[ শেষের পাতা ] 2018-09-26
 
অবৈধ কর্মীদের এখনই বের করে দেবে না মালয়েশিয়া
কুয়ালালামপুরে যৌথ ওয়ার্কিং কমিটির ফলপ্রসূ বৈঠক
 
ফিরোজ মান্না:

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের শ্রমবাজার নিয়ে যৌথ ওয়ার্কিং কমিটির দুই দিনের বৈঠক ফলপ্রসূ হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগের জন্য মালয়েশিয়া প্রতিনিধিদলকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে দেশটিতে ৫ লাখের বেশি অবৈধ কর্মীকে বৈধ করার আহ্বান জানানো হয়। প্রথমে মন্ত্রী পর্যায়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরে দুই দেশের গঠিত ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে কর্মী নিয়োগে বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন দুই দেশের প্রতিনিধিদল। আলোচনা শেষে ৯ সদস্যের প্রতিনিধি দল বৃহস্পতিবার দেশে ফেরার কথা রয়েছে।

যৌথ ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে প্রবাসীদের সুরক্ষা ও নানাবিধ অসুবিধা দূর করার বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। কোন প্রক্রিয়ায় মালয়েশিয়া কর্মী নিয়োগ করবে তা নিয়েও দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। আলোচনায় কর্মী নিয়োগে কোন সিন্ডিকেট থাকবে না, বেশি টাকা নেয়া যাবে না এমন অনেক বিষয় স্থান পেয়েছিল। তবে এই বৈঠকই শেষ নয়। আরও বৈঠকের প্রয়োজন আছে বলে মালয়েশিয়ার প্রতিনিধিদলের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলকে জানানো হয়। বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল কর্মী নিয়োগে ও মালয়েশিয়ায় অবস্থিত ৫ লাখের বেশি কর্মীকে বৈধ করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছে। অবৈধ কর্মীদের বিষয়ে মালয়েশিয়ার প্রতিনিধিদল কোন আশ্বাস না দিলেও এখনই তাদের দেশ থেকে বের করে দেয়া হবে না বলে আশ্বস্ত করেছে। সোম ও মঙ্গলবার দেশটির প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল বৈঠক করেন। আজ বুধবার মালয়েশিয়ার উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আরও বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। বৃহস্পতিবার প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসির নেতৃত্বে ৯ সদস্যের প্রতিনিধিদলের দেশে ফেরার কথা রয়েছে। দেশে ফিরেই তারা সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে মালয়েশিয়া শ্রমবাজারের অগ্রগতি সম্পর্কে জানাবেন। প্রতিনিধিদলে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক মোঃ সেলিম রেজা, অতিরিক্ত সচিব ড. মনিরুস সালেহিন (কর্মসংস্থান), মন্ত্রীর একান্ত সচিব, উপসচিব মোহাম্মদ সাহিন (কর্মসংস্থান), পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ডিজি ও একজন উপসচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একজন প্রতিনিধি, আইন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন উপসচিব রয়েছেন। মালয়েশিয়ার পক্ষে ওয়ার্কিং কমিটিতে তানশ্রি আচিহের নেতৃত্বে রয়েছেন সাবেক বিচারপতি, ডেপুটি ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা, আইনজীবী ও ডিআইজিসহ ৭ সদস্যর প্রতিনিধিদল। এমওইউ অনুযায়ী দুই দেশের যৌথ ওয়ার্কিং কমিটির সদস্যরা মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারের সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে দুই দিনের বৈঠক করেছেন।

এদিকে গত সোমবার স্থানীয় সময় বিকেল ৩টায় মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনে আয়োজিত ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের সদস্যপদ নিবন্ধনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, প্রবাসীদের পরিবারকে পাহারা দেয়ার দায়িত্ব বাংলাদেশ সরকারের। প্রবাসীরা হচ্ছেন দেশের গোল্ডেন বয়। কারণ, আপনাদের পাঠানো রেমিটেন্সে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রয়েছে। প্রবাসীদের ছেলেমেয়ে যাতে স্বল্প খরচে লেখাপড়া করতে পারে সে ব্যবস্থাও করেছে সরকার। প্রবাসীদের দেশে স্বল্প খরচে বাড়ি নির্মাণের জন্য প্রতিটি জেলায় প্লটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া প্রবাসীদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিমানবন্দরে ইউনিফরম পরিহিত টিম থাকবে। কোন সমস্যা হলে আপনাদের অভিযোগের কথা তাদের বলবেন। কোন অভিযোগ থাকলে সরাসরি তার সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য প্রবাসীদের প্রতি আহ্বান জানান মন্ত্রী। প্রবাসীদের কল্যাণে আমার মন্ত্রণালয়ের দরজা সবসময় খোলা রয়েছে।

হাইকমিশনার মোঃ শহীদুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও শ্রম কাউন্সিলর মোঃ সায়েদুল ইসলামের পরিচালনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নুরুল ইসলাম বিএসসি বলেন, প্রবাসীদের কল্যাণে প্রবাসী ব্যাংক চালু করা হয়েছে। যারা বিদেশ গমন করতে চান এ ব্যাংক থেকে তাদের ঋণের মাধ্যমে বিদেশে যাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে, যাতে স্বল্প খরচে বিদেশ গমন করতে পারেন।

হাইকমিশনার মোঃ শহীদুল ইসলাম বলেন, দূতাবাস সবসময় প্রবাসীদের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে। আপনাদের সহযোগিতা ছাড়া কোন কাজ করা সম্ভব নয়। সারাবিশ্বে পরিশ্রমী জাতি হিসেবে বাংলাদেশীদের বিশেষ মর্যাদা রয়েছে। তারা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে বিষয়টি লক্ষ্য রাখার দায়িত্ব যেমন সরকারের, তেমনি অন্য সবারও। মালয়েশিয়ায় কর্মরত অন্যান্য দেশের নাগরিকদের তুলনায় এ দেশের আইনকানুন, নিয়ম-শৃঙ্খলা মেনে চলার ব্যাপারে আলাদা অবস্থান তৈরি করেছে বাংলাদেশীরা। এটি মালয়েশিয়ার সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সরকার, সবাই বিশ্বাস করে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশী কর্মীদের আলাদা সম্মান রয়েছে।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) মহাপরিচালক সেলিম রেজা ও বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আহমেদ মনিরাসসালেহীন। উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি হাইকমিশনার ওয়াহিদা আহমেদ, মিনিস্টার পলিটিক্যাল মোঃ রইছ হাসান সারোয়ার, ডিফেন্স উইং প্রধান এয়ার কমোডর মোঃ হুমায়ূন কবির, প্রথম সচিব শ্রম মোঃ হেদায়েতুল ইসলাম, পাসপোর্ট ও ভিসা শাখার উইং প্রধান মোঃ মশিউর রহমান তালুকদার, কমার্শিয়াল উইং প্রধান মোঃ রাজিবুল আহসান, ফার্স্ট সেক্রেটারি মোঃ মাসুদ আহমেদ।
Print Close  
Print Close  
News Source
            Top
            Top
 
Home / About Us / Benifits /Invite a Friend / Policy
Copyright © Hawker 2009-2010, Allright Reserved