[ শেষের পাতা ] 2018-05-27
 
দেড় মাস ধরে ফিলিপাইনে আটক ১১ বাংলাদেশি নাবিক
 
আলাউদ্দিন চৌধুরী :

ফিলিপাইনে গত দেড় মাস যাবত্ আটক রয়েছে বাংলাদেশের ১১ নাবিক। এমভি ডায়মন্ড-৮ নামের চীনা মালিকের জাহাজটিতে কাজ করতে গিয়ে ফেঁসে গেছেন বাংলাদেশের এই ১১ নাবিক। ভিয়েতনাম থেকে চাল নিয়ে জাহাজটি ফিলিপাইনে আসার পর চাল চোরাচালানের অভিযোগে জাহাজটি আটক করে ম্যানিলার নৌবাহিনী। দেশটিতে চাল আমদানি নিষিদ্ধ হওয়ায় তাদের আটক করা হয়। বর্তমানে জাহাজটি ফিলিপাইনের জামবোয়াঙ্গা উপকূলে আটক অবস্থায় নোঙ্গর করে আছে। এগারো বাংলাদেশী ক্রু ছাড়াও ক্যপ্টেনসহ চার চীনা ক্রু এই জাহাজটিতে অবস্থায় করছেন। নিজেদের ভাগ্য নিয়ে চিন্তিত বাংলাদেশের এই ১১ নাবিক।

জানা গেছে, গত ১৪ এপ্রিল এই জাহাজটি আটক করে ম্যানিলা নৌবাহিনী। এতে ক্রু হিসেবে কাজ করা বাংলাদেশী নাবিকরা হচ্ছেন চীফ অফিসার মো. হাবিবুর রহমান (ঢাকা), সেকেন্ড অফিসার রফিকুল ইসলাম (টাঙ্গাইল), চীফ ইঞ্জিনিয়ার মো. আব্দুস সালাম সরকার (লালমনিরহাট), থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মাহমুদুল হাসান (ভোলা), এবি মো. আমিনুল ইসলাম (চট্টগ্রাম), এবি মোহাম্মদ গোলামুর রহমান (কুমিল্লা), এবি খন্দকার জাহিদুল ইসলাম (টাঙ্গাইল), মটরম্যান মো. ফাহিম শাহজাদ (চাঁদপুর), ইঞ্জিন ক্যাডেট মোহাম্মদ ইসতিয়াক (লক্ষ্মিপুর), ডেক ক্যাডেট আকিব আহম্মেদ (খাগড়াছড়ি) ও ফিডার মোহাম্মদ সাইদুর রহমান (চট্টগ্রাম)।

যোগাযোগ করা হলে জাহাজটিতে অবস্থান করা চীফ ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সালাম সরকার ইত্তেফাকের এই প্রতিনিধিকে মোবাইল ফোনে বলেন, আটক হওয়ার পর বাংলাদেশী ক্রুরা বুঝতে পারেন তারা জাহাজের চীনা মালিক ও ক্যাপ্টেন দ্বারা প্রতারিত হয়েছেন। কাস্টমস ও ইমিগ্রেশনে   বাংলাদেশীদের তথ্য তারা গোপন করেছে। এতে করে বাংলাদেশী ক্রুগণ জাহাজের সাথে আটক অবস্থায় রয়েছে। এখন তাদের উদ্ধারে সহায়তা প্রয়োজন। আব্দুস সালাম জানান, আটকের পর এজেন্সি আয়ার শিপিং সার্ভিসেস এর সাথে যোগযোগ করা হয়েছে। কিন্তু এতদিনে দৃশ্যমান কোন ফল পাওয়া যায় নি। পরবর্তীতে তারা বাংলাদেশে মেরিনদের সংগঠন মেরিনার্স সোসাইটির সাথে যোগাযোগ করেন।

