বিদ্যমান উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে আরো একটি নতুন ইউনিট স্থাপন করবে এমআই সিমেন্ট ফ্যাক্টরি লিমিটেড। এজন্য ৬০০ কোটি টাকা বিনিয়োগে মুন্সীগঞ্জের পশ্চিম মুক্তারপুরের বর্তমান কারখানা প্রাঙ্গণে ষষ্ঠ ইউনিট স্থাপন করা হবে। নতুন এ ইউনিটে উৎপাদন শুরু হবে ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে। সম্প্রতি কোম্পানিটির পর্ষদ সভায় এ পরিকল্পনা অনুমোদন করা হয়েছে।
পরিকল্পনা অনুসারে, নতুন ইউনিটটি চালু হলে এমআই সিমেন্টের বিদ্যমান দৈনিক উৎপাদন সক্ষমতা ১১ হাজার টনের সঙ্গে আরো ৮ হাজার ৪০০ টন যোগ হয়ে মোট সক্ষমতা ১৯ হাজার ৪০০ টনে উন্নীত হবে। সিভিল কনস্ট্রাকশনসহ যন্ত্রপাতি স্থাপনে ৬০০ কোটি টাকা ব্যয় হবে।
নতুন ইউনিট স্থাপনে প্রয়োজনীয় অর্থসংস্থানের বিষয়ে জানতে চাইলে এমআই সিমেন্টের জ্যেষ্ঠ মহাব্যবস্থাপক ও কোম্পানি সচিব মো. মজহারুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, নতুন ইউনিটটি স্থাপনে যে অর্থ ব্যয় হবে এর সিংহভাগই আসবে এক্সপোর্ট ক্রেডিট এজেন্সির (ইসিএ) মাধ্যমে। তাছাড়া নিজস্ব তহবিল থেকে অর্থায়নের পাশাপাশি স্থানীয় ব্যাংক থেকেও ঋণ নেয়া হবে। তবে প্রকল্পে অর্থায়নের বিষয়টি এখনো পর্যন্ত চূড়ান্ত করা হয়নি বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, ১৯৯৪ সালে দৈনিক ৬০০ টন পোর্টল্যান্ড সিমেন্ট উৎপাদনের সক্ষমতা নিয়ে যাত্রা হয় এমআই সিমেন্ট লিমিটেডের। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে চাহিদা বাড়ায় পরবর্তী সময়ে ২০০২ সালে দৈনিক ৮০০ টন উৎপাদন সক্ষমতার দ্বিতীয় ইউনিট, ২০০৮ সালে ১ হাজার ৪০০ টন উৎপাদন সক্ষমতার তৃতীয় ইউনিট, ২০১১ সালে দৈনিক ৩ হাজার টন উৎপাদন সক্ষমতার চতুর্থ ইউনিট এবং সর্বশেষ ২০১৭ সালে দৈনিক ৫ হাজার ২০০ টন উৎপাদন সক্ষমতার পঞ্চম ইউনিট চালু করে কোম্পানিটি। বর্তমানে কোম্পানির পাঁচটি ইউনিটের মোট দৈনিক উৎপাদন সক্ষমতা ১১ হাজার টন, বার্ষিক হিসাবে যা ৩৩ লাখ টন।
এমআই সিমেন্টের গত পাঁচ বছরের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, বিক্রি ও মুনাফায় ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধিতে রয়েছে কোম্পানিটি। এর মধ্যে ২০১৩-১৪ হিসাব বছরে ৭৯৯ কোটি, ২০১৪-১৫ হিসাব বছরে ৮২৬ কোটি, ২০১৫-১৬ হিসাব বছরে ৯০১ কোটি, ২০১৬-১৭ হিসাব বছরে ৯৪৪ কোটি এবং সর্বশেষ ২০১৭-১৮ হিসাব বছরে ১ হাজার ২৫৫ কোটি টাকার সিমেন্ট বিক্রি হয়েছে। এদিকে, বিক্রির বিপরীতে ২০১৩-১৪ হিসাব বছরে ৬৭ কোটি, ২০১৪-১৫ হিসাব বছরে ৬৪ কোটি, ২০১৫-১৬ হিসাব বছরে ৭৪ কোটি, ২০১৬-১৭ হিসাব বছরে ৬৬ কোটি এবং সর্বশেষ ২০১৭-১৮ হিসাব বছরে ৩১ কোটি টাকা করপরবর্তী মুনাফা হয়েছে কোম্পানিটির। কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি প্যাকেজিং, বিদ্যুৎ, জ্বালানিসহ আনুষঙ্গিক অন্যান্য ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কারণে সর্বশেষ দুই হিসাব বছরে কোম্পানিটির মুনাফা কমেছে।
৩০ জুন ২০১৮ সমাপ্ত হিসাব বছরে শেয়ারহোল্ডারদের ১৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে এমআই সিমেন্ট। আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ২ টাকা ১৩ পয়সা ও শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছে ৪৭ টাকা ৯৮ পয়সা। এর আগে ২০১৬-১৭ হিসাব বছরে শেয়ারহোল্ডারদের ২০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল কোম্পানিটি। সে সময় এর ইপিএস ছিল ৪ টাকা ৪৫ পয়সা।
চলতি ২০১৮-১৯ হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ৪৭ পয়সা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৪৭ পয়সা। ৩১ মার্চ কোম্পানির এনএভিপিএস দাঁড়ায় ৪৮ টাকা ৪৬ পয়সা।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) কোম্পানিটির শেয়ার সর্বশেষ ৭৩ টাকায় লেনদেন হয়েছে। গত এক বছরে এ শেয়ারের সর্বোচ্চ দর ছিল ৮৭ টাকা ৫০ পয়সা এবং সর্বনিম্ন ৬৫ টাকা।
প্রসঙ্গত, ২০১১ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এমআই সিমেন্ট স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি ভারতেও সিমেন্ট রফতানি করছে। বর্তমানে এর অনুমোদিত মূলধন ৫০০ কোটি ও পরিশোধিত মূলধন ১৪৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা। রিজার্ভ ২৬৮ কোটি ২৭ লাখ টাকা। মোট শেয়ারের ৬৭ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকদের কাছে, প্রতিষ্ঠান ১৭ দশমিক ২৫, বিদেশী দশমিক ৩১ এবং বাকি ১৫ দশমিক ৩৬ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে।
সর্বশেষ বার্ষিক ইপিএস ও বাজারদরের ভিত্তিতে এ শেয়ারের মূল্য-আয় (পিই) অনুপাত ৩৩ দশমিক ৯৯, হালনাগাদ অনিরীক্ষিত মুনাফার ভিত্তিতে যা ৩৮ দশমিক ৫১।