[ শিল্প বাণিজ্য ] 2018-09-26
 
ব্যবস্থা নিতে বিলম্ব হলে সুনাম ক্ষুণ্ন হওয়ার ঝুঁকিতে পড়বে বাংলাদেশ
 
পোশাক ক্রয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে শ্রম অধিকার ইস্যুকে ক্রমেই বেশি বিবেচনায় নিচ্ছেন ভোক্তারা। তাই ব্যবস্থা নেওয়ার বিলম্বিত প্রক্রিয়া দীর্ঘ হলে সুনাম ক্ষুণ্ন হওয়ার ঝুঁকিতে পড়বে বাংলাদেশ। বিদেশি ক্রেতাদের অন্যত্র ঝুঁকে পড়ার হুমকি বাড়বে বলে উল্লেখ করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট।

গতকাল বিজিএমইএ ভবনের সম্মেলন কক্ষে রাষ্ট্রদূত বার্নিকাটের বিদায় সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। এ আয়োজনে বিজিএমইএ সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমানসহ উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র সহ-সভাপতি ফারুক হাসান, সহ-সভাপতি (অর্থ) মোহাম্মদ নাছির। আরও উপস্থিত ছিলেন বিজিএমইএ পরিচালক ও সদস্যসহ মার্কিন দূতাবাসের কর্মীরা।

বক্তব্যের শুরুতে বার্নিকাট বলেন, বাংলাদেশে আমার কার্যকালে যে গঠনমূলক আলোচনা হয়েছে তার জন্য আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ কথাটির মর্যাদা নিশ্চিত ও আরও বৃদ্ধির লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে গিয়ে যে অর্জন আর চ্যালেঞ্জের অভিজ্ঞতা আমাদের হয়েছে, তার মূল্যায়নের সুযোগ পাওয়ার জন্যও কৃতজ্ঞ আমি। অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের সহায়তায় আপনারা তৈরি পোশাক কারখানাগুলোতে বিশাল পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছেন, এগুলো এখন বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ কারখানাগুলোর মধ্যে পড়ে। আমি এদেশে ছিলাম বলে সচক্ষে এই রূপান্তরটা প্রত্যক্ষ করেছি। তবে আপনারা যদি অত্মতৃপ্তিতে না ভোগেন তাহলে বহুদিন ধরে এর সুফলও পাবেন। এখনকার চ্যালেঞ্জটি হচ্ছে জাতীয় কর্মপরিকল্পনার আওতায় কারখানাগুলোর সংস্কারের কাজ শেষ করা এবং অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের কারখানাগুলোতে অর্জিত অগ্রগতি বজায় রাখা।

বার্নিকাট বলেন, বিজিএমইএর জন্য পরবর্তী বড় বাধাটি হচ্ছে শ্রমিকদের অধিকারের বিষয়টি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এ বিষয়ে অগ্রগতি ছিল শ্ল­থ। আমি যে কথাটা অনেকবার জোর দিয়ে বলেছি, আন্তর্জাতিক শ্রম নীতিগুলো মেনে চলা কেবল সঠিক কাজই নয়, এটাই বুদ্ধিমানের কাজ। আমি আপনাদের যত দ্রুত সম্ভব আইনগত প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনাতে উত্সাহিত করতে চাই। বিষয়টি দীর্ঘায়িত করলে কোনো লাভ হবে না। আইনকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত এবং তা কার্যকর করলে বিদেশের বাজারে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বাড়বে। এটি বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক ব্যবসার অংশ বাড়াতেও সহায়তা করবে। ভোক্তারা এখন ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে শ্রম ইস্যুগুলোকে ক্রমেই বেশি করে বিবেচনায় নিচ্ছে। তাই ব্যবস্থা নিতে দেরি করা অব্যাহত রাখলে বাংলাদেশের সুনাম ক্ষুণ্ন হওয়ার ঝুঁকিতে পড়বে। বিদেশি ক্রেতাদের অন্যত্র ঝুঁকে পড়ার হুমকিও বাড়বে।

বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর থেকে ৪৭ বছরে এতদূর এসেছে, এদেশের আরও অনেক কিছু অর্জনের অপার সম্ভাবনা রয়েছে এমন মত প্রকাশ করে বার্নিকাট বলেন, বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে সম্প্রতি আমরা এ দেশের নিম্ন-মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার অর্জনটি উদযাপন করেছি। ২০২৪ সালে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হওয়ার জন্য জাতিসংঘের তিনটি শর্তের প্রত্যেকটিই এরই মধ্যে পূরণ করার জন্য আমরা বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানাই। তবে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকা নির্ভর করবে বাংলাদেশের সতর্ক থাকা এবং কারখানা নিরাপত্তা ও শ্রমিক অধিকারের মতো বিষয়ে কাজ করে যাওয়ার ওপর। উভয় দেশের পারস্পরিক কল্যাণে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা আরও অনেক দিন অব্যাহত থাকবে সেটাই প্রত্যাশা করি।

গতকাল বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বার্নিকাটের আগে বক্তব্য রাখেন বিজিএমইএ নেতারা। এ সময় বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, কারখানাগুলো নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রে যে অর্জন সাধন করেছে, সেখানে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা ব্লুম বার্নিকাটেরও ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও সহযোগিতা রয়েছে। এজন্য তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি। তিনি বলেন, অনেক দিন আগে আপনার কাছে আমরা অনুরোধ করেছিলাম যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তুলা দিয়ে ফেব্রিক্স তৈরি করে তা দিয়ে পোশাক প্রস্তুত করে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করা হলে সেই পোশাক যেনো যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা পায়। এর মাধ্যমে শুধু আমাদের রপ্তানিকারকগণই উপকৃত হবেন না, মার্কিন তুলা উত্পাদনকারী ও ক্রেতারাও উপকৃত হবেন। আপনার কাছে আমাদের একান্ত অনুরোধ, আমাদের পক্ষ হয়ে এ প্রস্তাবটি বিবেচনার জন্য মার্কিন সরকারকে অনুরোধ জানাবেন।

এসময় তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জিএসপি সুবিধা পুনর্বহাল করার আহ্বান জানান। তিনি বার্নিকাটের উদ্দেশে বলেন, শ্রমিকরা যেনো মানসম্মত জীবন যাপন করতে পারেন, তার জন্য দেশে ফিরে যাওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতাদেরকে অনুরোধ জানাবেন, ক্রেতারা যেনো এদেশের পোশাকের জন্য ‘ফেয়ার প্রাইস’ দেন।
Print Close  
Print Close  
News Source
            Top
            Top
 
Home / About Us / Benifits /Invite a Friend / Policy
Copyright © Hawker 2009-2010, Allright Reserved