[ শেষের পাতা ] 2019-01-19
 
দশম দিনে মানুষের ঢল নামে বাণিজ্যমেলায়
জমজমাট কেনাকাটা সঙ্গে বিনোদনও
 
ওয়াজেদ হীরা :

মানুষ আর মানুষ। ছোট্ট শিশু থেকে শুরু করে আবালবৃদ্ধ বনিতার ঢল নামল ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায়। মেলার দশম দিনে দ্বিতীয় শুক্রবার সব শ্রেণী-পেশার মানুষের স্রোত মিলল গিয়ে মেলা প্রাঙ্গণে। লাখো মানুষের ঢলে তখন মুখরিত মেলাঙ্গন। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কেনাকাটাও জমজমাট। প্রত্যাশিত দর্শনার্থীর ভিড়ে বিক্রেতাদের মুখে ফুটেছে হাসি।

আলো ঝলমলে শীতের সকাল থেকেই শুরু হয় মানুষের পদচারণা। বিকেলের পর ভিড় শুধু বাড়তেই থাকে। মেলা শুরুর পর দ্বিতীয় শুক্রবার দর্শনার্থীর চাপ বাড়বে এটা প্রত্যাশিত ছিল। স্টলে স্টলেও যথারীতি কেনাকাটা জমজমাট। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, মানুষের ভিড় হলে বিক্রিও বাড়ে, এতে বেশ খুশি তারা।

মেলা শুরুর পর দ্বিতীয় শুক্রবারই সবচেয়ে বেশি ভিড় দেখা গেল।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, লাখের বেশি মানুষ প্রবেশ করেছে মেলায়। সকাল থেকেই পরিবার বা বন্ধুরা দলবেঁধে মেলায় আসতে দেখা গেছে। দুপুরের পর থেকেই মানুষের ভিড়ে আশপাশের সড়কে যানজট তৈরি হয়। এ সময় ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তাদের মানুষের ভিড় আর যানজট সামলাতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। ফার্মগেট থেকে বিজয় সরণি হয়ে মিরপুর যাওয়া-আসা উভয়ক্ষেত্রেই প্রচুর যানজট দেখা গেছে। এছাড়াও যারা আসাদ গেট হয়ে কল্যাণপুরের দিকে যাতায়াত করেছেন তাদেরও যানজটে পড়তে হয়েছে। এছাড়া গণভবনের গেট আর বিজয় সরণির দু’পাশ থেকে অনেকেই হেঁটে এসেছেন মেলায়। এতেও অবশ্য ক্লান্তি নেই দর্শণার্থীদের। কেননা, বিনোদন আর কেনাকাটার জন্য এর চেয়ে ভাল প্ল্যাটফর্ম সব সময় পায় না রাজধানীবাসী। শুধু নগরের বাসিন্দারাই নয় আশপাশের উপজেলা থেকেও এসেছেন দর্শনার্থী। গাজীপুর থেকে বাণিজ্য মেলায় এসেছেন সাজ্জাতুল আলম। তিনি বলেন, ঢাকার এই মেলায় অনেক কিছু পাওয়া যায়। গাজীপুরেও মেলা হয় তবে এত বড় হয় না। আমি প্রতিবছর এক-দুবার এই মেলায় আসি। কথা হয় সাভার থেকে আসা একদল বন্ধুর সঙ্গে। তারা জানান, মেলায় যেমন কেনাকাটা হয় তেমনি বিনোদনটা বোনাস। বন্ধুরা মিলে এলে বিনোদনটাই বেশি হয়। তাই সকাল সকাল আমরা সবাই এসেছি। শেষের দিকে আবার আসব।

মেলার দশম দিনে দ্বিতীয় শুক্রবার। কেমন টিকেট বিক্রি হলো সে বিষয়ে গেট ইজারাদার মীর ব্রাদার্সের স্বত্বাধিকারী মোঃ শহিদুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত এক লাখ ১০ হাজার টিকেট বিক্রি হয়েছে। আশা করছি, আরও ২০/৩০ হাজার টিকেট বিক্রি হবে। প্রথম শুক্রবারের চেয়ে দ্বিতীয় শুক্রবার মানুষের ঢল দেখে খুশি তিনি।

শুক্রবার মেলাস্থল ও আশপাশ ঘুরে দেখা গেছে, বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের সামনের রাস্তা থেকে বাণিজ্য মেলার মূল ফটকের দূরত্ব হাঁটার রাস্তা মাত্র পাঁচ মিনিটের হলেও ভিড়ের কারণে সময় লেগেছে ১৫/২০ মিনিট। একই অবস্থা সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল বা গণভবনের পাশের রাস্তারও। মেলার বিভিন্ন স্টলে এদিন মানুষের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। সব ধরনের স্টলেই দর্শনার্থীদের পদচারণা ছিল। এর মধ্যে হোম এ্যাপ্লায়েন্স কিনতে ওয়ালটন, মিনিস্টার, মার্সেলের মতো দেশী ব্র্যান্ডের প্যাভিলিয়নসহ স্টলেও মানুষের প্রচুর চাপ দেখা যায়।

