[ অর্থনীতি ] 2018-05-27
 
ঘাটতি পূরণে দ্বিগুণ ঋণ
সম্ভাব্য ঘাটতি ১ লাখ ২৭ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা * ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ নেবে ৫৯ হাজার ২৮৩ কোটি টাকা
 
মিজান চৌধুরী :

আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৫ শতাংশই থাকছে। টাকার অঙ্কে সম্ভাব্য ঘাটতির পরিমাণ ১ লাখ ২৭ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা। চলতি বাজেটে এ ঘাটতি হচ্ছে ১ লাখ ১২ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা। ওই হিসেবে আগামীতে ঘাটতি বেশি থাকছে ১৫ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। এ ঘাটতি পূরণে সরকার ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ নেবে ৫৯ হাজার ২৮৩ কোটি টাকা; যা চলতি বছরের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি। অর্থ মন্ত্রণালয় ঘাটতি বাজেটের এ আকার চূড়ান্ত করেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা পরিষদের সাবেক মহাপরিচালক এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. এমকে মুজেরি যুগান্তরকে বলেন, সরকার চলতি বছরে সঞ্চয়পত্র থেকে বেশি এবং ব্যাংকিং খাত থেকে কম ঋণ নিয়েছে। সমালোচনা হচ্ছে, সঞ্চয়পত্র থেকে বেশি ঋণ গ্রহণ অনেক ব্যয়বহুল। কারণ এতে সুদের হার বেশি। তিনি বলেন, আগামী বছরে ব্যাংকিং খাত থেকে দ্বিগুণ ঋণ নেয়া হচ্ছে। তবে খেয়াল রাখতে হবে, বেসরকারি ঋণের ওপর যেন নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে। কারণ উন্নয়নের জন্য বেসরকারি ঋণ জরুরি। এছাড়া ব্যাংকে তারল্য বেশি বলে শোনা যাচ্ছে। এক্ষেত্রে বেশি মাত্রায় ঋণ নিলে বেসরকারি ঋণে খুব বেশি প্রভাব পড়বে না বলে তিনি জানান।

আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী ঘাটতি বাজেট জিডিপির ৫ শতাংশের নিচে থাকতে হবে। এজন্য আগামী অর্থবছরের বাজেটের ঘাটতি ৫ শতাংশের নিচে রেখেই প্রণয়ন করা হচ্ছে। এতে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে ১ লাখ ২৭ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা। এখন পর্যন্ত নতুন বাজেটের সম্ভাব্য আকার ৪ লাখ ৬৮ হাজার ২০০ কোটি টাকা ধরেই কাজ চলছে। সম্ভাব্য আয়ের প্রাক্কলন হচ্ছে ৩ লাখ ৪০ হাজার ৭৭৫ কোটি টাকা। আগামী ৭ জুন জাতীয় সংসদে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী। আগামী বাজেট হবে বর্তমান সরকারের শেষ এবং জাতীয় নির্বাচনের আগের বাজেট। ফলে সরকারের ৯ বছরের অগ্রগতিও প্রাধান্য পাচ্ছে সেখানে। জানতে চাইলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, আগামী বছর ঘাটতির পরিমাণ জিডিপির ৫ শতাংশের ওপরে যাবে। তবে বছরের শেষ দিকে তা ঠিক নাও থাকতে পারে। কারণ প্রতি বছর ঘাটতি বাজেট জিডিপির ৩ থেকে ৪ শতাংশের বেশি হয় না। এরপরও ৫ শতাংশ হিসাব ধরেই ঘাটতি বাজেট প্রণয়ন করা হয়।

জানা গেছে, দুটি খাত থেকে অর্থ নিয়ে বাজেট ঘাটতি পূরণ করে সরকার। একটি বৈদেশিক এবং দ্বিতীয় হচ্ছে অভ্যন্তরীণ উৎস। আগামী বছরে বৈদেশিক উৎস থেকে ৩৮ হাজার ৯৪৫ কোটি টাকা নেয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ঋণ হিসেবে ৪২ হাজার ৫৩৬ কোটি টাকা ও অনুদান ১০ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা। একই বছরে বিদেশি ঋণ পরিশোধ করতে সরকার ব্যয় করবে ১৩ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা।

