[ অর্থনীতি ] 2019-01-19 |
|
|
|
|
উজ্জ্বল সম্ভাবনাময় প্লাস্টিক পণ্য বাজার
|
|
|
রেজাউল করিম খোকন :
রফতানি খাতে প্লাস্টিক পণ্যের ভবিষ্যত অনেক উজ্জ্বল ও সম্ভাবনাময়। কারণ প্রতিবছর রফতানি বাড়ছে। বর্তমান ঢাকা ও ঢাকার আশপাশে প্রায় রেজিস্টার্ড দেড় হাজার কারখানা রয়েছে প্লাস্টিকের। দেশে মাথাপিছু এখন ৫-৬ কেজি প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার করছে। আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে যার পরিমাণ হবে প্রায় ৩৪ কেজি। তাই সরকারের ভিশন ও এসডিজি বাস্তবায়নে এখাত উন্নয়নে নীতি সহায়তা প্রয়োজন।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের প্লাস্টিক রফতানি ধীরে ধীরে বাড়ছে। বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে চীন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র এখন বাংলাদেশ থেকে প্লাস্টিক পণ্য আমদানি বাড়িয়েছে। ফলে বাংলাদেশের প্লাস্টিক শিল্পের ভবিষ্যত অনেক উজ্জ্বল। বাংলাদেশের প্লাস্টিক পণ্যের বাজারের আকার ২৫ হাজার কোটি টাকা। এ বাজার থেকে সরকার ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকার রাজস্ব আহরণ করছে। রফতানিতে এখাতে ১০ শতাংশ নগদ সহায়তা দেয়া হচ্ছে। কিন্তু যাদের বন্ড লাইসেন্স রয়েছে কিংবা ইপিজেডে কারখানা রয়েছে তারা এ সুবিধার বাইরে রয়েছেন। আগামীতে ছোট বড় সবার জন্য এই সুবিধা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। বর্তমান ৫৭টি দেশে প্লাস্টিক পণ্য রফতানি হচ্ছে। উদ্যোক্তারা রফতানির বিষয়টি মাথায় রেখে গ্রিন ফ্যাক্টরি ও কমপ্লায়েন্সে সর্বোচ্চ জোর দিচ্ছেন। এছাড়া চীনের পর এখন বাংলাদেশে খেলনা সামগ্রী উত্পাদনে বেশ এগিয়ে গেছে।
প্লাস্টিক বর্জ্য রিসাইক্লিন করে আবার কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তাই সংগ্রহের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান দেশে ২৫ হাজার কোটি টাকার প্লাস্টিক পণ্য উত্পাদন ও বিপণন হচ্ছে। সরকারের কোষাগারে প্রতিবছর রাজস্ব যোগ হচ্ছে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা। প্রতিবছর দেশ ও দেশের বাইরে প্রায় ২০ শতাংশ হারে প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার বাড়ছে। সরকার এ খাত উন্নয়নে কেরানীগঞ্জ ও আড়াই হাজারে দুটি প্লাস্টিক শিল্পনগরী গড়ে তুলতে সহযোগিতা করেছে।
কৃষি নির্ভর অর্থনীতি থেকে দেশ এখন শিল্পনির্ভর অর্থনীতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ছোট বড় মিলিয়ে দেশে বর্তমান প্রায় ৫ হাজার প্লাস্টিক শিল্প কারখানায় প্রতিবছর ২৫ হাজার কোটি টাকার পণ্য উত্পদান ও বিক্রি করছে।
রফতানি বাজার ধরে রাখতে কারখানা কমপ্লায়েন্স হওয়া জরুরি। এ লক্ষ্যে শিল্পের কারখানাগুলো কমপ্লায়েন্স করতে আলাদা প্লাস্টিক শিল্পনগরী চাওয়া হয়েছে। গার্মেন্টসের কারণে রফতানিতে জিএসপি হারিয়েছে প্লাস্টিক শিল্পখাত। এ কারণে কারখানা কমপ্লায়েন্সে এখন সবচেয়ে বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। এ শিল্পখাত উন্নয়ন এবং কাঁচামাল আহরণে রিসাইক্লিনটা জরুরি। পুরান ঢাকায় ইতোমধ্যে বেশকিছু রিসাইক্লিন কারখানা গড়ে উঠেছে।
আমাদের এখানে কয়েকবছর আগেও কম মূল্যের প্লাস্টিকের খেলনার প্রায় পুরোটাই ছিল আমদানি নির্ভর। কিন্তু গত কয়েক বছরে অবস্থা অনেকটা বদলেছে। বর্তমানে এ সব খেলনার বিরাট একটি অংশই তৈরি হচ্ছে বাংলাদেশে। ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প হিসেবে খেলনা তৈরির বিভিন্ন কারখানা গড়ে উঠছে পুরান ঢাকা এবং আশেপাশের কিছু এলাকায়। মূলত: বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এবং ব্যস্ততম খেলনার বাজার পুরান ঢাকার চকবাজারে। বেশ কয়েক বছর আগেও প্লাস্টিকের খেলনার প্রায় পুরোটাই আসত চীন ও তাইওয়ান থেকে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বাজারে ভালো একটি জায়গা দখল করে নিয়েছে বাংলাদেশে তৈরি খেলনা সামগ্রী। দেশে বিভিন্ন ধরনের খেলনার চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় বেড়েছে এ শিল্পে ব্যবহূত মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির পরিমাণ। তবে এখনও বাংলাদেশে খেলনার বাজার অনেকটাই আমদানি নির্ভর। তবে বাংলাদেশে ছোটদের জন্য খেলনা তৈরির মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রফতানি করা সম্ভব। এ জন্য বিভিন্ন ধরনের সাহায্য সহযোগিতা প্রয়োজন। খেলনা প্রস্তুতকারী দেশীয় বিভিন্ন কারখানা এবং প্রতিষ্ঠানকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা এবং পৃষ্ঠপোষকতা করা হলে এই শিল্প দ্রুত বিকশিত হয়ে বিরাট অবদান রাখতে পারে দেশীয় অর্থনীতিতে।
বর্তমানে চীন থেকে আমদানিকৃত খেলনার সমমানের অনেক খেলনা আমাদের দেশেই তৈরি হচ্ছে। খেলনা তৈরির কাজটি মূলত ক্ষুুদ্র ও কুটির শিল্পের অন্তর্ভুক্ত। বিভিন্ন ব্যাংক এসএমই ঋণের আওতায় খেলনা তৈরির কাজে নিয়মিত উদ্যোক্তাদের সহজশর্তে মূলধন যোগান দিতে পারে। কারণ অনেক উদ্যোক্তা পর্যাপ্ত পুঁজির অভাবে দারুণ সম্ভাবনাময় এই শিল্পটিকে এগিয়ে নিতে পারছেন না। পুঁজির যোগান পেলে খেলনা শিল্প চাঙা হয়ে উঠতে পারে খুব দ্রুতই। |