[ শিল্প বাণিজ্য ] 2018-09-26 |
|
|
|
ইপিজেডে শ্রমিকদের নতুন বেতনকাঠামো |
গেজেটের অপেক্ষায় বেপজা
|
|
|
রাশেদুল তুষার :
পরিমাণ নিয়ে মতানৈক্য থাকলেও দেশের পোশাক শ্রমিকরা নতুন বেতন কাঠামোর সরকারি ঘোষণা পেয়েছে গত ১৩ সেপ্টেম্বর। কিন্তু সরকার নিয়ন্ত্রিত দেশের আটটি ইপিজেডে দেশি-বিদেশি কারখানায় কর্মরত পাঁচ লাখ শ্রমিক এখনো বেতন বৃদ্ধির কোনো ঘোষণা পায়নি। কবে পাবে সে ধরনের কোনো আশ্বাসও মেলেনি বেপজার তরফ থেকে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ কর্তৃপক্ষ (বেপজা) নতুন বেতন কাঠামো নিয়ে সরকারি গেজেটের অপেক্ষায় আছে। এই গেজেট পেলেই ইপিজেডের বিনিয়োগকারী ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের আলোচনা করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ইপিজেডে কর্মরত শ্রমিকদের জন্য নতুন বেতন কাঠামো ঘোষণা করবে বলে জানিয়েছেন বেপজা কর্তৃপক্ষ।
বেপজা সূত্র জানায়, দেশের গার্মেন্ট শিল্প-কারখানায় কর্মরত শ্রমিকরা সরকার নির্ধারিত কাঠামোয় বেতন পেয়ে থাকে। তবে এ বেতন কাঠামো থেকে বেপজা পরিচালিত ইপিজেডগুলোর বেতন কাঠামো আলাদা। সর্বশেষ ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে সরকার ঘোষিত গার্মেন্ট শ্রমিকদের সর্বনিম্ন বেতন ধরা হয়েছিল পাঁচ হাজার ৩০০ টাকা। সেখানে ইপিজেডের শ্রমিকদের সর্বনিম্ন বেতন ধরা হয়েছিল পাঁচ হাজার ৬০০ টাকা। শতভাগ রপ্তানিমুখী এবং দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী থাকার কারণে ইপিজেডের শ্রমিকদের বেতন সাধারণত ইউএস ডলারে নির্ধারণ করা হয়। সে হিসেবে ইপিজেডে কর্মরত একজন হেলপারের বেতন ধরা হয়েছিল ৭০ ডলার। সে সময়ের টাকার সঙ্গে ডলারের মূল্যমানের (প্রতি ডলার ৮০ টাকা) হিসেবে বেতন দাঁড়ায় পাঁচ হাজার ৬০০ টাকা।
এ ছাড়া খাবার ও যাতায়াত ভাতাবাবদ ইপিজেডের শ্রমিকরা আলাদা ভাতা পায় কর্মরত প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে। এর সঙ্গে প্রতিবছর মূল বেতনের ১০ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট হিসেবে পায় শ্রমিকরা। চলতি বেতন কাঠামোয় সরকার শুধু পোশাক শ্রমিকদের জন্য নতুন বেতন কাঠামো ঘোষণা করলেও বেপজা ঘোষিত বেতন কাঠামোয় পোশাক শ্রমিকদের পাশাপাশি ইপিজেডে অবস্থিত প্রযুক্তিনির্ভর কারখানা ও রাসায়নিক শিল্প-কারখানার শ্রমিকদের জন্য আলাদা বেতন কাঠামো ঘোষণা করে থাকে। গতবার যেমেন ইলেকট্রনিকস ও ইলেকট্রিক্যাল পণ্যের কারখানা শ্রমিকদের সর্বনিম্ন বেতন ধরা হয়েছিল ছয় হাজার ৬৫০ টাকা। ধারণা করা হচ্ছে, এবারও ইপিজেডের বাইরের তৈরি পোশাক কারখানার চেয়ে কিছুটা বাড়তি বেতনে নতুন কাঠামো ঘোষণা করবে বেপজা।
নতুন বেতন কাঠামো নিয়ে বেপজার অবস্থান জানতে চাইলে মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) নাজমা বিনতে আলমগীর কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা সরকারি গেজেটের জন্য অপেক্ষা করছি। কারণ এখন যে বেতন বাড়ানোর ঘোষণা এসেছে সেটা মৌখিক। ইপিজেডে বেতন বাড়ানোর জন্য মালিক, শ্রমিক প্রতিনিধি ও বেপজার ত্রিপক্ষীয় মিটিং হবে। আমরা সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর যদি সরকারি সিদ্ধান্তে পরিবর্তন আসে তখন সমস্যায় পড়ে যাব। যেহেতু ইপিজেডে বিনিয়োগকারীদের অধিকাংশই বিদেশি।’ তবে যখনই ঘোষণা হোক তা সরকার নির্দেশিত সময় থেকেই কার্যকর হবে। এটা নিয়ে শ্রমিকদের শঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই বলে তিনি জানান।
তবে যখনই কার্যকর হোক শ্রমিকদের নতুন বেতন কাঠামো কার্যকর করা বর্তমান পরিস্থিতিতে কারখানা মালিকদের জন্য একটা বড় ধাক্কা হিসেবেই মনে করেন বিজিএমইএ পরিচালক ও চট্টগ্রাম ইপিজেডে অবস্থিত দেশের বৃহত্তম জিন্স উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান প্যাসিফিক জিন্স গ্রুপের পরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর।
এ প্রসঙ্গে কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘যেহেতু সরকারি সিদ্ধান্ত তাই নতুন বেতন কাঠামো ঘোষণা হলে সেটা বাস্তবায়নের কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু বাড়তি বেতনের এই বিশাল চাপ সামাল দেওয়ার ক্ষমতা সবার নেই। কারণ বর্তমান উৎপাদন খরচে বাড়তি বেতনের হিসাবটি যুক্ত নয়।’
তবে নতুন বেতন কাঠামোর বিষয়টি ক্রেতারাও জেনেছে। তাই বাড়তি উৎপাদন খরচের (ম্যানুফ্যাকচারিং কস্ট) জন্য নিজ নিজ ক্রেতাদের কনভিন্স করার পরামর্শ দেন তিনি।
প্রসঙ্গত, দেশের আটটি ইপিজেডের চালু থাকা ৪৭৬টি শিল্পপ্রতিষ্ঠানে বর্তমানে পাঁচ লাখ দুই হাজার ১৩ জন শ্রমিক কর্মরত আছে। |