[ পাতা ১৫ ] 2019-04-19
 
উন্নয়নের ধারায় বাংলাদেশের যত চ্যালেঞ্জ
 
ড. এ কে আব্দুল মোমেন:

উন্নত বিশ্বে যখন অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেয়, বিভিন্ন দেশের বার্ষিক জিডিপির হার ‘স্থবির’ বা নেতিবাচক হয়, তখন বাংলাদেশের জিডিপির গড় হার সাতেরও বেশি থাকে। গেল অর্থবছর শেষে যা দাঁড়িয়েছে ৭.৮৬ শতাংশে। আর চলতি অর্থবছর শেষে যার প্রক্ষেপণ করা হয়েছে ৮.১৩ শতাংশ। এর সাফল্য নিঃসন্দেহে বর্তমান সরকারের। গত আট বছর ধরে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির গড় হার ৬.৫ শতাংশের বেশি হচ্ছে।

একসময় উত্তরবঙ্গে ‘মঙ্গার’ করাল গ্রাসে দরিদ্র জনগণ হিমশিম খেত, আজ ‘মঙ্গা’ অনুপস্থিত। বাংলাদেশের সাফল্য খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন। শুধু চালের ক্ষেত্রে নয়, মাছ ও শাকসবজির ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ এখন শীর্ষ উৎপাদক দেশগুলোর একটি। বিদ্যুৎ বিভ্রাট এবং লোডশেডিংয়ের জাঁতাকলে মানুষ আর পিষ্ট নয়, ৯০ শতাংশেরও বেশি মানুষ বিদ্যুেসবার আওতায় এসেছে।

শিশুমৃত্যু, মাতৃমৃত্যু এবং মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট লক্ষ্যগুলো অর্জনসহ দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশ বিশ্বের আদর্শ মডেল। বাংলাদেশ সৃষ্টির পর ১৯৭২ সালে দারিদ্র্যের হার ছিল ৮২ শতাংশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার গেল ১০ বছরে দারিদ্র্যের হার ২১.৮ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। প্রতিবছর গড় অনুপাতে দারিদ্র্যের হার কমেছে ২.২ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যুরো অব স্ট্যাটিসটিকসের (বিবিএস) হিসাবে, বর্তমানে আমাদের মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৭৫১ ডলারে। বছর শেষে এটি দাঁড়াবে এক হাজার ৯০৯ ডলারে। তবে উচ্চমধ্যম আয়ের দেশ হতে গেলে আমাদের হাঁটতে হবে আরো অনেক। কেননা উচ্চমধ্যম আয়ের দেশের মাথাপিছু আয় চার হাজার ১২৬ থেকে ১২ হাজার ৭৩৫ ডলার অর্জন করতে হবে। বর্তমানে সার্ক অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ ছাড়াও ভুটান, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও ভারত নিম্নমধ্যম আয়ের দেশের তালিকায় রয়েছে। আর দরিদ্র দেশের তালিকায় রয়েছে আফগানিস্তান ও নেপাল; যাদের মাথাপিছু আয় এক হাজার ৪৫ ডলারের কম। মালদ্বীপ রয়েছে উচ্চমধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে। যাদের মাথাপিছু আয় চার হাজার ১২৬ থেকে ১২ হাজার ৭৩৫ ডলারের মধ্যে।

