[ পাতা ১১ ] 2019-01-19
 
সক্ষমতা বাড়ছে মোংলা বন্দরের
 
দেশের দ্বিতীয় সমুদ্রবন্দর মোংলার উন্নয়নে ১০টি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে সাতটি প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। এর সঙ্গে বন্দর থেকে রাজস্ব আহরণে ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি বাড়ছে বিদেশী জাহাজের আগমন ও কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের পরিমাণ।

সংশ্লিষ্ট সূত্র অনুযায়ী, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে মোংলা বন্দরে রাজস্ব আহরণে প্রবৃদ্ধি ছিল ১৫ শতাংশ। গত অর্থবছরে (২০১৭-১৮) এ হার বেড়ে প্রায় ৫০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া এক বছরের ব্যবধানে বন্দরে কনটেইনারবাহী জাহাজ আগমনের সংখ্যা বেড়েছে আড়াই গুণ।

বন্দরের উন্নয়নে গৃহীত নতুন ১০ প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে পশুর চ্যানেলের রামপাল পর্যন্ত ড্রেজিং, রুজভেল্ট জেটির অবকাঠামোগত উন্নয়ন, ভেসেল ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম (ভিটিএম আইএস), আউটার বারে ড্রেজিং, টাগবোট সংগ্রহ, সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট, মোবাইল হারবার ক্রেন সংগ্রহ, স্ট্র্যাটেজিক মাস্টারপ্ল্যান, হারবার চ্যানেলের ফুড সাইলো এলাকায় ড্রেজিং ও দুটি অসম্পূর্ণ জেটি নির্মাণ। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের ফলে অভ্যন্তরীণ জাহাজ চলাচল নির্বিঘ্ন হবে, রুজভেল্ট জেটির সক্ষমতা বাড়বে, আগত ও বহির্গামী জাহাজের নিরাপদ পাইলটিং ও দক্ষ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত হবে, বন্দর চ্যানেলে ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ প্রবেশ করতে পারবে, দ্রুত সময়ের মধ্যে পণ্য বোঝাই ও খালাস সম্পন্ন করা যাবে, জাহাজে সুপেয় পানির চাহিদা মেটানো যাবে, একটি হালনাগাদ মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করা যাবে, জাহাজের আগমন ও নির্গমনের পথ সুগম করা যাবে। সর্বোপরি প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে বন্দরের সক্ষমতা অনেকাংশে বেড়ে যাবে।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রধান অর্থ ও হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. সিদ্দিকুর রহমান জানান, ২০১২-১৩ অর্থবছরে বন্দরে বিদেশী জাহাজ এসেছিল ২৮২টি। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৬২৩। একই সঙ্গে বন্দরে রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি পায় ২২৬ কোটি টাকা। গত অর্থবছরে বন্দরে জাহাজ এসেছে ৭৮৪টি। এ সময়ে কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে ৯৭ লাখ ১৬ হাজার টন। রাজস্ব আহরণ হয় ২৭৬ কোটি ১৪ লাখ টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বন্দরের নিট মুনাফা ছিল সাড়ে ৭১ কোটি টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এর পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ১০৯ কোটি টাকা।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমডোর একেএম ফারুক হাসান বলেন, আমদানি-রফতানিতে আশার সঞ্চার করলেও মোংলা বন্দরে এখনো কিছু সমস্যা রয়ে গেছে। চট্টগ্রাম বন্দরের তুলনায় এ পথে কনটেইনার পরিবহনে খরচ বেশি। এছাড়া নাব্য সংকটের কারণে আশানুরূপ পরিমাণে জাহাজ ভিড়তে পারে না। এসব সমস্যা সমাধানে ১০টি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সাতটি প্রকল্পের কাজ চলমান। জটিলতা দূর হলে বন্দরে আমদানি-রফতানি আরো বাড়বে। তিনি জানান, বন্দরের উন্নয়নে ভারত ও চীনের অর্থায়নে একাধিক প্রকল্প চলমান। প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন শেষ হলে বন্দর গতিশীল হবে। সরকার সার্বিক বিষয় নিয়মিত মনিটরিং করছে বলে জানান তিনি।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, একসময়ের লোকসানি প্রতিষ্ঠানটি ২০০৯ সালের পর থেকে ধীরে ধীরে লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। বর্তমানে এ বন্দরে ছয়টি নিজস্ব জেটি, সাতটি ব্যক্তিমালিকানাধীন জেটি ও ২২টি অ্যাংকরেজের মাধ্যমে ৩৫টি জাহাজ একসঙ্গে হ্যান্ডলিং করা সম্ভব। চারটি ট্রানজিট শেড, দুটি ওয়্যারহাউজ, চারটি কনটেইনার ইয়ার্ড, দুটি পার্কিং ইয়ার্ডের মাধ্যমে মোংলা বন্দরে বছরে ১ কোটি টন, ৭০ হাজার টিইইউ কনটেইনার ও ২০ হাজারের বেশি গাড়ি হ্যান্ডলিংয়ের সক্ষমতা রয়েছে।

মোংলা কাস্টমস ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরোয়ার্ডিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. সুলতান হোসেন খান বলেন, পারস্পরিক সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে বিদ্যমান সমস্যা ও সংকটগুলো সমাধান করা গেলে মোংলা বন্দরের অপার সম্ভাবনা কাজে লাগানো যাবে। এর ফলে বন্দরে আমদানি-রফতানি বাড়বে এবং দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটবে।

বন্দরের স্টিভেডর কোম্পানি রহমান এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. মশিউর রহমান বলেন, মোংলা বন্দর ব্যবহারকারীদের কাজের পরিধি বেড়েছে। শ্রমিকদের কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা হয়েছে। মোংলা বন্দরে অন্যান্য বছরের তুলনায় রেকর্ড পরিমাণ জাহাজ আসছে। আমরা চাই, এ ধারাবাহিকতা যেন অব্যাহত থাকে।

১৯৫০ সালের ১ ডিসেম্বর মোংলা বন্দরের যাত্রা হয়। প্রথমে খুলনার চালনা থেকে ১৮ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে বন্দরটি গড়ে ওঠে। কিন্তু সমুদ্রগামী জাহাজ নোঙরের ক্ষেত্রে অধিক সুবিধাজনক অবস্থান হওয়ায় ১৯৫৪ সালে বন্দরটি মোংলায় স্থানান্তর করা হয়।

বন্দর কর্তৃপক্ষের সূত্র অনুযায়ী, বর্তমানে মোংলা বন্দর দিয়ে পাট ও পাটজাত দ্রব্য, চিংড়ি, ক্লে টাইলস, চামড়াসহ অন্যান্য সাধারণ পণ্য রফতানি হচ্ছে। আর আমদানি হচ্ছে খাদ্যশস্য, সার, ক্লিংকার, মেশিনারি, রিকন্ডিশনড গাড়ি, এলপি গ্যাস, কয়লা, লাইমস্টোন, পাম অয়েল, কাঠের লগ, পাথর ইত্যাদি।
Print Close  
Print Close  
News Source
            Top
            Top
 
Home / About Us / Benifits /Invite a Friend / Policy
Copyright © Hawker 2009-2010, Allright Reserved