শীতের দাপট কম থাকলেও ছেলেদের ব্লেজারের স্টল বেচাকেনায় ছিল জমজমাট। ব্লেজার বিক্রেতা ওয়াদুদ বলেন, মেলা শুরুর পর আজই বেশ বেচাকেনা হচ্ছে। মানুষও আসছে প্রচুর। ছোটবড় বিভিন্ন ব্লেজার ঘুরে ঘুরে দেখছিলেন ক্রেতা। তরুণীরা ভিড় জমিয়েছে জুয়েলারি স্টলেও। সাফিয়া নামের এক তরুণী বলেন, মেলায় অনেক সময় একটু ভালমানের অর্নামেন্ট পাওয়া যায়, স্টোনগুলো ভাল হয়। এছাড়া দামও বেশ সাধ্যের মধ্যে থাকে। এছাড়াও থ্রিপিসের স্টলগুলোতে তরুণীদের ভিড় ছিল। মেলায় বিভিন্ন ছাড়ে নানা পণ্য বিক্রি করতে দেখা গেছে। থ্রিপিসও এক্ষেত্রে পিছিয়ে নয়। ৩টি থ্রিপিস ৫০০ থেকে ৯৯৯ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নার্গিস সুলতানা তিনটি থ্রিপিস কেনেন ৬৫০ টাকায়। তিনি বলেন, মেলায় জামাগুলো আসলে বাসায় পরিধানের জন্য কিনলাম। দামও কম।

এদিকে, গৃহস্থালি পণ্য বিশেষ করে প্লাস্টিক পণ্য কিনতে বেশ ভিড় দেখা গেছে প্লাস্টিকের প্যাভিলিয়নে। নারী-পুরুষ সবাই মিলে পরিবারের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন প্লাস্টিকের পণ্য কিনতে দেখা গেছে। প্রাণ আরএফএল, তানিন কিংবা বেঙ্গলের মতো নামীদামী ব্রান্ডের প্যাভিলিয়নে শুধু মানুষ আর মানুষ দেখা গেছে। প্রতিটি স্টলেই নানা ধরনের ছাড় দেয়া হচ্ছে। কোন কোন প্যাভিলিয়নে পণ্য বিভিন্ন বান্ডিল করে বিক্রি করা হচ্ছে যেখানে গ্রাহকদের সাশ্রয় হচ্ছে ২০ থেকে কয়েক শ’ টাকা।

মেলাস্থলে শিশু পার্কে বাচ্চারা মেতে ওঠেন বিনোদনে। বিভিন্ন রাইডে ওঠার দৃশ্য দেখা যায়। আর অভিভাবকরা পাশেই দাঁড়িয়ে সন্তানের বিনোদন উপভোগ করেন। রামপুরার বাসিন্দা আরমান সন্তান নিয়ে এসেছেন মেলায়।

দুই সন্তানকে দুটি রাইডে উঠিয়ে দিয়ে তিনি দেখছেন তাদের। তিনি বলেন, অন্যান্য দিনে সন্তাদের স্কুল থাকে। আর আমি ব্যবসা করি। সময়ও পাই না। মেলায় এলে সন্তানদের বিনোদনও হলো। কিছু কেনাকাটাও। এদিকে, মেলার প্রথমদিকে ক্রোকারিজ পণ্য তেমন বিক্রি না হলেও গত দুদিনে বেড়েছে বিক্রি। বিক্রেতারা বলছেন, বিশেষ অফার আর ডিসকাউন্ট দেয়ায় ক্রেতা তাদের পছন্দের পণ্য কিনতে ভিড় করছেন। মেলায় পণ্যভেদে ১৫ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়ে পণ্য বিক্রি করছে বাজেট বাজার, মিয়াকো কমেট, টপটেন ফর এম্পোরিয়াম, কিয়াম, আরএফএল, মিয়াকো, মিয়া ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল ও কানিজ এন্টারপ্রাইজ। এসব স্টলে আছে বিশেষ অফার। জান্নাতুল নামের এক ক্রেতা বলেন, ছুটির দিনে ঘুরতে আসার পাশাপাশি কিছু পণ্য কেনা হলো। অফার থাকায় ছাড় পেয়েছি।

প্যাভিলিয়ন কিংবা স্টল মানুষের সমাগম সব স্থানেই। মানুষের ভিড়ে খাবারের রেস্তরাঁগুলোয় আরও বেশি বিকিকিনি। বিক্রেতারা বলছেন, আগামীর দিনগুলোতে দর্শনার্থীদের এমন পদচারণা থাকলে ব্যবসা বেশ ভাল হবে। মেলার আরও বিশদিন বাকি আছে বলে ভাল বিক্রির আশায় বুক বাঁধছেন ব্যবসায়ীরা।
Print Close  
Print Close  
News Source
            Top
            Top
 
Home / About Us / Benifits /Invite a Friend / Policy
Copyright © Hawker 2009-2010, Allright Reserved