[ সম্পাদকীয় ] 2019-05-27
 
প্রতিযোগীদের চেয়ে এগিয়ে থাকতে অর্থনৈতিক কূটনীতিতে চৌকস হতে হবে
 
ড. জাহিদ হোসেন:

অর্থনীতিবিদ ও বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের লিড ইকোনমিস্ট। যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন ইউনিভার্সিটি থেকে অর্থনীতিতে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। এর আগে তিনি নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির অর্থনীতি ও ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের প্রধান, কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির ইনস্টিটিউট অন ইস্ট সেন্ট্রাল ইউরোপের স্টাফ অ্যাসোসিয়েট, যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব ম্যাসাচুসেটস ও ফ্রেমিংহ্যাম স্টেট কলেজের লেকচারার হিসেবে পাঠদান করেছেন। ড. জাহিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের সহকারী অধ্যাপক, ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যুক্ত ছিলেন। বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ, মাথাপিছু আয়, প্রবৃদ্ধি, বাণিজ্যনীতি, বৈষম্য, নীতিনির্ধারকদের ভূমিকা, কর্মসংস্থানসহ নানা বিষয়ে কথা হয় বণিক বার্তার সঙ্গে।

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এম এম মুসা ও রুহিনা ফেরদৌস

মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়া কিংবা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় চালেঞ্জ কী?

এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আমাদের সামনে প্রথম চ্যালেঞ্জটি হলো, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি। অন্যান্য যে সামাজিক সূচক আছে, যেমন দারিদ্র্য দূরীকরণ, শিক্ষাগত উন্নয়ন, গড় আয়ু বৃদ্ধি ইত্যাদির সঙ্গে মাথাপিছু আয়ের সম্পর্ক রয়েছে। কাজেই মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেলে অন্য ক্ষেত্রেও অগ্রগতি হবে। বর্তমানে আমরা ৭ থেকে ৮ শতাংশের মতো জিডিপি প্রবৃদ্ধি করছি, তা কিন্তু মাথাপিছু নয়। মাথাপিছু আয় হিসাবে এ প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের মতো। এটাকে দ্বিগুণ করতে হবে। ২০৩১ সাল নাগাদ উচ্চমধ্যম আয়ের লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে হলে আমাদের মাথাপিছু আয়ের পরিমাণ আড়াই গুণের বেশি বাড়াতে হবে। অতীতে আমরা যে কাজটি করতে পারিনি, ভবিষ্যতে আমাদের তা সম্ভব করতে হবে। এটি অবশ্যই বড় চ্যালেঞ্জ।

