জাফর আহমদ:
পেট্রোবাংলার কাছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পাওনা ১৭ হাজার ৬৯১ কোটি টাকা। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রাজস্বের ঘাটতি মেটাতে এ টাকা আদায় করতে চায় এনবিআর। পাওনা টাকা আদায়ে তাগিদ সৃষ্টির জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের দ্বারস্থ হয়েছে এনবিআর। এ জন্য চিঠিও পাঠিয়েছেন তারা।
এর আগে, অবশ্য পেট্রোবাংলার সঙ্গে বৈঠকে বসে এনবিআর। ওই বৈঠকের পরেই পাওনা আদায়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন তারা। এ চিঠির মাধ্যমে পাওনা আদায়ে তাগাদা সৃষ্টি করতে চায় এনবিআর।
জানা গেছে, বৈঠকে পেট্রোবাংলার পক্ষ থেকে পাওনা টাকার ১৩ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা অর্থ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অ্যাডজাস্ট করতে অনুরোধ করা হয়েছে। বাকি টাকা রাজস্ব বোর্ডকে পরিশোধ করার প্রস্তাবের জবাবে পেট্রোবাংলা থেকে বলা হয়েছে, এ মুহূর্তে প্রতিষ্ঠানটির কাছে নগদ টাকা (লিকুইডিটি) নেই, মাসে মাসে কিস্তিতে পরিশোধ করা হবে।
এনবিআর সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাজস্ব বোর্ডে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া এনবিআরের প্রতিনিধিত্ব করেন। বৈঠকে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৪২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যপূরণ করতে হলে নিয়মিত রাজস্ব আদায় কার্যক্রম গতিশীল করার পাশাপাশি বকেয়া রাজস্ব আদায় কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। পেট্রোবাংলার মতো বড় বড় প্রতিষ্ঠানের কাছে যে রাজস্ব পাওনা আছে তা আদায় কার্যক্রম জোরদার করতেও তাগিদ দেন তিনি। ইতোমধ্যে রাজস্ব বাকি আছে এমন প্রতিষ্ঠানের কাছে পাওনা পরিশোধ করার তাগিদও দেওয়া হয়েছে। বৈঠকে পেট্রোবাংলার পক্ষে উপস্থিত ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক (পরিচালক) হারুন আর রশিদ। পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান মো. রুহুল আমিন সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে পেট্রোবাংলার পক্ষ থেকে বৃহৎ কর ইউনিট (এলটিইউ) ১৩ হাজার ২৭৮ কোটি টাকার পুরাতন বকেয়া অর্থ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে (বুক অ্যাডজাস্টমেন্ট) সমন্বয় করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। এ ব্যাপারে ২০১৭ সালে একটি সিদ্ধান্তের কথা উল্লেখ করা হয়। কম্প্রোটোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের দপ্তর থেকে নিরীক্ষা সম্পন্ন করে অর্থ মন্ত্রণালয়ে অর্থ বিভাগের প্রেরণের অনুরোধ করা হয়। পেট্রোবাংলা মোট বকেয়ার এই ১৩ হাজার ২৭৮ কোটি অর্থ মন্ত্রণালয়ে সমন্বয় করতে বলা হয়।
এলটিইউ-ভ্যাটের পাওনা বাকি ৪ হাজার ৪১৩ কোটি টাকা পরিশোধ করার ব্যাপারে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জানান, এ বকেয়া পরিশোধ করার মতো নগদ টাকা বর্তমানে পেট্রোবাংলার কাছে নেই। এ বকেয়া মাসে মাসে পরিশোধ করা হবে। জানা গেছে, পেট্রোবাংলার কাছে পাওনা আদায় দীর্ঘদিনে অগ্রগতি না হওয়ায় রাজস্ব বোর্ড ক্ষুব্ধ। পেট্রোবাংলার সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকের সারসংক্ষেপ অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। এনবিআর চায় পাওনা আদায়ে যাতে তাগিদ বাড়ে।
প্রসঙ্গত, চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর ছয় মাসে এক লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রাজস্ব বোর্ড আদায় করেছে ৯৭ হাজার ৯৯৯ কোটি টাকা। ছয় মাসেই রাজস্ব আদায় ঘাটতি হয়েছে প্রায় ২৯ হাজার কোটি টাকা।
চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের রাজস্ব সরকারের তহবিলে যত যোগ হবে ঘাটতির পরিমাণ তত বাড়বে। অর্থবছরের প্রাক্কলিত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে হলে রাজস্ব বোর্ডের যেসব বকেয়া আছে তা আদায় করতে হবে। পাশাপাশি প্রায় ২৫ হাজার মামলার বিপরীতে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আটকে আছে, এ বকেয়া আদায় করতে হবে। এ বকেয়া আদায়ে সম্প্রতি এডিআরসহ বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এসব কার্যক্রমও জোরদার করা হচ্ছে।