরিমাণ হবে ৫ থেকে ৭ লাখ কোটি টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের মতে, কালো টাকা মোট জিডিপির ৪২ থেকে ৮০ শতাংশ। এটাকে কমানোর জন্য সরকার একটা শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে পারে। এর সঙ্গে একটি কমিশনও গঠন করতে পারে। তার মতে, সরকারি অর্থ যারা নাড়াচাড়া করে, তারা এ অর্থ না খেয়ে থাকতে পারে না। আয় বাড়াতে রাজস্ব কমিশন গঠনের প্রস্তাব দিয়ে লিখিত বক্তব্যে ড. আবুল বারকাত বলেন, ‘বর্তমান সরকারের বাজেট তৈরি করা হয় সব মন্ত্রণালয়ের সুপারিশের ভিত্তিতে এবং অর্থ বিভাগ তা চূড়ান্ত করে। এ ব্যবস্থায় সৃজনশীল চিন্তার সুযোগ কম। এ ক্ষেত্রে শুধু মেকানিক্যাল অর্থাৎ শতকরা হার বৃদ্ধি অথবা ব্যবহার করা হয়। এতে সমস্যার দোরগোড়ায় পৌঁছানো যায় না। বাজেট বাস্তবসম্মত হয় না। এ অবস্থা নিরসনে আমরা বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত একটি রাজস্ব কমিশন গঠন করার প্রস্তাব করছি, যারা বাজেট কীভাবে যুগোপযোগী করা যায় এ নিয়ে কাজ করবেন।’ রাজস্ব আয়ের প্রধান খাতসমূহ সম্পর্কে তিনি বলেন, রাজস্ব আয়ের খাতগুলো হবে আয় ও মুনাফার ওপর কর, মূল্য সংযোজন কর, লভ্যাংশ ও মুনাফা, জরিমানা-দণ্ড, বাজেয়াপ্তকরণ, সম্পূরক কর, লভ্যাংশ ও মুনাফা, অর্থ পাচার রোধ থেকে প্রাপ্তি, কর ব্যতীত অন্যান্য রাজস্ব ও প্রাপ্তি, কালো টাকা উদ্ধার থেকে প্রাপ্তি, সম্পদ কর, যানবাহন কর, মাদক শুল্ক, ভূমি রাজস্ব। কর প্রশাসনের আওতা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে লিখিত বক্তব্যে অর্থনীতি সমিতি বলেছে, কর প্রশাসনের আওতা জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যন্ত নেওয়া প্রয়োজন। তথ্যপ্রযুক্তির প্রয়োগে এ কাজ করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে করশুমারি ও সম্পদশুমারি করা হলে আগামী অর্থবছরের বাজেটে ভালো ফল পাওয়া যাবে। সংগঠনটির মতে, দেশে ধনী-দরিদ্রের ক্রমবর্ধমান বৈষম্য বড় দুর্ভাবনার বিষয়। দরিদ্র মানুষের ৮২ শতাংশ গ্রামে বাস করে। গ্রামে ৬০ শতাংশ খানা ভূমিহীন, ৪০ ভাগ খানায় বিদ্যুৎ সংযোগ নেই, ৬০ ভাগ মানুষ সরাকারি স্বাস্থ্যসেবা থেকে কার্যত বঞ্চিত। ১০ শতাংশ ধনিক শ্রেণির মানুষ মোট সম্পদের প্রায় ৯০ শতাংশের নিয়ন্ত্রক। সময়মতো মানসম্মতভাবে বাজেট বাস্তবায়ন না হওয়া অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ ও দুর্বল দিক উল্লেখ করে অর্থনীতি সমিতি বলেছে, বাজেট বাস্তবায়নকারী সংস্থাসমূহের সক্ষমতা, সমন্বয় ও পরিবীক্ষণ দক্ষতা বাড়ানোর পথনির্দেশ বাজেটে থাকতে হবে। প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বৈষম্য হ্রাস করার দিকনির্দেশনা বাজেটে স্পষ্ট থাকতে হবে।
Print Close  
Print Close  
News Source
            Top
            Top
 
Home / About Us / Benifits /Invite a Friend / Policy
Copyright © Hawker 2009-2010, Allright Reserved