সার্বিক বিষয় উল্লেখ করে জাহাজে অবস্থান করা চীফ অফিসার মো. হাবিবুর রহমান ইমেইলে জানান, মাত্র ১০ মাসের চুক্তিতে বাংলাদেশী নাবিকরা এই জাহাজে কাজ করতে আসেন। কিন্তু তারা জানতেন না এই জাহাজটি অবৈধ কাজের সাথে জড়িত। এখন তাদের দেশে ফেরাটাই অনিশ্চিত হয়ে পরেছে। দীর্ঘদিন আটক থাকার কারণে জাহাজে নিত্য প্রয়োজনীয় খাবার ও অন্যান্য সামগ্রী ফুরিয়ে আসছে। ফিলিপাইনের নৌবাহিনী এবং জাহাজের এজেন্সি যোগযোগ করে কিছু খাবার দিয়ে সেটি পর্যাপ্ত নয়। ডিজেল শেষ হওয়ায় অন্ধকারে দিন কাটাতে হচ্ছে। জাহাজে অবস্থানরত বাংলাদেশীদের ভাগ্যে কি হবে তা আদৌ তারা জানেন না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মেরিনার্স সোসাইটি সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার এম এ রশিদ ইত্তেফাককে বলেন, এ ধরণের ঘটনায় বাংলাদেশের নাবিকরা খুবই অসহায় হয়ে পড়ে। জাহাজে কর্মরত হওয়ায় তারাও এর সাথে পরোক্ষ ভাবে জড়িয়ে পড়ে। তাদের উদ্ধারে আইনগত সহায়তার জন্য বড় অংকের অর্থ ব্যয় করতে হয়। শুধু এজেন্টদের উপর ভরসা করা যায় না। তাছাড়া দুর দেশে হওয়ায় নাবিকদের পরিবারের পক্ষে তাদের সহায়তা করা সম্ভব নয়। তিনি জানান, আটক মেরিনদের উদ্ধারে সংশ্লিষ্টদের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাথেও যোগাযোগ করা হচ্ছে। নাবিকদের উদ্ধারে আইনি সহায়তা ও তাদের খাবার দেওয়ার জন্য ফিলিপাইন দুতাবাস কর্মকর্তাদের কাছে অর্থ সহায়তাও প্রেরণ করা হয়েছে। এখন সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টাই পারে উদ্ধার কাজ দ্রুত করতে। তিনি জানান, এর আগে ২০১৬ সালে নাইজেরিয়ায় এরকম একটি ঘটনায় বাংলাদেশী ৪ নাবিক আটক হওয়ার পর মেরিনার্স সোসাইটির মাধ্যমে তাদের উদ্ধার করে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ম্যানিলায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আসাদ আলম সিয়াম ইত্তেফাককে বলেন, জাহাজটির চাল পূর্নাঙ্গভাবে খালাস হওয়ার পর ফিলিপাইন কর্তৃপক্ষ তাদের আইনী প্রক্রিয়া শুরু করবে। সে পর্যন্ত জাহাজটি আটক অবস্থায় থাকতে হবে। জাহাজে বাংলাদেশী ক্রুরা  সরাসরি আটক অবস্থায় নেই। তারা জাহাজটির সাথে অবস্থান করছে। তবে বের হওয়ার অনুমতি তাদের নেই। আইনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদের ভাগ্য নির্ধারিত হবে। তিনি জানান, গতকাল (শনিবার) ফিলিপাইন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে তিনি জাহাজটি পরিদর্শন করেছেন। বাংলাদেশীরা শারীরিক ভাবে সুস্থ রয়েছে, কিন্তু নাবিকরা তাদের ভাগ্য নিয়ে চিন্তিত। দুতাবাসের পক্ষথেকে সব ধরনের সহায়তা করা হচ্ছে।
Print Close  
Print Close  
News Source
            Top
            Top
 
Home / About Us / Benifits /Invite a Friend / Policy
Copyright © Hawker 2009-2010, Allright Reserved