আগামী ১০ বছরে চ্যালেঞ্জের কথা যদি বলা হয়, তাহলে দেখতে হবে বিশ্ব অর্থনীতিতে কী ঘটছে, আর আমরা কীভাবে কাজ করছি। কিছু বিষয় আছে, আমরা জানি যেগুলো ঘটবে। কিছু বিষয় আছে অনিশ্চিত। আমরা যদি দুই অংকের প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে চাই, তাহলে শিল্পায়নকে গুরুত্ব দিতে হবে। এক্ষেত্রে শুধু অভ্যন্তরীণ বাজারভিত্তিক শিল্পায়ন যথেষ্ট হবে না। ১৭ কোটি মানুষ হলেও আমাদের অর্থনীতি ২৭৫ বিলিয়ন ডলারের, যার মানে অভ্যন্তরীণ বাজারে বিক্রিরও একটি সীমা রয়েছে। কাজেই বিশ্ববাজার নির্ভরশীল শিল্পায়নে অগ্রগতি আনতে হবে। সেক্ষেত্রে পণ্য বিক্রির জন্য আমাদের বড় বাজার ইউরোপ, আমেরিকা। এরপর রয়েছে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া; ইউরোপ, আমেরিকার মতো বড় মাপের না হলেও এখানে আমাদের বড় ধরনের উপস্থিতি রয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)-সহ কানাডা, অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশে আমরা এলডিসি তালিকাভুক্ত দেশ হিসেবে শুল্কমুক্ত, কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার পাই। ২০২৪ সালে আমরা এলডিসি তালিকা থেকে বের হয়ে আসব। একটা মূল্যায়নে আমরা উত্তীর্ণ হতে পেরেছি, পরবর্তী মূল্যায়নটা ২০২১ সালে হবে। এক্ষেত্রে যে তিনটি সূচকে অগ্রগতি করতে হয়, ধরে নিচ্ছি অগ্রগতির ধারাটা আমরা ধরে রাখতে পারব। ২০২৪ সাল পর্যন্ত যদি ওই অগ্রগতির ধারা আমরা টিকিয়ে রাখতে পারি—আমার বিশ্বাস টিকে থাকবে, তাহলে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বিষয়টি চলে যাবে। এরপর তারা এনডোর্স করলে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বের হয়ে আসবে। সেক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশ যেসব শুল্ক সুবিধা, কোটা সুবিধা এলডিসির কারণে পাচ্ছে, সেগুলো পাবে না। প্রায় ৪০টি দেশে বাংলাদেশ শুল্কমুক্ত কোটা সুবিধা পায়। দ্বিতীয় বিষয়টা হলো, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা এলডিসি দেশগুলোকে কিছুটা ছাড় দেয়, যেমন রফতানি ভর্তুকি—এলডিসি দেশ হিসেবে এক্ষেত্রে আমরা কিছু সুবিধা পাই। কাজেই উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় নাম লেখানোর পর এটি আমাদের জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে আসবে। যদিও কোটামুক্ত, শুল্কমুক্ত ও বাণিজ্য সুবিধাগুলো হুট করে তুলে নেয়া হয় না, বছর তিনের মতো সময় দেয়া হয়। সেক্ষেত্রে ২০২৭ সালের মধ্যে সুবিধাগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। তখন শুল্কের সম্মুখীন হতে হবে। বর্তমানে ইইউ বাজারে বাংলাদেশ এখন শুল্কমুক্ত সুবিধা পায়, তখন ১২ থেকে ১৩ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে। তবে আমরা এক্ষেত্রে পুনরায় দরকষাকষি করতে পারি।

একটা বিষয় আমাদের মনে রাখতে হবে যে, এলডিসি তালিকাভুক্ত দেশ হিসেবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আমরা যেসব সুযোগ-সুবিধা পাই, অনেক নন-এলডিসি দেশও একই সুবিধা পায়। আবার অনেক এলডিসি দেশও তা পায় না। এলডিসি থেকে বের হয়ে গেলে যে আমরা সে সুবিধা পাব না, তাও কিন্তু নয়।

 

আন্তর্জাতিক বাজারে সুবিধাপ্রাপ্তির বিষয়গুলো কিসের ওপর নির্ভর করে?

এটি দ্বিপক্ষীয় আলোচনার ওপর নির্ভর করে। আমরা কীভাবে অন্যান্য দেশের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সুবিধাগুলো বহাল রাখতে পারব, তা নিয়ে ভাবতে হবে। আমাদের চেয়ে কম শুল্কে ভিয়েতনাম আমেরিকার গার্মেন্ট বাজারে প্রবেশ করতে পারে। আমরা তাদের থেকে অনেক বেশি তৈরি পোশাক আমেরিকার বাজারে রফতানি করি। কারণ আমাদের শ্রমিক খরচ অনেক কম এবং আমাদের গার্মেন্ট শিল্পের সক্ষমতায় ভিয়েতনাম থেকে আমরা এগিয়ে রয়েছি। তবে ভিয়েতনাম এখন রফতানিতে আমাদের ছুঁয়ে ফেলছে। উন্নত মানের পণ্যের পাশাপাশি ওদের লিড টাইম কম। কাজেই এভাবে চলতে থাকলে একটা সময় ভিয়েতনাম আমাদের ছাড়িয়ে যাবে।

