[ শেষ পাতা ] 2019-05-27
 
রেকর্ড উৎপাদন ও কোম্পানি পর্যায়ে ক্রয় বন্ধ : ৬ লাখ টন অবিক্রীত লবণ নিয়ে উদ্বেগে চাষীরা
 
চলতি মৌসুমে ৫৮ বছরের সর্বোচ্চ লবণ উৎপাদন হয়েছে দেশে। পাশাপাশি গত মৌসুমের লবণও বিভিন্ন পর্যায়ে মজুদ রয়েছে। এ অবস্থায় প্রক্রিয়াজাত কোম্পানিগুলো হঠাৎ লবণ কেনা বন্ধ করে দেয়ায় চাষী পর্যায়ে প্রায় ছয় লাখ টন লবণ অবিক্রীত রয়েছে। অবিক্রীত এ মজুদ নিয়ে উদ্বেগে আছেন লবণচাষীরা। কারণ বাড়তি মজুদের কারণে কৃষক পর্যায়ে লবণের দাম প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক), কক্সবাজারের লবণচাষী সমিতি ও স্থানীয় মিল মালিক সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ১৬ লাখ টন লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যদিও উৎপাদন এরই মধ্যে ১৮ লাখ টন ছাড়িয়েছে। এসব অঞ্চল থেকে এসিআই সল্ট লিমিটেড, মোল্লা সল্ট, মধুমতিসহ বড় ও নামি কোম্পানিগুলো লবণ কেনা বন্ধ করে দিয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে চাষী পর্যায়ে লবণের দামে। তিন সপ্তাহ আগেও যে লবণ ২৮০-৩০০ টাকা মণদরে বিক্রি হয়েছিল, এখন তা ১৫০-১৮০ টাকায় নেমে এসেছে। দরপতনের কারণে ব্যাপক লোকসানের আশঙ্কায় লবণ বিক্রি করছেন না চাষীরা। ক্ষেতের মধ্যেই গর্ত করে রাখতে হচ্ছে এসব লবণ।

লবণচাষী সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি আনোয়ার পাশা চৌধুরী এ প্রসঙ্গে বলেন, হঠাৎ করেই লবণ কেনা বন্ধ করে দিয়েছে বড় কোম্পানিগুলো। ফলে বিপুল পরিমাণ লবণ অবিক্রীত পড়ে আছে। বাম্পার উৎপাদন হলেও লবণ আমদানি বন্ধ হচ্ছে না। এতে উদ্বিগ্ন চাষীরা। এ সংকটের সমাধান না হলে লবণ উৎপাদন ও বিপণনে জড়িত কক্সবাজারের প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ পথে বসবে।

সম্প্র্রতি বিএসটিআই ২৭ ধরনের ৪০৬টি খাদ্যপণ্যের নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা করে। এর মধ্যে ৩১৩টি পণ্যের পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে, যেখানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ৫২টি পণ্য নিম্নমানের চিহ্নিত হয়েছে। পরে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের এ ৫২ খাদ্যপণ্য বাজার থেকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এসব পণ্যের মধ্যে নয়টি লবণ কোম্পানি। এগুলো হলো এসিআই, মোল্লা সল্ট, দাদা সুপার, মধুমতি, তীর, মদিনা, স্টারশিপ,  তাজ ও নূর স্পেশালের আয়োডিনযুক্ত লবণ। ফলে এসব কোম্পানি এখন আর লবণ কিনছে না।

জানতে চাইলে এসিআই সল্ট লিমিটেডের বিজনেস ডিরেক্টর মো. কামরুল হাসান বলেন, চাষীদের কাছ থেকে দেশের শীর্ষস্থানীয় লবণ ক্রেতা হিসেবে আমরা প্রতিদিন প্রায় ১৫ হাজার মণ লবণ সংগ্রহ করি। এসব লবণ প্রক্রিয়া করেই বাজারে বিপণন করি। চাষী পর্যায়ের সিংহভাগ লবণই আমরা কিনি। কেননা আমরা দেশের লবণের প্রতি আস্থাশীল। তবে মহামান্য আদালতের নিষেধাজ্ঞায় উৎপাদন বন্ধ থাকায় আমরা খুচরা বাজার থেকে লবণ কেনা বন্ধ রেখেছি।

বিসিক সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজারে বাণিজ্যিকভাবে লবণ উৎপাদন শুরু হয় ১৯৬০ সালে। সেই থেকে গত ৫৮ বছরে ১৮ লাখ টন লবণ উৎপাদনের রেকর্ড নেই। কেবল ২০১৩ মৌসুমে লবণ উৎপাদন হয়েছিল ১৭ লাখ ৫২ হাজার টন। চলতি মৌসুমে দেশে ভোক্তা ও শিল্প খাতে লবণের চাহিদা রয়েছে ১৬ লাখ ৬৫ হাজার টন। গত বছরের নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি থেকে চকরিয়া, পেকুয়া, কুতুবদিয়া, মহেশখালী, টেকনাফ, কক্সবাজার সদরসহ কক্সবাজারের উপকূল ও চট্টগ্রামের বাঁশখালীর উপজেলায় লবণ উৎপাদনে জড়িত রয়েছেন চার লাখের বেশি কৃষক ও শ্রমিক। অনুকূল আবহাওয়া থাকায় ১৩টি মোকামের অধীনে লবণ উৎপাদন ছাড়িয়েছে ১৮ লাখ টন। বড় কোম্পানিগুলো এখন লবণ কিনতে চাইছে না।

ইসলামপুর লবণ মিল মালিক বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি সামশুল আজাদ এ প্রসঙ্গে বণিক বার্তাকে বলেন, চলতি মৌসুমে লবণচাষীরা ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। রেকর্ড লবণ উৎপাদন করেই উদ্বেগে আছেন তারা। লবণ শিল্প বাঁচাতে হলে সরকারকে বক্সবাজারে একটা ‘লবণ বোর্ড’ গঠন করতে হবে। তারা যেন ঠিকমতো দাম পান, সে ব্যাপারে এখনই কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।
Print Close  
Print Close  
News Source
            Top
            Top
 
Home / About Us / Benifits /Invite a Friend / Policy
Copyright © Hawker 2009-2010, Allright Reserved