প্রতিবেশী ভারতের মাথাপিছু আয়ও আমাদের চেয়ে বেশি। শিল্পায়ন, অবকাঠামো উন্নয়নসহ নানা ক্ষেত্রে ভালো করলেও তারা দারিদ্র্য নিরসনের ক্ষেত্রে আমাদের মতো সক্ষমতা অর্জন করতে পারেনি। অনেক দেশের ক্ষেত্রেই দেখেছি, জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার যখন বেড়েছে, অথবা শিল্পায়নে অগ্রগতি আকাশচুম্বী; তখন তাদের ধনী-দরিদ্রের পার্থক্যও বেড়েছে বহুগুণ। বাংলাদেশে উন্নয়ন হচ্ছে সমানতালে, সুষমভাবে। আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলো যেমন—ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, মালদ্বীপ, থাইল্যান্ড, এমনকি গণচীন, মালয়েশিয়া, কম্বোডিয়া, ফিলিপাইন, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য থেকে আমাদের ধনী-দরিদ্রের ফারাক বা জিনি কোফিসিয়েন্ট কম। আমাদের উন্নয়ন মানবিক। বয়স্কভাতা, মুক্তিযোদ্ধাভাতা, একটি খামার একটি পরিবারসহ বহুবিধ ও বহুরৈখিক সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ফলেই এই সফলতা আনা সম্ভব হয়েছে।

অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ ঘটেছে। জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন নীতিসংক্রান্ত কমিটি (সিডিপি) ২০১৮ সালের ১৫ মার্চ এলডিসি থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের যোগ্যতা অর্জনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়। পৃথিবীর ৪৮টি এলডিসি রাষ্ট্রের মধ্যে মাত্র কয়েকটি দেশ তা অর্জন করতে পেরেছে। তার মধ্যে বাংলাদেশ যদিও একটি ঘনবসতিপূর্ণ দেশ, যেখানে প্রাকৃতিক সম্পদের অভাব এবং যেখানে জলবায়ুর করাল গ্রাসের হাতছানি দেশকে যেকোনো সময় ভয়ংকর অবস্থায় ফেলতে পারে। এমন চরম ঝুঁকি সত্ত্বেও বাংলাদেশ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রগতির সূচক অর্জন করেছে। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে একে ‘উন্নয়নের মডেল’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। বিশ্বের অনেক দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরাও বাংলাদেশের অর্থনীতির এই অগ্রযাত্রাকে ‘স্টার অব ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। নিউ ইয়র্কের ‘ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’ একে ‘Standard bearer of South Asia’ বলেছে। নিউ ইয়র্ক টাইমসের ‘Success in a land known for Disasters’ শিরোনামের প্রবন্ধে বলা হয়, মহিলাদের উন্নয়নে এ দেশ যা করেছে, তা অন্য মুসলমান দেশের জন্য অকল্পনীয়, অবিশ্বাস্য। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে বিশ্বের প্রায় ১৬টি এলডিসি দেশে দারিদ্র্যের হার বেড়েছে, তা আর কমেনি।

বহুমাত্রিক উন্নয়নের ফলে আমাদের স্বপ্নটা বড় হয়েছে। উন্নয়নের এই স্রোতে বেসরকারি উদ্যোক্তা ও ব্যক্তিপ্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণও শ্রদ্ধার সঙ্গে উল্লেখ করতে চাই। কৃষক, শ্রমিক, মজুর, জেলেসহ সব ধরনের পেশাজীবীর অবদানে আমাদের অর্থনীতি বড় হচ্ছে। আশির দশক থেকে আমাদের তৈরি পোশাক খাত এককভাবে এখনো রপ্তানি আয়ে শীর্ষ ভূমিকা ধরে রেখেছে। এক কোটিরও বেশি বাংলাদেশি দেশের বাইরে থেকে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছে। তাদের হাত ধরে আসছে বিদেশি বিনিয়োগও। আবার অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের পরিসরও বাড়ছে। ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ, ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য, আর ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত, সমৃদ্ধিশালী, শান্তিময় দেশ হিসেবে গড়ে তোলার সাহস জেগেছে চলমান উন্নয়ন কর্মকাণ্ড থেকেই। ২০৪১ সালের সোনার বাংলাই হবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের বাংলাদেশ। যার বাস্তবায়ন হচ্ছে তাঁরই কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে।

