[ পাতা ৪ ] 2019-04-19
 
বন্ধ হয়ে গেল ভারতের জেট এয়ারওয়েজ
 
বিপুল দেনা আর আর্থিক সংকটে কয়েক মাস যাবৎই ক্রমান্বয়ে নিজেদের গুটিয়ে নিচ্ছিল ভারতের সাশ্রয়ী বিমান সংস্থা জেট এয়ারওয়েজ। অবশেষে গত বুধবার সব ফ্লাইট বন্ধের ঘোষণা দিল ২৫ বছরের ঐতিহ্যবাহী বিমান সংস্থটি। বন্ধ ঘোষণার পরপরই গতকাল বৃহস্পতিবার শেয়ারবাজারে কম্পানির দর পড়েছে ৩২ শতাংশের বেশি।

মুম্বাইভিত্তিক বিমান পরিবহন কম্পানিটি ১০০ কোটি ডলারেরও বেশি দেনার দায়ে প্রায় দেউলিয়া। নতুন করে তহবিল দিতে অস্বীকার করে ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। এ অবস্থায় গত মঙ্গলবার প্রতিষ্ঠানটির বোর্ড সভায় জেট এয়ারওয়েজের সব ফ্লাইট বন্ধ রাখার পরামর্শ দিয়েছিলেন পরিচালকরা। অবশেষে গত বুধবার অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক সব ফ্লাইট সাময়িক বন্ধের ঘোষণা দেয় সংস্থটি। মার্কেট শেয়ার ও যাত্রী পরিবহনের দিক থেকে ভারতের দ্বিতীয় বৃহৎ বিমান সংস্থা জেট এয়ারওয়েজ।

গতকাল মুম্বাই স্টক এক্সচেঞ্জে জেটের শেয়ারের দাম ৩২ শতাংশের বেশি কমে হয়েছে ১৬২.১৫ রুপি।

অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর জোট এসবিআই জানিয়েছে, নতুন কোনো তহবিল নয়, বরং তারা জেট এয়ারওয়েজের জন্য ক্রেতা খুঁজছে। এ জোটের নেতৃত্বে রয়েছে স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে সম্ভাব্য চার ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের তালিকাও করা হয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম ইত্তেহাদ এয়ারওয়েজ। এ প্রতিষ্ঠানটির হাতে এরই মধ্যে ২৪ শতাংশ শেয়ার রয়েছে জেট এয়ারওয়েজের। আগামী ১০ মের ভেতরে প্রতিষ্ঠানগুলোকে আনুষ্ঠানিকভাবে দরপত্র দাখিল করতে হবে। তত দিন সব ফ্লাইট বন্ধ থাকবে। জেট এয়ারওয়েজের সর্বশেষ ফ্লাইটটি ছিল গতকাল বৃহস্পতিবার অমৃতসর থেকে মুম্বাই। কম্পানিটি বন্ধ ঘোষণার ফলে ২০ হাজারের বেশি কর্মী চাকরি হারাবে।

বন্ধ ঘোষণার পরপরই কয়েক হাজার কর্মী মুম্বাইতে বিমান সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয়ে স্লোগান দিতে থাকে— ‘আমরা ন্যায়বিচার চাই’, ‘দয়া করে জেট এয়ারওয়েজকে রক্ষা করুন’। সারভেশ নামের এক কর্মী বলেন, ‘কম্পানির ম্যানেজমেন্ট কী করছে, আর সরকারও কিছু করছে না কেন আমাদের চাকরি রক্ষার জন্য? এখানে অনেকেই ২০ বছর যাবৎ এ প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছে, এখন তারা কোথায় যাবে, তাদের পরিবার কী করবে?’

কয়েক মাস ধরেই জেট এয়ারওয়েজ ঋণের কিস্তি শোধ করতে পারছিল না, সেই সঙ্গে কর্মীদের বেতনও বকেয়া পড়েছিল। বেতনের দাবিতে বৈমানিক ও কর্মীরা ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত নিয়ে পরে প্রত্যাহার করে। ক্রমান্বয়ে ফ্লাইট বাতিল করতে থাকে প্রতিষ্ঠানটি। আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বাতিলের পর অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটও কমিয়ে আনা হয়। বন্ধের আগের দিন পর্যন্ত মাত্র পাঁচটি বিমান উড্ডয়নে ছিল। যেখানে গত বছরও বিমান ছিল ১২০টি।

বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, মন্দ বিনিয়োগ, কম খরচের কিছু বিমান সংস্থার প্রতিযোগিতা, জ্বালানির উচ্চমূল্য এবং রুপি দুর্বল হওয়ায় ক্রমান্বয়ে আর্থিক সংকট বেড়ে যায় জেট এয়ারওয়েজের। এ সংকটের জেরে সম্প্রতি সংস্থার চেয়ারম্যান পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন প্রতিষ্ঠাতা নরেশ গয়াল। বোর্ড থেকে পদত্যাগ করেছেন তাঁর স্ত্রী অনীতাও।

রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থা এয়ার ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান আশওয়ানি লোহানি বলেন, জেট এয়ারওয়েজের বন্ধ হয়ে যাওয়া ভারতের বিমানশিল্পের জন্য একটি বড় আঘাত।

প্রতিষ্ঠানটির এই পতনকে কিংফিশার এয়ারলাইনসের সঙ্গে তুলনা করা হয়। যেটি আর্থিক সংকটের কারণে ২০১২ সালে বন্ধ হয়ে যায়। এতে কয়েক হাজার কর্মী চাকরি হারায়।

এদিকে প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে জেট এয়ারওয়েজের সিইও বিনয় ডাব স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে সব ফ্লাইট সাময়িক বন্ধ করার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে যাত্রীর উদ্দেশে বলা হয়, বিমানের ফ্লাইট চলাচলের জন্য তহবিলের প্রয়োজন ছিল, কিন্তু গত রাতে আমরা অবগত হই জেটকে নতুন করে আর ঋণ দেওয়া হবে না। যেহেতু ফ্লাইট পরিচালনা অব্যাহত রাখার জন্য জরুরি ভিত্তিতে আমরা কোনো তহবিল পাচ্ছি না, অন্য কোনো উৎস থেকেও পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। এ অবস্থায় জ্বালানি খরচ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় ব্যয় বহন করে ফ্লাইট পরিচালনা অব্যাহত রাখা আমাদের পক্ষে সম্ভব ছিল না। ফলে আমাদের সব ফ্লাইট বাতিল করতে বাধ্য হয়েছি।
Print Close  
Print Close  
News Source
            Top
            Top
 
Home / About Us / Benifits /Invite a Friend / Policy
Copyright © Hawker 2009-2010, Allright Reserved