[ পাতা ৪ ] 2019-04-19
 
পোশাক খাতে শ্রমিকদের স্বাস্থ্যঝুঁকি
দক্ষতা বাড়াতে সুরক্ষা নিশ্চিত করুন
 
শিল্পে কর্মরত শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ভালো ও নিরাপদ থাকলেই কেবল তাদের উৎপাদনক্ষমতা বাড়ে। পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা ব্যয় যে কোনো খরচ নয়, বিনিয়োগ—এ উপলব্ধি বাংলাদেশে শিল্প পরিমণ্ডলে আজও গড়ে ওঠেনি। ফলে শ্রমিকরা এখানে কর্মক্ষেত্রে ও কর্মক্ষেত্রের বাইরে উভয় স্থানেই দুর্দশাগ্রস্ত। সম্প্রতি আয়োজিত সাসটেইনেবল অ্যাপারেল সামিটে অংশগ্রহণকারীরা পোশাক খাতে শ্রমিকের স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে শঙ্কা ব্যক্ত করে বলেছেন, এটি সামগ্রিক অর্জনে প্রভাব ফেলবে। পোশাক খাতের কর্মপরিবেশ উন্নয়ন, শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি, দক্ষ কর্মী তৈরিতে প্রশিক্ষণসহ নানা পদক্ষেপ নেয়া হলেও এখনো শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি সেভাবে প্রাধান্য পায়নি। জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ২০৩০-এ পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার বিষয়ে বিশেষ জোর দেয়া হয়েছে। জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়নের ৮ নম্বর লক্ষ্যমাত্রায় টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, সবার জন্য উৎপাদনশীল পেশা এবং সম্মানজনক কাজের ওপর জোর দেয়া হয়। আমাদের সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে পোশাক শিল্পের ওপর। কারণ এ খাতেই দেশের অধিকাংশ শ্রমিক কর্মরত, যাদের ৮০ শতাংশই নারী। পোশাক শিল্পের মাধ্যমেই আমরা বিশ্বের শিল্প ব্যবস্থাপনায় নিজেদের একটি অবস্থান তৈরি করতে পেরেছি।

বাংলাদেশের কর্মক্ষেত্র নারীবান্ধব নয়। নারীবান্ধব কর্মপরিবেশ সৃষ্টি করা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বসে বা দাঁড়িয়ে কাজ করতে করতে ঘাড় ব্যথা হয়ে যায়। কোমর ব্যথাসহ আরো অনেক সমস্যার সৃষ্টি হয়। কর্মপরিবেশের দূষণ, কায়িক শ্রম, নিরাপত্তার অভাব, অধিক সময় বিরতিহীনভাবে কাজ করা ইত্যাদি কারণে শ্রমিকরা নানা রোগ ও শারীরিক সমস্যায় ভোগেন। বাংলাদেশের কারখানাগুলো, বিশেষ করে পোশাক কারখানায় নারীর জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা বিদ্যমান নয়। দেশের নারীদের মৃত্যুর বড় একটি কারণ সার্ভিক্যাল ক্যান্সার। অথচ এ বিষয়ে কোনো আলোচনা নেই। পেশাগত স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে মালিক-শ্রমিক উভয়ের সচেতনতার অভাব রয়েছে। যদি আমরা বাইরের দেশগুলোয় নজর ফেরাই, তাহলে দেখব সেখানে পেশাগত অসুস্থতার জন্য ইন্স্যুরেন্স পলিসি রয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে মালিক-শ্রমিকরা জানেন না, কী ধরনের পেশাগত অসুস্থতা হতে পারে। এমন প্রবণতা টেকসই পোশাক শিল্পের অন্তরায় বৈকি। প্রত্যেকের দায়িত্ব থেকে বিষয়টি নিয়ে কাজ করতে হবে। ২০১৩ সালে সংশোধিত শ্রম আইনে বলা হয়েছে, কোনো কারখানায় ৫০ জন শ্রমিক থাকলে সেখানে একজন ডাক্তার থাকবেন, নির্দিষ্টসংখ্যক শ্রমিক থাকলে একটি ক্লিনিক থাকবে, ২০ জনের বেশি নারী শ্রমিক থাকলে পরিচর্যার জায়গা থাকবে। দেশের সব শিল্পের জন্যই পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শিল্প মালিক ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলো সচেতন হলে পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব। 

ঘুষ-দুর্নীতি হচ্ছে শ্রমিকের পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের অন্যতম অন্তরায়। শিল্প পরিদর্শকরা কোনো অনিয়ম ধরা পড়লেও বলতে গেলে কিছুই করেন না।  এভাবে অনিয়ম চলতেই থাকে। সরকার ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে এদিকটি গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে। এসব বিষয়ে রাজনীতিবিদদের সক্রিয় অংশগ্রহণ কাম্য। পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা রক্ষার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এ কাজের জন্য যে পরিমাণ তহবিলের প্রয়োজন, সেটা অধিকাংশ মালিকের থাকে না। একজন শ্রমিক মারা গেলে ১ লাখ টাকা দেয়া হয়। এটা খুবই সামান্য অর্থ। শ্রমিকের ক্ষতিপূরণের বিষয়টি অবশ্যই গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে কম বেতন পান আমাদের দেশের শ্রমিকরা। এ অবস্থায় পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার বিষয়টি দূরে চলে যায়।

শুধু বায়ারদের চাপে শিল্প-কারখানার পরিবেশের উন্নয়ন হলে তা টেকসই হবে না। টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে নিজেদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে সচেতনতা আবশ্যক। পোশাক শিল্পসহ সব শিল্পকে টেকসই করতে হলে আমাদের একটি নিজস্ব ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, যেন নিরবচ্ছিন্নভাবে শ্রমিকের স্বার্থরক্ষা, কারখানার সংস্কারসহ যাবতীয় উন্নয়নমূলক কাজ চলতে থাকে। যন্ত্রপাতি, ভূমি, আসবাব ইত্যাদি উপকরণের মতো পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা ব্যয়কেও প্রকল্প ব্যয়ের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। বিশ্বের একমাত্র প্লাটিনাম সার্টিফায়েড নিটওয়্যার ফ্যাক্টরি এবং বিশ্বের সেরা তিনটি কারখানা এখন বাংলাদেশে অবস্থিত। সবচেয়ে বেশি গ্রিন ফ্যাক্টরিও বাংলাদেশে। ভবিষ্যতে দেশের শিল্প-কারখানাগুলো আরো বেশি শ্রমিকবান্ধব হবে বলে বিশ্বাস করি।
Print Close  
Print Close  
News Source
            Top
            Top
 
Home / About Us / Benifits /Invite a Friend / Policy
Copyright © Hawker 2009-2010, Allright Reserved