[ আন্তর্জাতিক ব্যবসা ] 2018-07-12
 
চীনা পণ্যের ওপর নতুন করে শুল্ক আরোপের হুমকি যুক্তরাষ্ট্রের
 
যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে চীন থেকে আমদানিকৃত ২০ হাজার কোটি ডলার পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছে। বেইজিং এ হুমকির পাল্টা জবাব দেয়ার ঘোষণা দিলে পৃথিবীর দুই বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে চলতে থাকা বাণিজ্যযুদ্ধের মাত্রা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। খবর এএফপি।

উল্লেখ্য, গত শুক্রবার থেকে ৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের আমদানিকৃত চীনা পণ্যের ওপর মার্কিন কর্তৃপক্ষ ২৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকর করে। চীনও সমমূল্যের মার্কিন পণ্যের ওপর একই হারে একই দিন থেকে পাল্টা শুল্ক কার্যকর করে। এর মাত্র চারদিন পর যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে হুমকি দিল।

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি রবার্ট লাইটহাইজার মঙ্গলবার শেষ বেলায় অভিযোগ করেন, কোনো ধরনের আন্তর্জাতিক আইনি ভিত্তি অথবা ন্যায্যতা ছাড়াই চীন পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে।

এক বিবৃতিতে লাইটহাইজার বলেন, চীনের পাল্টা শুল্কের কারণে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বাণিজ্য বিভাগকে আরো ২০ হাজার কোটি ডলারের চীনা পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন।

কর্মকর্তারা আগস্ট মাসের শেষ নাগাদ তালিকায় থাকা পণ্যগুলো নিয়ে একটি শুনানির আয়োজন করবেন এবং তা শেষ হতে প্রায় দুই মাস সময় লাগবে বলে জানান একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা। এর পর ট্রাম্প সিদ্ধান্ত নেবেন, শুল্ক আরোপ করা হবে কিনা।

একজন কর্মকর্তা সাংবাদিকদের জানান, চূড়ান্ত উদ্দেশ্য হচ্ছে চীনা আমদানি পণ্যের মোট ৪০ শতাংশের ওপর শুল্ক আরোপ। উল্লেখ্য, বেইজিং সম-অনুপাতের মার্কিন পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে।

এ পদক্ষেপ নেয়া হলে মাছ থেকে শুরু করে কেমিক্যাল, ধাতু এবং টায়ারের মতো হাজার হাজার পণ্যের ওপর নতুন করে শুল্ক আরোপ করা হবে।

ওয়াশিংটনের তালিকাটিকে সম্পূর্ণভাবে অগ্রহণযোগ্য আখ্যা দিয়ে বেইজিংয়ের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানায়, তারা বিপরীত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বাধ্য হবে।

মার্কিন পদক্ষেপে বিস্মিত মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের আচরণ চীনকে আঘাত করছে, গোটা দুনিয়াকে আহত করছে এবং তারা নিজেরাও এর শিকার হচ্ছে। এতে আরো বলা হয়, দেশের মূল স্বার্থ এবং জনগণের মৌলিক স্বার্থ রক্ষার জন্য যথারীতি উপযুক্ত  পদক্ষেপ নেয়া ছাড়া চীন সরকারের আর কোনো উপায় থাকবে না। বেইজিং জানায়, তারা অতি সত্বর ওয়াশিংটনের একপাক্ষিক আচরণ নিয়ে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় মামলা করবে।

বেইজিংয়ে এক শীর্ষ সম্মেলনে এক শীর্ষ কর্মকর্তা অভিযোগ করেন, যুক্তরাষ্ট্র বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। তিনি আরো বলেন, ‘ইটের বদলে পাটকেল’ শুল্কের ফলে প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তিগুলোর মধ্যকার বাণিজ্য ধ্বংস হয়ে যাবে।

সহকারী বাণিজ্যমন্ত্রী লি চেংগাং বলেন, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বড় আকারের পারস্পরিক শুল্ক আরোপের ফলে শেষ পর্যন্ত চীন-মার্কিন বাণিজ্য ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

চীন বাদেও যুক্তরাষ্ট্র বেশকিছু মিত্র ও প্রধান বাণিজ্য অংশীদার যেমন— কানাডা, মেক্সিকো ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর শুল্ক আরোপ করেছে। দেশগুলোও এর পাল্টা পদক্ষেপ নিয়েছে।

মঙ্গলবার নতুন করে বাণিজ্যযুদ্ধের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় গতকাল বুধবার এশিয়ার শেয়ারবাজারগুলোয় বড়সড় দরপতন হয়েছে। ট্রাম্প বারবার চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে তার ভালো সম্পর্ক আছে দাবি করলেও বিগত কয়েক মাসে দুই দেশের বাণিজ্য সম্পর্কের চরম অবনতি হয়েছে।

শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ধাপের শুল্ক কার্যকর করার পর চীন একে অর্থনীতির ইতিহাসে বৃহত্তম বাণিজ্যযুদ্ধ হিসেবে আখ্যা দেয়। তবে ট্রাম্প ক্রমাগত বলে আসছেন, চীন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির সুবিধা নিয়েছে এবং তিনি চীনের প্রায় সব রফতানি পণ্য, অর্থাৎ ৪৫ হাজার কোটি ডলারের পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।

চীনের সঙ্গে গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে ৩৭ হাজার ৫২০ কোটি ডলারে পৌঁছলে ট্রাম্পের উষ্মা আরো বৃদ্ধি পায়। বর্তমানে ইউএসটিআর আরো ১ হাজার ৬০০ কোটি ডলারের চীনা পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করার লক্ষ্যে কাজ করছে। বেইজিংও এর পাল্টা জবাব দেবে বলে জানিয়েছে।

লাইটহাইজার বলেন, এক বছরের বেশি সময় ধরে ট্রাম্প প্রশাসন চীনকে তার অন্যায্য চর্চা বন্ধ, বাজার উন্মুক্ত করা এবং সত্যিকারের প্রতিযোগিতায় যুক্ত থাকার আহ্বান জানাচ্ছে। তবে চীন তার স্বভাব বদলায়নি। তবে তিনি আরো বলেন, আলোচনার মাধ্যমে এ সমস্যা দূর করার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র এখনো উন্মুক্ত।
Print Close  
Print Close  
News Source
            Top
            Top
 
Home / About Us / Benifits /Invite a Friend / Policy
Copyright © Hawker 2009-2010, Allright Reserved