তবে লক্ষ্য অর্জনে চ্যালেঞ্জও রয়েছে খানিকটা।

১. চলমান উন্নয়ন স্রোতকে ধরে রাখতে বা আরো এগিয়ে নিতে বিপুল ‘দৃশ্যমান’ ও ‘অদৃশ্যমান’ অবকাঠামো উন্নয়ন করতে হবে। দৃশ্যমান অবকাঠামোর মধ্যে রয়েছে উন্নত রাস্তাঘাট-মহাসড়ক, উন্নত রেল ও বিমান, নদীপথের যোগাযোগ, উন্নত সমুদ্রবন্দর, বিমানবন্দর, যথেষ্ট জ্বালানি ও ইলেক্ট্রিসিটি সরবরাহ, ডিজিটালাইজেশন ইত্যাদি। চলতি অর্থবছরের এডিপিতে এই লক্ষ্য অর্জনে দেড় হাজারেরও বেশি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। তবে জলবায়ুর পরিবর্তন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য কিংবা উন্নত দেশ গড়ার যাত্রায় আরো বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন। আবার সামাজিক রীতি-নীতি, মানবিক মূল্যবোধ, রাষ্ট্রীয় আইন-কানুন, আমলাতান্ত্রিক পদ্ধতি ও জটিলতা, লাল ফিতার দৌরাত্ম্যর মতো বিষয়গুলো রয়েছে অদৃশ্যমান অবকাঠামোর তালিকায়। একটি দেশের শুধু দৃশ্যমান অবকাঠামোই সুষ্ঠু অর্থনীতি নিশ্চিত করে না, বরং এই অদৃশ্যের অনুষঙ্গগুলোও উন্নয়নের স্থায়িত্ব নির্দেশ করে। এ জন্য মানুষের মানবিক মূল্যবোধের উন্নয়নও জরুরি, যা কিছুটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপারও বটে। এগুলোর উন্নয়ন হুকুম দিলেই হবে না—সেবা দাতা ও গ্রহীতা উভয় শ্রেণিরই ঐকান্তিক মনমানসিকতা ও আন্তরিকতা প্রয়োজন। তবেই সেবাবান্ধব, ব্যবসাবান্ধব, জনমতবান্ধব ও উন্নয়নের সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করা সম্ভব।

সরকারের বহু সুন্দর সুন্দর লক্ষ্যের বাস্তবায়ন কখনো কখনো নানা কারণে খানিকটা বাড়তি সময় নিয়ে নিচ্ছে। কয়েক দিন আগে বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ-আইএমইডির তথ্য দিয়ে সংবাদ পরিবেশন করেছে একটি জাতীয় দৈনিক। এতে বলা হয়েছে, গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৯০টি উন্নয়ন প্রকল্পে এক টাকাও খরচ করা সম্ভব হয়নি। কোনো কাজ বা ভৌত অগ্রগতি হয়নি এমন প্রকল্পের সংখ্যা ৯৮টি। আইএমইডির নিজস্ব এক প্রতিবেদনে এর কারণ তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে, ৯০টি প্রকল্পে অর্থ ব্যয় না হওয়ার কারণের মধ্যে রয়েছে দরপত্র আহ্বানে বিলম্ব, দরপত্র কার্যকর না হওয়া ও প্রকল্পে ঋণ না পাওয়ার মতো বিষয়গুলো। আবার অর্থছাড় না হওয়া বা দেরিতে অর্থছাড়, ভূমি অধিগ্রহণ না হওয়া, মামলাজনিত সমস্যা, প্রকল্প প্রস্তাব সংশোধন, সংশোধিত প্রকল্প প্রস্তাব অনুমোদনে বিলম্ব, দাতা সংস্থার সঙ্গে ঋণ চুক্তিতে বিলম্ব, নামমাত্র বরাদ্দ পাওয়াসহ বিভিন্ন কারণ উল্লেখ করা রয়েছে। শূন্য অগ্রগতির এসব প্রকল্পে গত অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ ছিল ৯১৬ কোটি টাকা। দেশের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের মাঝপথে এ অবস্থা কারো জন্য সুখবর বয়ে আনে না। ব্যয় বাড়ে, প্রকল্প চলাকালীন জনগণের ভোগান্তি বাড়ে।

