[ পাতা ১২ ] 2019-04-19
 
ভ্যাট আইনের সম্ভাব্য প্রভাব যাচাই করছে এনবিআর
 
আবু কাওসার:

নতুন মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) আইন বাস্তবায়ন হলে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, জনজীবন ও রাজস্ব আয়ে কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে, তা পর্যালোচনা করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। রাজস্ব বোর্ডের ভ্যাটনীতি বিভাগের কর্মকর্তারা এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছেন। পর্যালোচনা শেষে সম্ভাব্য প্রভাবের বিষয়গুলো নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এতে নতুন আইনের নেতিবাচক ও ইতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরা হবে। যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্বব্যাংকের বসন্তকালীন সভা থেকে দেশে ফিরলে প্রতিবেদনটি অর্থমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করবে এনবিআর। ২০ এপ্রিল দেশে ফেরার কথা অর্থমন্ত্রীর। 

দুই বছর স্থগিত থাকার পর আগামী ১ জুলাই থেকে বহুল আলোচিত নতুন ভ্যাট আইনটি বাস্তবায়ন হওয়ার কথা। অর্থমন্ত্রী ও এনবিআর চেয়ারম্যান একাধিক প্রাক-বাজেট আলোচনায় জোর দিয়ে বলেছেন, নির্ধারিত তারিখেই নতুন আইনটি কার্যকর করা হবে। যদিও ভ্যাটের হার নির্ধারণ নিয়ে চূড়ান্ত ফয়সালা হয়নি। কারণ, এফবিসিসিআইসহ ব্যবসায়ী মহল থেকে নতুন রেটের বিষয়ে চূড়ান্ত মতামত পাওয়া যায়নি। 

এর মধ্যে সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল এনবিআর চেয়ারম্যানসহ সিনিয়র সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করে। ওই বৈঠকে নতুন আইনটি কার্যকরের আগে অর্থনীতিতে এর প্রভাব সম্পর্কে বস্তুনিষ্ঠ একটি সম্ভাব্য মূল্যায়নের তাগিদ দেওয়া হয়। এ ছাড়া শীর্ষ ব্যবসায়ী, অর্থনীতিবিদসহ ভ্যাট বিশেষজ্ঞরা এ আইনের প্রভাব নিয়ে গভীর মূল্যায়নের পরামর্শ দিয়ে আসছেন বহু আগে থেকেই। 

এনবিআরের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, নতুন আইনে একাধিক হারের বিষয়ে অর্থমন্ত্রী ইতিমধ্যে ঘোষণা করেছেন। ওইসব হার কার্যকর হলে কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে সে বিষয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দেশে ফিরলে বিষয়টি অবহিত করা হবে অর্থমন্ত্রীকে। তার সিদ্ধান্তের ওপর কোন খাতে কত রেট হবে তা চূড়ান্ত করা হবে। নতুন ভ্যাট আইনে তিনস্তরে ভ্যাট আদায়ের কথা বলেন অর্থমন্ত্রী। এ গুলো হলো- ৫, সাড়ে ৭ এবং ১০ শতাংশ আগে যা একক হার ১৫ শতাংশ ছিল।

এনবিআর সূত্র বলেছে, প্রস্তাবিত তিনটি নতুন রেট কার্যকর হলে রাজস্ব আয়ে বিরূপ প্রভাব পড়বে। বিশেষ করে এসএমই শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া স্থানীয় পর্যায়ে রড, ইট, ওষুধসহ অনেক পণ্যের দাম বাড়বে। একই সঙ্গে হোটেল-রেস্টুরেন্টের খাবারের দামে প্রভাব পড়তে পারে। এ ছাড়া দেশীয় শিল্পের সুরক্ষা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। ভ্যাট বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, এ বিষয়গুলো তুলে ধরা হবে এবং রাজস্ব যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে বিষয়ে যৌক্তিক হার অর্থমন্ত্রীর সামনে তুলে ধরা হবে। 

এনবিআর সূত্র বলেছে, নতুন আইনে ভ্যাটের হার সর্বনিম্ন ১০ শতাংশ নির্ধারণ করা হলে বছরে রাজস্ব আয় কমবে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া সবার জন্য রেয়াত সুবিধা নিশ্চিত করা না হলে নতুন আইন কার্যকর তেমন সুফল বয়ে আনবে না। এসব বিষয় তুলে ধরার চেষ্টা করা হবে পর্যালোচনা প্রতিবেদনে। একজন ভ্যাট কমিশনার সমকালকে বলেন, নতুন আইনে যেসব পরিবর্তনের কথা শোনা যাচ্ছে, তা কার্যকর হলে খুব একটা ভালো হবে না। এর চেয়ে বিদ্যমান ১৯৯১ সালের আইন আধুনিকায়ন করে তা সংশোধন করাই হবে উত্তম পন্থা। 

এদিকে, অর্থমন্ত্রীর দেওয়া নতুন হারগুলোর বিষয়ে পর্যালোচনা করছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। এ ছাড়া নতুন আইন নিয়ে এনবিআর গঠিত কমিটির প্রতিবেদনের বিষয়ে মতামত দেবে তারা। সংগঠনের সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, নতুন ভ্যাট আইন নিয়ে পর্যালোচনা করা হচ্ছে। শিগগির এ বিষয়ে ব্যবসায়ীদের মতামত সরকারকে জানিয়ে দেওয়া হবে। 

এনবিআরের সাবেক সদস্য ফরিদ উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির সংবেদনশীলতা খুব বেশি। যে কোনো সময় যে কোনো খাতের ভিন্নতর সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। ফলে নতুন আইনটি কার্যকরের বিষয়ে আরও নমনীয় হতে হবে। তিনি আরও বলেন, অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত না করে এ আইনটি বাস্তবায়ন করা ঠিক হবে না। কিন্তু এখন পর্যন্ত যে অবস্থা তাতে উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হয়েছে বলে মনে হয় না।
Print Close  
Print Close  
News Source
            Top
            Top
 
Home / About Us / Benifits /Invite a Friend / Policy
Copyright © Hawker 2009-2010, Allright Reserved