[ শেষের পাতা ] 2019-04-19
 
আড়াই বছরে ৯ কোটি টাকা লোকসানে বিআরটিসি
 
প্রতিনিয়ত বহরে নতুন বাস যোগ হয়, নেয়া হয় নানান উদ্যোগ। কিন্তু লাভের মুখ দেখে না রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন একমাত্র সরকারি সড়ক পরিবহন সংস্থা বিআরটিসি। দেশের অরাজক পরিবহন সেক্টরে সম্ভাবনা থাকার পরও লোকসান থেকে বের হতে না পারায় সংস্থাটির অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনাকেই দায়ী করছেন পরিবহন-সংশ্লিষ্টরা।

সম্প্রতি বিআরটিসির বহরে যুক্ত হয়েছে ভারত থেকে আনা বেশ কিছু বাস। যেগুলো দিয়ে রাজধানীর উত্তরা ও ধানমন্ডি এলাকায় চক্রাকার বাস সার্ভিস চালু করা হয়েছে। এছাড়া এয়ারপোর্ট চত্বর থেকে মতিঝিল পর্যন্ত চালু করা হয়েছে ছয়টি ডাবলডেকার বাস। তারপরও আশার আলো সঞ্চার করতে পারছে না বিআরটিসি।

তবে পরিবহন-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন বাসে চড়ার সুখ যাত্রীরা বেশিদিন নাও পেতে পারেন, কেননা বাসের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই সেগুলোকে নষ্ট করে ফেলার দৃষ্টান্ত রয়েছে এই রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটির।

বিআরটিসির শীর্ষ কর্মকর্তারা বলছেন, অতীতের ভুল ও অভিজ্ঞতা মাথায় রেখেই কাজ করছেন, ভবিষ্যতে যাতে ভুল না হয়। ফলে আগামীতে বিআরটিসির সেবার মান বদলে যাবে।

তবে যাত্রীদের বক্তব্য, বিআরটিসির সেবা নিয়ে জনগণের ক্রমাগত অসন্তুষ্টি আর বাস রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনায় অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে এ লোকসান। নতুন করে বাস কেনার আগে বিআরটিসির দক্ষতা আর জবাবদিহিতা বাড়ানো দরকার। তারা বলছেন, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও উন্নত সেবা নিশ্চিত করতে পারলেই বিআরটিসি লাভের মুখ দেখবে।

সংশ্লিষ্ট তথ্যমতে, বর্তমানে বিআরটিসির অধীনে রয়েছে ১ হাজার ৪৪৫টি বাস। সেগুলোর মধ্যে সচল রয়েছে ৯২১টি। আর অকেজো অবস্থায় ডিপোতে পড়ে আছে ৫২৪টি বাস। এর মধ্যে ৩৬০টি বাস বড় ধরনের মেরামত প্রয়োজন। আর মেরামত করা ১৬৪টি বাস আর্থিকভাবে কার্যকর লাভজনক নয়। বর্তমানে বিআরটিসির বাস চলাচল করে ৩৯১ রুটে।

বিআরটিসির তথ্যমতে, ঋণ হিসেবে বাংলাদেশ সরকার প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে ৬০০ বাস ও ৫০০ ট্রাক কিনেছে। ইতোমধ্যে বেশ কিছু বাস চলেও এসেছে। বাকিটা কিছুদিনের মধ্যেই আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।

জানা যায়, রাষ্ট্রায়ত্ত পরিবহন সংস্থাটি গত আড়াই বছর ধরে লোকসান গুনছে। বর্তমানে ৯ কোটি টাকার বেশি লোকসান রয়েছে বিআরটিসির।

সংশ্লিষ্ট তথ্যমতে, ১৯৯৮-৯৯ অর্থবছরে প্রগতির কাছ থেকে মাসিক কিস্তিতে ৪১৭টি ভারতীয় টাটা কামিজ বাস কেনা হয়। এসব বাস ১০ বছর সচল থাকার কথা থাকলেও পাঁচ বছরের মাথায়ই বিকল হয়ে পড়ে। দুই দশকেও কিস্তি পরিশোধ না হওয়ায় বাসের মালিকানা পায়নি বিআরটিসি। এখন প্রায় শ'খানেক বাস কোনোমতে সচল আছে বলে জানা যায়।

২০০৯ সালে চীন থেকে ১২২ কোটি ৪৯ লাখ টাকায় কেনা হয় ২৭৯টি ডং ফেং বাস। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে চালুর দুই বছর পরই নষ্ট হতে শুরু করে বাসগুলো, এখন চলাচলের অযোগ্য ১৫৯টি। পরে ২০১০-১১ অর্থবছরে বিআরটিসির জন্য দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ২৫৫টি দাইয়ু বাস কেনে সরকার। এতে খরচ হয় ২৮২ কোটি টাকা। ২০১২ ও ২০১৩ সালে বাসগুলো হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু সেগুলোর মধ্যে বর্তমানে রাস্তায় চলে মাত্র ১৩৮টি বাস। ২০১৩ সালে ভারতীয় ঋণে আবারও সেদেশ থেকে কেনা হয় আর্টিকুলেটসহ মোট ৪২৮টি বাস। যার ৩৩টিই অচল হয়ে পড়েছে চার বছরে।

জানা যায়, গত কয়েক বছরে বিআরটিসির কেনা ৫০০ বাসই এখন ভাঙারি হিসেবে বিক্রির অপেক্ষায় রয়েছে। যাত্রীবাহী বাস ২০ থেকে ২৫ বছর রাস্তায় সচল থাকলেও বিআরটিসির বাস কেন ৫-৬ বছরের বেশি চলে না। অথচ যথাযথ পরিচর্যা করলে একেকটি বাস ২০ বছর পর্যন্ত সচল রাখা যায় বলে জানান পরিবহন-সংশ্লিষ্টরা।

খোদ বিআরটিসির এক কর্মকর্তা জানান, দক্ষ মেকানিক, অপর্যাপ্ত রক্ষণাবেক্ষণ, সিদ্ধান্তের অভাব ও কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর দুর্নীতির কারণেই বাসের এই বেহাল অবস্থা।

জানতে চাইলে বিআরটিসির মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মো. কামরুল ইসলাম বলেন, বিআরটিসির বহরে অনেকগুলো নতুন বাস যুক্ত হয়েছে। আশা করেন আগের চেয়ে সেবা বাড়বে। পাশাপাশি আয়ও বাড়বে।

তবে লোকসানের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিআরটিসির চেয়ারম্যান ফরিদ আহমদ ভূঁইয়ার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
Print Close  
Print Close  
News Source
            Top
            Top
 
Home / About Us / Benifits /Invite a Friend / Policy
Copyright © Hawker 2009-2010, Allright Reserved