আবার সাধারণ মানুষের সঙ্গে নিত্যদিনের কাজকর্মে জড়িত জমি রেজিস্ট্রেশন আরেকটি ব্যাপার। এক শ্রেণির অসৎ কর্মকর্তার কারণে জমি রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে পুকুরচুরি যেমন চলছে, তেমনি একই সময়ে বাড়ছে মানুষের হয়রানিও। মানুষের হয়রানি কমানোর জন্য রেজিস্ট্রেশনের সরকারি ফি সোনালী ব্যাংকসহ অন্যান্য সরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে আদায় করা যায়। এটি নিশ্চিত করা গেলে প্রতিবছর সরকারের আরো অন্তত সাত হাজার কোটি টাকা বাড়তি আয় সম্ভব হবে। মানুষের হয়রানিও কমবে।

২. উন্নত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ নিতান্ত প্রয়োজন। এগুলো উন্নত করতে সময় লাগবে। তা করতে সবাইকে অনেক খাটতে হবে। শিক্ষার গুণগত মান এবং উন্নত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত লোকের অভাব হলে আমাদের নানা ঝক্কি-ঝামেলা পোহাতে হবে। দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সাইবার সিকিউরিটিজনিত অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনা এ ক্ষেত্রের বড় উদাহরণ। দক্ষ জনবলের অভাবে উন্নয়নের মহাসড়কের যাত্রাপথে একের পর এক নিত্যনতুন সমস্যা দেখা দিতে পারে। সেগুলো সুকৌশলে সমাধানের জন্য উন্নত ও গুণগত শিক্ষা ও উন্নত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জনবলের বিকল্প নেই। যাদের মনমানসিকতা হবে জনগণের সেবাকে প্রাধান্য দেওয়ার মতো। দক্ষতার পাশাপাশি এমন মনমানসিকতার লোকজন তৈরিও বড় চ্যালেঞ্জ।

৩. সময়ের সঙ্গে আমাদের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। ৫৬ হাজার বর্গমাইলের প্রতিটি ইঞ্চিকে উন্নয়নের আওতায় নিয়ে আসার লক্ষ্যে কাজ চলছে। চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি-এডিপিতে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের সংখ্যা এক হাজার ৫০৭টি। এর মধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প রয়েছে এক হাজার ২৭২টি। দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য কারিগরিবিষয়ক প্রকল্পের সংখ্যা ১১৯টি। বিভিন্ন দেশের অর্থায়ন আর আমাদের স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার প্রকল্প রয়েছে আরো কিছু। নতুন আরো কিছু প্রকল্প গ্রহণের লক্ষ্যে পাইপলাইনে রয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন প্রকল্পগুলো যাচাই-বাছাই করে দেখছে। আবার উন্নয়নের কর্ণধার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও চলমান প্রকল্পগুলো দ্রুত ও মানসম্মতভাবে বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছেন। প্রয়োজনের আলোকে নতুন প্রকল্প গ্রহণের নির্দেশনাও রয়েছে তাঁর। নতুন প্রকল্প প্রণয়ন এবং যাচাই-বাছাইয়ে আরো মনোযোগী এবং দূরদর্শিতার পরিচয় দিলে প্রকল্প গ্রহণের যথার্থতা নিশ্চিত হবে।

