[ প্রথম পাতা ] 2018-08-11
 
অভ্যন্তরীণ জলপথে জাহাজ বেড়েছে ৩৫ গুণ, বাড়েনি চালক
 
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর অভ্যন্তরীণ জলপথে জাহাজ চলাচল করত বড়জোর দু’শ’। এখন জাহাজের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে অন্তত ৭ হাজার। অথচ সেই ১৯৭৩ সালের চালক সংখ্যা দিয়েই পরিচালিত হচ্ছে কার্যক্রম। চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে চালক বাড়ানো হয়নি। দেশের নৌপথের সকল স্টেশনে পর্যাপ্ত চালক নেই। এতে করে দুর্ঘটনাও ঘটছে। এর দায় বহন করতে হচ্ছে জাহাজের মালিক ও মাস্টারদের। অভ্যন্তরীণ রুটে জাহাজ চলাচলকারী বিভিন্ন সংস্থার
কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, দেশ স্বাধীন হওয়ার পাঁচ দশকের মধ্যে জাহাজের সংখ্যা বেড়েছে অন্তত ৩৫ গুণ। কিন্তু এই সকল জাহাজকে নিরাপদে পাইলটিংয়ের জন্য জনবল বৃদ্ধি করা হয়নি। এ বিষয়ে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে সরকারী সংস্থা বিআইডব্লিউটিএ’র কাছে আবেদন জানানো হয়েছে। কিন্তু প্রয়োজনটি বিবেচনায় নিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ এখনও গৃহীত হয়নি। উপায়ান্তর না থাকায় জাহাজের অভিজ্ঞ মাস্টারদের দ্বারা গুরুত্বপূর্ণ এ কাজটি পরিচালিত হচ্ছে, যা বিধিসম্মত নয়। দুর্ঘটনা ঘটলে মামলার মুখোমুখি হচ্ছেন জাহাজের মাস্টাররা। বিষয়টি তারা মানতে পারছেন না।
বাংলাদেশ লাইটারেজ শ্রমিক ইউনিয়নের কাছ থেকে জানা যায়, অভ্যন্তরীণ নৌ অধ্যাদেশ ১৯৭৬ এর সংশোধনী ২০১৩ এর ধারা অনুযায়ী নৌ আদালতে প্রায় ৫০টি জাহাজের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয়েছে। সরকারী সংস্থার পাইলটের অনুপস্থিতিতে নিজ দায়িত্বে কাজ পরিচালনা করায় মামলার ঝুঁকিতে প্রায় সকল জাহাজ। পর্যাপ্ত পাইলট নিয়োগ না করলে জলপথে দুর্ঘটনার ঝুঁকি থেকেই যায়। এমন অবস্থায় মামলা থেকে রেহাই পেতে হলে যেখানে পাইলট পাওয়া যাবে না সেখানে পাইলটের জন্য জাহাজের যাত্রা বিরতি বা বিলম্ব করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকছে না।
লাইটারেজ শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মোঃ শাহাদাত হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, অধিকসংখ্যক জাহাজ চলাচলের সময় পাইলট নেই বলা হয়। তখন যদি পাইলটের অপেক্ষায় জাহাজ বসিয়ে রাখা হয় তাহলে দেশের ব্যবসা বাণিজ্য এবং জাহাজ মালিকরা ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তাছাড়া যথাসময়ে জাহাজ না পৌঁছালে পেট্রোলিয়াম ও ভোজ্যতেল সঙ্কট দেশে প্রকট আকার ধারণ করার আশঙ্কা থাকে। এমন হলে জাতীয় উন্নয়নেও মন্দাভাব দেখা দিতে পারে। তিনি বলেন, দেশে এখন পাইলটের যে সঙ্কট তাতে করে নতুন করে এক হাজার নিয়োগ দিলেও সর্টেজ থেকে যাবে। ১৯৭৩ সালের জনবল কাঠামো দিয়ে স্বাধীনতার অর্ধ শতাব্দী পরেও চলতে পারে না। কারণ, দেশের অর্থনীতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আমদানি-রফতানি বৃদ্ধি পেয়েছে বহুগুণ। সরকার বিষয়টি যৌক্তিকভাবে বিবেচনা করবে বলে আমরা আশা করি।
লাইটারেজ জাহাজ শ্রমিকদের সংগঠন বলছে, বিআইডব্লিউটিএ’র পাইলটেজ বিভাগ স্বল্পসংখ্যক পাইলট নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনায় হিমশিম খাচ্ছে। সংস্থাটি প্রয়োজনীয় পাইলট বরাদ্দ দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। তাদের ব্যর্থতার কারণেই দেশের ও জাহাজ মালিকদের ব্যবসায়িক স্বার্থে অভিজ্ঞ মাস্টাররা জিপিএস, রাডার, ইকো সাউন্ডিং, মার্কার ও বাতি দেখে সতর্কতার সঙ্গে জাহাজ চালিয়ে আসছেন। কাজটি বৈধ নয় বিধায় জাহাজের মালিক এবং মাস্টারদের বিরুদ্ধে মামলা মোকদ্দমাও হচ্ছে। অথচ, সরকারী পাইলট না থাকায় নিজ উদ্যোগে জাহাজ পরিচালনা না করেও পারা যাচ্ছে না। মাস্টারদের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ায় হতাশা এবং ক্ষোভও রয়েছে শ্রমিকদের মধ্যে।
লাইটারেজ শ্রমিক নেতাদের বক্তব্য হলো, পাইলট না পেলে সংশ্লিষ্ট সংস্থার দোষ নেই। আর এই অবস্থায় অভিজ্ঞ মাস্টারগণ দেশের ব্যবসা বাণিজ্য এবং মালিকের স্বার্থে আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন তেলবাহী জাহাজ সতর্কতার সঙ্গে নিরাপদে চালিয়ে গন্তব্যে পৌঁছালে শাস্তির মুখোমুখি পড়তে হয়। এমন বিচার কতটুকু যৌক্তিক সেই প্রশ্ন জাহাজের মাস্টারদের।
Print Close  
Print Close  
News Source
            Top
            Top
 
Home / About Us / Benifits /Invite a Friend / Policy
Copyright © Hawker 2009-2010, Allright Reserved