[ অর্থ বাণিজ্য ] 2019-04-19
 
প্রাক-বাজেট আলোচনায় এনবিআর চেয়ারম্যান
'করপোরেট ট্যাক্স কমানোর ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে'
 
বৃহস্পতিবার রাজধানীর সিএ ভবনে দি ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড একাউন্টেন্ট অব বাংলাদেশ (আইসিএবি) এবং প্রথম আলো আয়োজিত 'কেমন চাই জাতীয় বাজেট ২০১৯-২০' শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া
করপোরেট ট্যাক্স কমানোর বিষয়টি জটিল অংক। এটি বিরাট চ্যালেঞ্জ। বারবার করপোরেট ট্যাক্স কমানোর প্রস্তাবনা আসছে। কিন্তু কোনো ট্যাক্স কমানোর আগে যে ঘাটতি তৈরি হবে তা কোন খাত থেকে পূরণ করা যায় সেই বিকল্প ব্যবস্থা তৈরি করা প্রয়োজন। এখন যদি করপোরেট ট্যাক্স কমানো হয় তাহলে সেই ঘাটতি পূরণে নতুন করে কারা ট্যাক্স দেবে বলে প্রশ্ন করেছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, এনডিসি।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর সিএ ভবনে দি ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড একাউন্টেন্ট অব বাংলাদেশ (আইসিএবি) এবং প্রথম আলো আয়োজিত 'কেমন চাই জাতীয় বাজেট ২০১৯-২০' শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ প্রশ্ন করেন।

মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, আমরা মনে করি রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা যত বড় ধরা হয় তা পুরোপুরি অর্জন না হলেও বাস্তবায়নের জোর চেষ্টা থাকে। সব সময় সেরকমটা হয়ে আসছে। সে কারণেই বড় আকারের বাজেট প্রণয়ন করা হয়। বর্তমানে আমাদের ট্যাক্স অফিসাররা যে পদ্ধতিতে (অ্যাডহক) করদাতাদের সাথে যোগাযোগ করেন এই পদ্ধতিতে অনেক গ্রাহকের আপত্তি রয়েছে। তবে আমরা খুব তাড়াতাড়ি করজাল বড় করার চেষ্টা করছি।

চার্টার্ড একাউন্টেন্ট দের উদ্দেশ্যে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলো এবং দেশীয় কোম্পানিগুলোর অডিটের সময় আপনারা আলাদাভাবে অডিট করেন। যেসব কোম্পানি তাদের সম্পূর্ণ আর্থিক প্রতিবেদন দিতে পারে না অনেকেই সেসব কোম্পানি অডিট করেন না, কিন্তু তার চেয়ে কম খরচে অন্য অডিটর সে কাজ সম্পন্ন করে দেন। এ কারণে অনেক টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয় দেশ।

এনবিআর এর অবকাঠামোগত উন্নয়নের বিষয়ে সংস্থাটির চেয়ারম্যান বলেন, আমরা আশা করছি আগামী দুই বছরের মধ্যে জনবল কাঠামো বৃদ্ধি পাবে। জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে আমাদের অফিসগুলো বিস্তৃত হবে। পাশাপাশি বৃদ্ধি পাবে রাজস্ব আদায়।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে সুশাসনের প্রচন্ড অভাব। সাধারণ করদাতাদের হয়রানি করা হয় কিন্তু ক্ষমতাশালীদের কিছুই বলা হয় না। বর্তমানে বাংলাদেশের ধনী, গরিব বৈষম্য অনেক বেড়ে গেছে।

তিনি বলেন, দেশে সরকারি বিনিয়োগ বাড়লেও সেই তুলনায় বেসরকারি বিনিয়োগের পরিমাণ অতি নগন্য। এ কারণেই কর্মসংস্থান বাড়ছে না এবং পুঁজিবাজারের কোন উন্নয়ন হচ্ছে না। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বেসরকারি বিনিয়োগে জোর দেয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, দেশের সার্বিক উন্নয়নে শিক্ষা খাতে বাজেট বৃদ্ধির প্রয়োজন রয়েছে। এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশের শিক্ষা খাতে বাজেট একেবারেই নগণ্য। আর সে কারণেই ১০ বছর ইংরেজি শিক্ষা নেয়ার পরও কোন ছাত্র দুই লাইন ঠিক মত ইংরেজি লিখতে পারে না। শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে এই খাতে নজর দেয়ার জোর দাবি জানান তিনি।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এর নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, প্রতি বছর রাজনৈতিক দর্শনের ভিত্তিতেই বাজেট প্রণয়ন করা হয়। এর ফলে নির্দিষ্ট কিছু গোষ্ঠী বেশি উপকৃত হয় এবং কিছু গোষ্ঠী কম। সবার ওপর সমানভাবে প্রভাব ফেলে না বাজেট। এ কারণেই আমাদের দেশের ধনী-দরিদ্র বৈষম্য অনেক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে আমাদের দেশের ১০ দশমিক ৬ শতাংশ যুবক বেকার। এদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হলে বেসরকারি বিনিয়োগের গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। ২০২৪ সালে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে আমরা উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হব। আমদানি-রপ্তানি বিভিন্ন সুবিধা হারাবে বাংলাদেশ। তাই বিদেশি সংস্থার সাহায্য আশায় না থেকে অভ্যন্তরীণ উৎপাদন এবং মানবসম্পদের দক্ষতা বাড়ানোর পরামর্শ দেন ফাহমিদা খাতুন।

তিনি আরও বলেন, সরকারি খাতের বিনিয়োগ বেড়েছে কিন্তু ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগ কমেছে। কৃষিখাতের বিনিয়োগও নিম্নমুখী। বাজেট ঘাটতি কম হচ্ছে সেটি সুখকর কিন্তু ব্যয় সঠিকভাবে করা হচ্ছে না। সমতাভিত্তিক সমাজ গড়তে হলে কর কাঠামোতে পরিবর্তন আনতে হবে বলেও মনে করেন তিনি।

ফাহমিদা খাতুন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির প্রশংসা করে বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি খুব ভালো হচ্ছে এটি খুব ভালো খবর। এই প্রবৃদ্ধির মূল উৎস ভোগভিত্তিক। এটি কাম্য নয়।

আইসিএবি সভাপতি এ এফ নেছার উদ্দিন বলেন, ইতোমধ্যেই আমরা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাছে আগামী বাজেটের প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেছি। এর মধ্যে চারটি বিষয়কে সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হয়েছে। সেগুলো হলো- রাজস্ব আয় বৃদ্ধি আইনের বৈপরিত্য পরিহার ও ফাঁকফোকর আইনের প্রয়োগে স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ, বিনিয়োগ কার্যক্রমে অধিকতর উৎসাহ ও দেশ থেকে মূলধন পাচারে নিরৎসাহিতকরণ।

আলোচনা সভা সঞ্চালনা করেন আইসিএবির সাবেক সভাপতি হুমায়ুন কবির।
Print Close  
Print Close  
News Source
            Top
            Top
 
Home / About Us / Benifits /Invite a Friend / Policy
Copyright © Hawker 2009-2010, Allright Reserved