[ খবর ] 2018-09-26
 
শাহজালালে তৈরি হচ্ছে তৃতীয় টার্মিনাল
 
শহিদুল আলম :

অবশেষে আলোর মুখ দেখছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প। গত সপ্তাহে আন্তর্জাতিকভাবে এ প্রকল্পের নির্মাণকাজের জন্য দরপত্র প্রকাশ করেছে সিভিল এভিয়েশন (বেবিচক)। ২০১৯ সালের জানুয়ারির মধ্যে এ কাজের জন্য দরপত্র জমা দিতে হবে।

গত এপ্রিলে এ প্রকল্পের কাজ শুরুর কথা ছিল। কিন্তু মামলার কারণে প্রকল্পের কাজ ঝুলে পড়ে। মামলার নিষ্পত্তি হওয়ায় গত সপ্তাহে এর দরপত্র আহ্বান করা হয়।

সাবেক বিমানমন্ত্রী (বর্তমান সমাজকল্যাণমন্ত্রী) রাশেদ খান মেননের সময় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে তৃতীয় টার্মিনাল ভবনসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। এরই অংশ হিসেবে ২০১৭ সালের ১১ জুন প্রকল্পের পরামর্শক হিসেবে চারটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করে বেবিচক। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- জাপানের নিপ্পন-কয়োই ও ওরিয়েন্টাল কনসালট্যান্ট গ্লোবাল, সিঙ্গাপুরের সিপিজি কনসালট্যান্ট এবং বাংলাদেশের ডিজাইন কনসালট্যান্টস লিমিটেড।

সে সময় সাবেক বিমানমন্ত্রী বলেছিলেন, ২০১৮ সালের এপ্রিলে থার্ড টার্মিনালের নির্মাণকাজ শুরু হবে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের সফট ওপেনিং এবং ২০২১ সালের এপ্রিলে নির্মাণ শেষ হবে।

বর্তমানে বিমানবন্দরে যাত্রী হ্যান্ডলিং ক্যাপাসিটি ও কার্গো হ্যান্ডলিং ক্যাপাসিটি ক্রমেই কমে আসছে। ফলে কার্গোজট লেগেই আছে। চলতি বছর যাত্রী ক্যাপাসিটিও শেষ হয়ে যাবে। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে বিমানবন্দরের যাত্রী হ্যান্ডলিং ক্যাপাসিটি বছরে ৮০ লাখ এবং কার্গো হ্যান্ডলিং ক্যাপাসিটি দুই লাখ টন করা প্রয়োজন। সরকার তাই বিমানবন্দরের সম্প্র্রসারণ প্রকল্প হাতে নিয়েছে। তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণের পর শাহজালাল বিমানবন্দরে যাত্রী হ্যান্ডলিং ক্ষমতা বছরে দুই কোটি এবং কার্গো হ্যান্ডলিং ক্ষমতা বছরে পাঁচ লাখ টনে উন্নীত হবে।

এ ব্যাপারে বেবিচকের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম নাইম হাসান সমকালকে জানান, গত সপ্তাহে এই প্রকল্পের নির্মাণকাজের জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। আগামী জানুয়ারি পর্যন্ত দরপত্র জমা দেওয়া যাবে। তিনি জানান, নতুন টার্মিনাল থেকে বর্তমান ভিভিআইপি গেটের বিপরীতে নির্মাণাধীন ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে একটি সাবওয়ে (আন্ডারপাস) যুক্ত হবে। এই সাবওয়ের মাধ্যমে তৃতীয় টার্মিনাল থেকে যাত্রীরা গাড়ি নিয়ে সরাসরি চলে যেতে পারবেন এক্সপ্রেসওয়েতে। এতে সময় বাঁচবে, যানজটেও পড়তে হবে না।

বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং সিভিল এভিয়েশন সূত্রে জানা গেছে, গত বছর জুনে চুক্তিবদ্ধ পরামর্শক প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের সমীক্ষা প্রতিবেদন জমা দেয়। টার্মিনালের বিস্তারিত ডিজাইন ও মূল নির্মাণকাজের দরপত্রের খসড়াও তৈরি করে তারা। কিন্তু বিমানবন্দরের ভেতর বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের, বিশেষ করে বেঙ্গল এভিয়েশনের হ্যাঙ্গারসহ আরও কয়েকটি হেলিকপ্টার পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানের স্থাপনা রয়েছে। পদ্মা অয়েল ডিপোসহ একাধিক হেলিকপ্টার সেবা প্রতিষ্ঠানকে এখানে দীর্ঘ মেয়াদে লিজ দেওয়া হয়েছে। তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ করতে হলে এসব প্রতিষ্ঠানের স্থাপনাসহ বর্তমান কার্গো ভিলেজ ও ভিভিআইপি কমপ্লেক্সসহ বেশ কিছু অবকাঠামো অপসারণ করতে হবে।

তবে বিপত্তি দেখা দেয় এগুলো অপসারণ করতে গিয়ে। একাধিক প্রতিষ্ঠান স্থাপনা সরানোর বদলে আদালতে মামলা ঠুকে দেয়। ফলে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের পক্ষে সম্ভব হয়নি তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণের জন্য কোনো দরপত্র আহ্বান করা। চলতি মাসের শুরুর দিকে এসব মামলা নিষ্পত্তি হয়।

এ ক্ষেত্রে প্রকল্পের অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠান জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) ৫৩টি পর্যবেক্ষণ দিয়েছিল। এরই মধ্যে জাইকার এসব পর্যবেক্ষণের সমাধানও করা হয়েছে। মামলাও শেষ হয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণের জন্য গত সপ্তাহেই দরপত্র আহ্বান করেছে বেবিচক কর্তৃপক্ষ।

বিমানবন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে তৃতীয় টার্মিনাল ভবনসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পের সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয় ১৩ হাজার ৬১০ কোটি ৪৬ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। এ প্রকল্পে অর্থায়ন করছে জাইকা। থার্ড টার্মিনাল ভবনের আয়তন হবে দুই লাখ ২৬ হাজার বর্গমিটার। এ টার্মিনাল ভবন তৈরি করতে গিয়ে নতুন করে নির্মাণ করতে হবে কার্গো ভিলেজ। এটির আয়তন হবে ৪১ হাজার ২০০ বর্গমিটার।
Print Close  
Print Close  
News Source
            Top
            Top
 
Home / About Us / Benifits /Invite a Friend / Policy
Copyright © Hawker 2009-2010, Allright Reserved