[ অর্থসময় ] 2019-05-27
 
করের আওতা বাড়িয়ে রাজস্ব আদায় বাড়ানোয় নজর
 
আবু আলী 
 
আঞ্চলিক ও বহির্বিশ্বের দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশ রাজস্ব আহরণে পিছিয়ে রয়েছে। বাংলাদেশের জিডিপির তুলনায় রাজস্ব আহরণের পরিমাণ কম। গত ৫ বছরে দেশের রাজস্ব জিডিপির অনুপাত ছিল ১০ দশমিক ৭ শতাংশ। অথচ এশিয়ার অগ্রসর ও উদীয়মান অর্থনীতির দেশেগুলোর এ হার ২৫ দশমিক ৬ শতাংশ। 

২০১১-১২ অর্থবছর থেকে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে নেপালের রাজস্ব জিডিপি ১৯ দশমিক ৪ শতাংশ। ভারতের এ হার ১৯ দশমিক ৯ শতাংশ। সেখানে বাংলাদেশের ১০ দশমিক ৭ শতাংশ। সেখান থেকে উত্তরণে আগামী অর্থবছরের বাজেটে দিকনির্দেশনা দেবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। সূত্র জানিয়েছে, আগামী অর্থবছর ট্যাক্স জিডিপি অনুপাত ১৫ দশমিক ৩ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। এ জন্য কর পরিপালন নিশ্চিতকরণ ও করনেটের আওতা বৃদ্ধি করা হবে। অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের আওতায় নির্মিত ন্যাশনাল হাইওয়ে, এক্সপ্রেসওয়ে, ফ্লাইওভার, এলিভেটেড এবং এট গ্রেড এক্সপেসওয়ে, সাবওয়ে ইত্যাদি অবকাঠামো খাতকে শর্তসাপেক্ষে যে কর অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে আগামী অর্থবছরও তা অব্যাহত থাকবে। চিকিৎসা সেবা নিতে গিয়ে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চলাচলে যাতে কোনো সমস্যা না হয় সেজন্য আগামী অর্থবছরের বাজেটে নজর দেওয়া হচ্ছে। কোনো হাসপাতাল বা ডায়াগনস্টিক সেন্টার প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চলাচলের জন্য বিশেষ সেবা সুবিধা না রাখলে বর্তমানে প্রযোজ্য করের ৫ শতাংশ অতিরিক্ত কর আরোপ করা হবে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে কর অব্যাহতি যৌক্তিকীকরণের পাশাপাশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থা সৃষ্টির সাথে সম্পৃক্ত অগ্রাধিকার খাতগুলোর জন্য কর প্রণোদনা অব্যাহত রাখা হবে। এ ছাড়া তথ্যপ্রযুক্তির অগ্রযাত্রার সাথে তাল মিলিয়ে একটি আধুনিক ও প্রযুক্তিমুখী কর তথ্য ইউনিট গঠন করা হবে। 

এটি দেশের অন্যান্য সিস্টেমের সাথে আন্তঃসংযুক্ত থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তথ্য লাভ করবে এবং কর ফাঁকি উদ্ঘাটন ও করদাতা চিহ্নিতকরণে কাজ করবে। এনবিআর মূসকের ব্যাপারে বলেছে, বর্তমানে কর জিডিপি অনুপাত ১০-এর কাছাকাছি। অপরদিকে ভ্যাট-জিডিপি অনুপাত ৩ দশমিক ৬। অনলাইনভিত্তিক মূল্য সংযোজন কর ব্যবস্থা বাস্তবায়িত হলে আগামী পাঁচ বছরে ভ্যাট-জিডিপি অনুপাত ৪ দশমিক ৭০-এ উন্নীত হবে বলে আশা করছে এনবিআর। যার ফলে দেশের কর-জিডিপি অনুপাতও বাড়বে। এতে আরও বলা হয়, রাজনৈতিক নির্দেশনার আলোকে অগ্রাধিকারভিত্তিক খাত যেমন- রূপপুর, বেজা, হাইটেক পার্ক, পিপিপি ইত্যাদিকে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া অব্যাহত থাকবে। অর্থমন্ত্রী আগামী ১৩ জুনের বাজেট বক্তৃতায় বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত বলবেন বলে অর্থমন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। অন্যদিকে করের আওতা বাড়াতে ২০১৯-২০ অর্থবছরে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাজে লাগানোর পরিকল্পনা করছে এনবিআর। এনবিআরের নিজস্ব জনবল কম থাকায় এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ জন্য অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হবে ১০ হাজার জনবল। নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের কাজ হবে আয়কর আদায়যোগ্য এমন মানুষ খুঁজে বের করবেন। এনবিআর সূত্র জানিয়েছে, এ উদ্যোগের মাধ্যমে কেবল রাজধানী ঢাকা থেকে ৩০ থেকে ৪০ লাখ নতুন আয়করদাতা খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হবে। এর বাইরে বিভাগীয় শহর, জেলা ও উপজেলা থেকে আরও ৬০ লাখ সম্ভাব্য করদাতা সংগ্রহ করা হবে। 

এ জন্য জেলা ছাড়াও স্থাপন করা হবে উপজেলাভিত্তিক কর অফিস। এখানে অস্থায়ী ভিত্তিতে লোকবল নিয়োগ দিয়ে আয়কর দাতাদের চিহ্নিত করা হবে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘আগামী অর্থবছরে নতুন করে এক কোটি মানুষকে আয়করের আওতায় আনা হবে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাজেটে প্রাথমিকভাবে ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১৮ দশমিক ১ শতাংশ। চলতি বাজেটের আকার ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। আসন্ন বাজেটে ব্যয়ের পরিমাণ বাড়ছে ৫৮ হাজার ৬১৭ কোটি টাকা। এবারের বাজেটে বড় আকারের ব্যয় মিটাতে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। এটি জিডিপির ১৩ দশমিক ১ শতাংশের সমান। চলতি বছর রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য হচ্ছে ৩ লাখ ৩৯ হাজার ২৮০ কোটি টাকা। আগামী বাজেটে রাজস্ব আয়ের পরিমাণ ৩৮ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা বেশি ধরা হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিবছরের মতো এবারও মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৫ শতাংশের মধ্যেই বাজেটের ঘাটতি রাখা হয়েছে। নতুন বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা। চলতি বাজেটের ঘাটতি হচ্ছে ১ লাখ ২৫ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা।
Print Close  
Print Close  
News Source
            Top
            Top
 
Home / About Us / Benifits /Invite a Friend / Policy
Copyright © Hawker 2009-2010, Allright Reserved