৪. এখন বিস্তৃত এই উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ঠিকঠাক বাস্তবায়ন আর দেখভালের জন্য সারা দেশেই দক্ষ, অভিজ্ঞ আর সৎ লোক লাগবে। কেননা ভূমি অধিগ্রহণ, টেন্ডার জটিলতা, অর্থ বরাদ্দ, কাজের গতিসহ নানা বিষয় আসতে পারে। এগুলো তত্ত্বাবধানের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসনের তৎপরতাও বাড়ানো জরুরি। সময়ের প্রয়োজনেই এখন ডেভেলপমেন্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ স্ট্রাকচার প্রবর্তন করা প্রয়োজন। কেননা কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যস্ততা আগের চেয়ে বেড়ে গেছে বহুগুণ। তারা এখন শতবর্ষী পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে। তাদের রয়েছে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য, মধ্যম ও উচ্চ আয়ের দেশে রূপান্তরের লক্ষ্য অর্জনের ব্যস্ততা। আবার ইকোনমিক ডিপ্লোমেসির মাধ্যমে আমরা শতাধিক দেশেও বাংলাদেশের কর্মকাণ্ড ছড়িয়ে দিচ্ছি। এসব দেশে আমাদের প্রচলিত-অপ্রচলিত পণ্য রপ্তানি হবে। সেখানে যাবে আমাদের দক্ষ-অদক্ষ জনবল। এর মাধ্যমে রপ্তানি আয় বাড়বে, আসবে বিপুল পরিমাণ রেমিট্যান্স। আবার এসব দেশ থেকে আধুনিক যন্ত্রপাতিসহ বিনিয়োগ আসবে আমাদের দেশে। কাজেই কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যস্ততার পরিধি বেড়েছে বহুগুণ। এ কারণে স্থানীয় পর্যায়ে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে স্থানীয় সরকারকে আরো শক্তিশালী করতে হবে। অর্থবছরের মূল বাজেট করতে হবে জেলাভিত্তিক ধারণা নিয়ে। উপজেলা বা ইউনিয়ন পর্যায়েও উন্নয়নের দীর্ঘমেয়াদি মাস্টারপ্ল্যান থাকতে হবে। যার মাধ্যমে সুপেয় পানি, স্যানিটেশন, সড়কব্যবস্থার উন্নয়ন ও জনস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা যাবে। অবশ্য এরই মধ্যে এসব কাজের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও নির্দেশনা দিয়েছেন।

৫. জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালে ‘জেলা গভর্নর’ পদ্ধতি চালু করেছিলেন। সেই সময়ে যদি দেশে ধারাবাহিক এই পদ্ধতি চালু থাকত, তবে বাংলাদেশ এত দিনে হয়তো উন্নত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যেত। তবে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ডিভলবিং অ্যাডমিনিস্ট্রেশন চালু সহজ নয়। এটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। এর জন্য গণসচেতনতা ও গণসংযোগ একান্ত অপরিহার্য। জনসাধারণের সক্রিয় অংশগ্রহণ লাগবে। কেননা শুধু আইন করে এই ব্যবস্থা প্রবর্তন করলে তাতে কাঙ্ক্ষিত ফল আসবে না। দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা, জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দেওয়া ও সেবার আওতা বাড়ানো, মানুষের হয়রানি কমানো, সামাজিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা বৃদ্ধিসহ বৃহত্তর জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত করাই হবে এই পদ্ধতির মূল লক্ষ্য। যার মাধ্যমে প্রশাসনিক স্বচ্ছতাও নিশ্চিত করা যাবে। সরকার যেমন পদ্ধতির প্রবর্তন করবে, তেমনি তা বাস্তবায়নে মাঠপর্যায়ের জনপ্রতিনিধি ও তৃণমূলের জনসাধারণের উপস্থিতিও লাগবে।

৬. টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য প্রয়োজন উন্নত ডাটাবেইস বা তথ্যভাণ্ডার, যা এখনো দুর্বল। বাংলাদেশে জনসংখ্যাবিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-উপাত্তগুলো আদমশুমারি, স্যাম্পল ভাইটাল রেজিস্ট্রেশন সিস্টেম, জনমিতিক ও স্বাস্থ্য জরিপ (ডিএইচএস), মাল্টিপল ইন্ডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভে, নারীর প্রতি সহিংসতা ও শ্রমশক্তির ওপর জরিপ ইত্যাদি উৎস থেকে পাওয়া যায়। তবে এসডিজির 
Print Close  
Print Close  
News Source
            Top
            Top
 
Home / About Us / Benifits /Invite a Friend / Policy
Copyright © Hawker 2009-2010, Allright Reserved