আগামী বছরেই জাপানি অর্থনৈতিক অঞ্চল (ইজেড) শিল্প স্থাপনের উপযোগী হবে। গতকাল রোববার এ অঞ্চল উন্নয়নের চুক্তি সই অনুষ্ঠানে সুমিতমো করপোরেশনের মহাব্যবস্থাপক ইউশুশি ফুকুদা এ ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে এই অঞ্চলের সম্ভব্যতা যাচাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। এ ইজেডের অনেক সম্ভাবনার পাশাপাশি বাধাও আছে। সুমিতমো করপোরেশন তাদের অভিজ্ঞতা দিয়ে দ্রুত এ অঞ্চল উন্নয়নের কার্যক্রম বাস্তবায়ন করবে।
গতকাল রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে জাপান অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়ন ও পরিচালনার জন্য বেজা ও সুমিতমো করপোরেশনের মধ্যে চুক্তি সই অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন ইউশুশি ফুকুদা। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বেজার মহাব্যবস্থাপক শোহেলের রহমান চৌধুরী ও ইউশুশি ফুকুদা চুক্তিতে সই করেন।
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারের এক হাজার একর জমিতে জাপান অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়ন ও যৌথ পরিচালনার কাজ করবে জাপানের শীর্ষস্থানীয় কোম্পানি সুমিতমো করপোরেশন। এই করপোরেশনের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশের সঙ্গে এই প্রথম যৌথ অংশীদারিত্বে বিদেশি অর্থনৈতিক অঞ্চল উন্নয়ন শুরু হচ্ছে। প্রথম ধাপে ৫০০ একর জমিতে ২০২০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ও জাপান যৌথ মালিকানার একটি নতুন কোম্পানি এ অঞ্চলের কার্যক্রম শুরু করবে। আগামী বছরে এই অঞ্চলে শিল্প স্থাপনের কাজ শুরু হবে। এ অঞ্চল চালু হলে দুই হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে জাপান।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজীবুর রহমান বলেন, এই চুক্তির মাধ্যমে জাপানের সঙ্গে বিনিয়োগ বাড়ানোর সুযোগ তৈরি হয়েছে। এর মাধ্যমে দেশটির উদ্যোক্তারা এ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগে আস্থা পাবেন। এর ফলে বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নয়নে দেশের ভাবমূর্তি আরও বাড়বে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ বলেন, এ অর্থনেতিক অঞ্চলের সঙ্গে অংশীদার হিসেবে আইএফসি, জাইকা, সুমিতমো ও বেজা রয়েছে। যৌথভাবে এ অঞ্চল উন্নয়নের মাধ্যমে শিল্পের বিনিয়োগের পথ সুগম হবে।
পবন চৌধুরী বলেন, বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে এই ইজেড খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এ জন্য বেজা কাজ করছে। এই অঞ্চলের উন্নয়ন হলে জাপানের বিনিয়োগের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগ আসবে বলে আশা করেন তিনি।
জাইকা বাংলাদেশের সিনিয়র রিপ্রেজেনটেটিভ ইয়োশিবুমি বিতো বলেন, এই অঞ্চল উন্নয়নে সময়মতো কাজ শুরু হবে। বিশ্বমানের অর্থনৈতিক অঞ্চল হবে এটি। সুমিতমো করপোরেশন ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম ও মিয়ানমারে অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করেছে। ওই অভিজ্ঞতা দিয়ে এ ইজেড ভালোভাবেই বাস্তবায়ন করবে।
ইউশুশি ফুকুদা বলেন, এ অর্থনৈতিক অঞ্চল এশিয়ায় তাদের অষ্টম প্রকল্প। ১৯৯০ সালে প্রথম অর্থনৈতিক অঞ্চল উন্নয়ন করেছেন তারা।
এই ইজেডের ভূমি অধিগ্রহণে তিন হাজার ২০০ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। এখন জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নে অর্থনৈতিক অঞ্চলের অবকাঠামো উন্নয়নে দুই হাজার ৫৮২ কোটি টাকা ব্যয় হবে। এই ব্যয়ে ভূমি উন্নয়ন, সড়ক, গ্যাস, বিদ্যুৎকেন্দ্র, পানি ও বর্জ্য পরিশোধনাগার করা হবে। বাংলাদেশ সরকার, জাপান ও বিশ্বব্যাংক গ্রুপের প্রতিষ্ঠান আইএফসি এই অর্থনৈতিক অঞ্চলের অংশীদার হবে। এ প্রকল্পে বেজার ২৪ শতাংশ অংশীদারিত্ব থাকবে। বাকি ৭৬ শতাংশের অংশীদার হবে আইএফসি ও সুমিতমো।