তাছাড়া আগামী ১০ বছরে বাণিজ্যের বাহ্যিক পরিবেশে বড় ধরনের একটা পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে, যা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ। তাই শুল্কমুক্ত সুবিধা ছাড়া আমরা তাদের সঙ্গে কীভাবে ব্যবসা করব, তা নিয়ে পুনরায় আলাপ-আলোচনা করতে হবে। কারণ  ইবিএর অধীনে এখন আমরা যে শূন্য শুল্ক সুবিধাগুলো পাচ্ছি, তা যদি পরবর্তীতে ধরে রাখতে চাই তাহলে তাদেরও আমাদের কিছু সুবিধা দিতে হবে। ইইউয়ের সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয়টি হলো, বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের বাণিজ্য ঘাটতি। আমাদের বাণিজ্যনীতি অরিজিনভিত্তিক। সেক্ষেত্রে দেখা যায়, একই পণ্য প্রবেশের ক্ষেত্রে দেশভেদে ভিন্ন ভিন্ন শুল্ক দিতে হয়।

চীন কিংবা ভারতের সঙ্গেও আমাদের বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে, কিন্তু আমেরিকার সঙ্গে বড় ধরনের উদ্বৃত্ত রয়েছে। এলডিসি তালিকা থেকে বের হওয়ার পর তাদের কাছে শুল্কমুক্ত সুবিধা চাওয়া হলে তারা বলবে, ‘তোমরা আমাদের কাছে শুল্কমুক্ত সুবিধা চাও, কিন্তু তোমাদের বাজারে আমাদের প্রবেশের ক্ষেত্রে যেসব বাধা আছে, তা দূর করতে হবে।

 

আমরা কোন যুক্তিতে অরিজিন ভিত্তিক বাণিজ্যনীতি অনুসরণ করছি?

ঐতিহাসিক ব্যাখ্যা ছাড়া আর কোনো ব্যাখ্যা নেই। বাংলাদেশের অনেক পণ্য প্রবেশের ক্ষেত্রে ভারত শুল্কমুক্ত সুবিধা দেয়, যদিও শুল্কমুক্ত সুবিধাপ্রাপ্ত পণ্যের ৯৯ শতাংশই আমরা উৎপাদন করি না। এতে কিছু যায় আসে না। তবে যখন বিষয়টি বাস্তবতায় পরিণত হয়, তখন প্রশ্ন তৈরি হয়। তাই এলডিসি তালিকা থেকে বের হয়ে গেলে আমাদের বাণিজ্য চুক্তিগুলো নতুনভাবে করতে হবে। সেখানে অর্থনৈতিক কূটনীতি ও দরকষাকষির সক্ষমতায় আমরা যদি চৌকস না হতে পারি, তাহলে এ প্রতিযোগিতায় যেখানে আমাদের প্রতিযোগী হিসেবে ভারত, পাকিস্তান, কম্বোডিয়াসহ উঠতি কিছু আফ্রিকান দেশ রয়েছে—আমরা পিছিয়ে পড়ব।

 

আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা করতে আমাদের পণ্য একটি, অন্যদের তো আরো কিছু পণ্য রয়েছে।

সেজন্যই বাজারগুলোয় যদি আমরা শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার ধরে রাখতে না পারি, তাহলে সমস্যা সৃষ্টি হবে। চীন, ভারত, ব্রাজিলের মতো নন-ট্রাডিশনাল বাজারে হয়তো আমরা নতুন পণ্য বিক্রি করতে পারব, কিন্তু যেসব বাজারে আমাদের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার রয়েছে, তা ধরে রাখতে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হব। মূল কথা হলো, আগামী ১০ বছরে বাহ্যিক পরিবেশের ক্ষেত্রে যে পরিবর্তন সূচিত হতে যাচ্ছে, তা আমাদের রফতানিভিত্তিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে। দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জটি হচ্ছে অভ্যন্তরীণ। এটি নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। প্রথমত, অবকাঠামোগত ঘাটতিগুলো অবসান করা। দ্বিতীয়ত, প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা দূর করা এবং তৃতীয়ত, নীতিগত সংস্কার করতে হবে। আবার বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সূচকে আমরা কোন পর্যায়ে আছি, বাণিজ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত যে লজিস্টিকস আছে, এখানে কী ধরনের সমস্যার মধ্য দিয়ে যেতে হয়, তা মূল্যায়ন করতে হবে।

 

স্বাধীনতা-পূর্ব ও পরবর্তী বাংলাদেশের অর্থনৈতিক চিত্রটি কেমন দেখছেন?