সূত্রমতে, আগামী বছর বিদেশি ঋণ পাওয়ার লক্ষ্য কমেছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, বাংলাদেশ স্বল্প আয়ের দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে যাচ্ছে। অর্থনৈতিক দিক থেকে আগের তুলনায় বাংলাদেশের অবস্থান ভালো। যে কারণে ঋণ দেয়ার পরিমাণও কমছে। পাশাপাশি বাংলাদেশও ঋণনির্ভরতা কালচার থেকে বেরিয়ে আসছে। এজন্য আগামী বাজেটে এর প্রতিফলন দেখা যাবে। চলতি বছরে ঘাটতি মেটাতে ৫৫ হাজার ৩১৩ কোটি টাকা বিদেশি ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু আসন্ন বাজেটে বিদেশি ঋণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৪২ হাজার ৫৩৬ কোটি টাকা। হিসাবে দেখা যাচ্ছে প্রায় ১২ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা ঋণ কম নেয়া হবে।

সূত্র আরও জানায়, বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকার চলতি বছরের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি ব্যাংক ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে। যেখানে ২৮ হাজার ২০২ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ নিচ্ছে এ বছরে। আগামী বাজেটে ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৫৯ হাজার ২৮৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ ৩১ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ নেয়া হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, সরকার সঞ্চয়পত্র খাত থেকে ঋণ কম নেবে। যে কারণে ব্যাংকিং খাত থেকে বেশি ঋণ নিচ্ছে। কারণ সঞ্চয়পত্র খাত থেকে বেশি ঋণ নেয়া সরকারকে মাত্রারিক্ত সুদ পরিশোধ করতে হয়। সুদ পরিশোধ করতে গিয়ে চাপ সৃষ্টি হয়। পাশাপাশি ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ নিলে কম সুদ গুনতে হবে। সরকারের ব্যয়ও কমবে। যে কারণে ব্যাংকিং খাত থেকে বেশি ঋণ নেয়া হচ্ছে। জানা গেছে, সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহে সরকার সুদ দিচ্ছে প্রায় ১০ থেকে ১১ শতাংশ। আর ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নিলে সুদ দিতে হতো সর্বোচ্চ ৩ থেকে ৫ শতাংশ। এ বছর সঞ্চয়পত্র থেকে বেশি ঋণ নেয়ায় বেশি মাত্রায় সুদ পরিশোধ করতে গিয়ে চাপ সৃষ্টি হয়েছে বাজেটে। সূত্রমতে, সরকার সঞ্চয়পত্র খাত থেকে ২৯ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্যনির্ধারণ করেছে। অবশ্য এটি চলতি বাজেটের তুলনায় ২ হাজার ৯৫২ কোটি টাকা কম। চলতি বাজেট ঘাটতি মেটাতে বড় ধরনের ঋণ নেয়া হয় সঞ্চয়পত্র খাত থেকে। বছরের শুরুতে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও বছরের শেষ দিকে এ লক্ষ্যমাত্রা সংশোধন করা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত সঞ্চয়পত্র খাত থেকে নেয়া ঋণের পরিমাণ ৪৪ হাজার কোটি টাকা পার হওয়ার সম্ভাবনা আছে। বিপুল অঙ্কের এ ঋণ সরকারকে আর্থিক চাপের মুখে ফেলে দিয়েছে। কারণ এ ঋণের বিপরীতে উচ্চ হারে সুদ গুনতে হবে।
Print Close  
Print Close  
News Source
            Top
            Top
 
Home / About Us / Benifits /Invite a Friend / Policy
Copyright © Hawker 2009-2010, Allright Reserved