স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশ আর বর্তমান বাংলাদেশের সঙ্গে পার্থক্য অনেক। বাংলাদেশ টিকবে কিনা, অর্থনীতি হিসেবে দাঁড়াতে পারবে কিনা, এত জনগোষ্ঠীর খাদ্য, বাসস্থানের  নিশ্চয়তা দিতে পারবে কিনা, এ প্রশ্নগুলো এখন আর নেই। স্বাধীনতা-পূর্ববর্তী ও পরবর্তীতে যে হতাশা ছিল, এখন তার চেয়ে বেশি আমরা অর্জন করেছি, এটার ভিত্তিতে সন্তুষ্ট হয়ে বসে থাকতে পারি না। কারণ অর্জনের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের আকাঙ্ক্ষাও বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরে একই ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে, একই ধরনের সম্পদ ও একই সংখ্যক জনসংখ্যা নিয়ে আরো দেশ ছিল, যেমন ভিয়েতনাম, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, শ্রীলংকা। এমনকি ১৯৮০ সালের শুরুতে চীন কিংবা ভিয়েতনামের মাথাপিছু আয় বাংলাদেশের মাথাপিছু আয়ের তুলনায় কম ছিল। চীনের মাথাপিছু আয় এখন বাংলাদেশের তুলনায় তিন গুণ। ভিয়েতনামের দেড় গুণ। ইন্দোনেশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া আমাদের সমপর্যায়ের দেশ। ভিয়েতনাম ছিল সম্পূর্ণভাবে যুদ্ধবিধ্বস্ত। আমরা হয়তো আমাদের প্রত্যাশার চেয়ে বেশি অর্জন করেছি, তলাবিহীন ঝুড়ি ইত্যাদি বিষয়কে আমরা ভুল প্রমাণ করেছি। অন্যদিকে এটাও তো মনে রাখতে হবে যে একই প্রেক্ষাপটে অন্যরা আমাদের চেয়ে আরো ভালো করেছে।

এখনো আমাদের দেশে প্রতি ১০০ জনে ১৪ জন দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করেন। সামাজিক উন্নয়নেও তারা অনেক এগিয়ে রয়েছে। আমাদের অর্জনকে আমি খাটো করে দেখার কথা বলছি না। বরং ভবিষ্যতে আমাদের যে আকাঙ্ক্ষাগুলো রয়েছে, তা অর্জন করার জন্য অতীতের নীতি, অতীতের প্রতিষ্ঠান, অতীতের অবকাঠামো দিয়ে তো হবে না। আমাদের করণীয় কী, তা বুঝতে হলে অন্যদের অভিজ্ঞতা দিয়ে শিখতে হবে। কাজেই আমাদের অবকাঠামোর ঘাটতি, প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতাগুলো দূর করতে হবে। একটি কার্যকর আমলাতন্ত্র, একটি দক্ষ কেন্দ্রীয় ব্যাংক; যা কিনা অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য জরুরি।

আমাদের দেশে আবার কিছু প্রাতিষ্ঠানিক পরিবর্তন আমরা করেছি, যেটা আমাদের উন্নয়ন ও আয়ের চেয়ে বেশি। মাথাপিছু আয়ের ভিত্তিতে যদি হিসাব করা হয়, আমাদের গড় আয়ুষ্কাল কত হওয়া উচিত? বিভিন্ন বিশ্লেষণে যা আসে, আমাদের প্রকৃত আয়ুষ্কাল তার চেয়ে বেশি। তার মানে শুধু আয়ের ভিত্তিতে নয়, এর বাইরেও অনেক কিছু রয়েছে, যার ভিত্তিতে আমরা এ অর্জন করতে পেরেছি। নারীর ক্ষমতায়ন আমাদের অনেক বড় একটি অর্জন। এনজিওগুলোর মাধ্যমে সেবা প্রদান। যেটা আমাদের স্থানীয় সরকারের অনুপস্থিতির ঘাটতির বিষয়টি মেটাতে পেরেছে। প্রাতিষ্ঠানিক প্রবর্তনের মাধ্যমে ক্ষুদ্রঋণ, স্বাস্থ্য, শিক্ষার ক্ষেত্রে আমাদের এ অর্জনগুলো অতীতে আমাদের প্রয়োজনগুলোকে পূরণ করেছে। এনজিও স্থানীয় সরকারের বিকল্প হতে পারে না, তারা বরং পরিষেবা প্রদানের একটা অংশীদার হতে পারে। যেমন বেসরকারি খাত একটা পার্টনার; শিল্প, সেবা খাতের প্রবৃদ্ধি, উৎপাদনে বিনিয়োগ, বিতরণে বিনিয়োগ এগুলো বেসরকারি খাত করবে। সরকার বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরি করে দেবে। ঠিক একইভাবে যেসব সামাজিক সেবা দেয়ার প্রয়োজন, তা হয়তো সরকার থেকে না করলেও চলবে, এনজিওর মাধ্যমে করানো যেতে পারে। কোনো এনজিও হয়তো দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার বিষয়গুলো দেখছে, তেমন কেউ হয়তো স্বাস্থ্যসেবা, কেউ স্যানিটেশনের বিষয়গুলো দেখছে। এভাবে বিভিন্ন ধরনের সামাজিক সেবা তাদের মাধ্যমে প্রদান করতে হবে। তবে এজন্য একটি নীতি ও কাঠামো তৈরি করে দিতে হবে। সেজন্য স্থানীয় পর্যায়ে প্রশাসন ও শাসন পদ্ধতি, যা বর্তমানে দুর্বল, তা শক্তিশালী করতে হবে।

স্থানীয় জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিকে উপজেলা কাউন্সিলের দায়িত্ব দিয়ে আমরা যদি তাকে সিদ্ধান্ত নেয়ার কিংবা কিছু করার ক্ষমতা প্রদান না করি, যেমন কোথায় রাস্তায় করবেন, একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কত ব্যয় করবেন, শিক্ষক নিয়োগ দিতে পারবেন কিনা ইত্যাদি। তবে সুফল মিলবে না। স্থানীয় সেবা প্রদানের ব্যবস্থাপনায় তার ক্ষমতায়নের যদি অভাব থাকে, স্থানীয় প্রতিনিধিকে যদি সংসদ সদস্য কিংবা মন্ত্রীর ওপর নির্ভর করতে হয়, সর্বোপরি এ ধরনের কেন্দ্রীভূত কাঠামোয় উপজেলা পর্যায়ে ভীষণ দক্ষ কোনো নির্বাচিত প্রতিনিধিকে বসিয়ে কাজ হবে না।

আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করতে হবে, সেবা প্রদানের ক্ষমতা বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে আমলাতান্ত্রিক দক্ষতা বৃদ্ধির বিষয়টি আমাদের বড় এজেন্ডা। প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ জরুরি। সবাইকে ঢাকার দিকে যেন তাকিয়ে থাকতে না হয়। স্থানীয় সরকারকে ক্ষমতায়ন করতে হবে। প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করতে হবে, যাতে প্রবৃদ্ধির জন্য যে সেবাগুলো প্রয়োজন, তা স্থানীয় সরকার দিতে পারে।

 

এগুলো ছাড়াই তো আমরা ৭ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি।

বিষয়টি এতটা সহজ নয়। আমাদের শিল্পায়নের প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি অবদান পোশাক শিল্প ও  ওষুধ শিল্পের। এর বাইরে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কিছু শিল্প রয়েছে। যেমন চামড়া শিল্প, সিরামিকস, হালকা প্রকৌশল শিল্প ইত্যাদি। এগুলো খুব ছোট শিল্প নয়, তবে পোশাক কিংবা ওষুধ শিল্পের মতো বড়ও নয়। কিন্তু পোশাক শিল্পের মতো বড় শিল্প কেন আমরা  করতে পারলাম না? এর অন্যতম কারণ হলো, পোশাক শিল্পকে আমরা আলাদা একটা আইল্যান্ড হিসেবে বিবেচনা করছি। একদিক
Print Close  
Print Close  
News Source
            Top
            Top
 
Home / About Us / Benifits /Invite a Friend / Policy
Copyright © Hawker 2009-2010, Allright Reserved