সারাদেশে প্রতিষ্ঠিতব্য ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের মধ্যে বেশ কয়েকটি বিদেশি অর্থনৈতিক অঞ্চল করা হবে। এর মধ্যে সবার আগে শুরু হচ্ছে জাপানি অর্থনৈতিক অঞ্চল। এ অঞ্চলের উন্নয়নে কাজ শুরু করতে জাপানি প্রতিষ্ঠান সুমিতোমো করপোরেশনের সঙ্গে চুক্তি করেছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। গতকাল রবিবার রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে আনুষ্ঠানিকভাবে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মুখ্য সমন্বয়ক (এসডিজি) আবুল কালাম আজাদ, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সচিব সাজ্জাদুল ইসলাম, জাপান দূতাবাসের মিনিস্টার তাকেশি ইতো, জাইকা প্রতিনিধি ইয়োশিবুমি বিতো, বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে মোট এক হাজার একর জমিতে এই অর্থনৈতিক অঞ্চল হবে। প্রথম ধাপে প্রায় ৫০০ একর জমিতে শিল্পের জন্য অবকাঠামো উন্নয়নের বিষয়ে চুক্তি হয়েছে। পরে বাকি অংশ উন্নয়ন হবে। ভূমি অধিগ্রহণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ১৯৫ কোটি টাকা। জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) অবকাঠামো উন্নয়নে ২ হাজার ৫৮২ কোটি টাকা ব্যয় হবে। এই ব্যয়ে ভূমি উন্নয়ন, সড়ক, গ্যাস, বিদ্যুৎকেন্দ্র্র, পানি ও বর্জ্য পরিশোধনাগার স্থাপন করা হবে। আগামী ২০২২ সালে উন্নয়ন কাজ শেষ হবে। এখানে ২০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হবে বলে আশা করছে বেজা। অনুষ্ঠানে নজিবুর রহমান বলেন, জাপানিজ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার মাধ্যমে বাংলাদেশে বিনিয়োগে তারা আস্থা পাবে। এতে বাংলাদেশের ব্র্যান্ড ইমেজ বৃদ্ধি পাবে। দুদেশের ব্যবসায়িক সম্পর্ক আরও বৃদ্ধি পাবে বলে জানান তিনি। আবুল কালাম আজাদ বলেন, বিনিয়োগ পরিস্থিতি উন্নয়ন সাকেরর একটি অগ্রাধিকার বিষয়। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা যাতে সহজে কম সময়ে বিনিয়োগ করতে পারেন, সেই লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার।
বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী বলেনÑ বেজা কথায় নয়, কাজে বিশ্বাসী; এই চুক্তি তার প্রমাণ। এই চুক্তির ফলে বিশাল কর্মযজ্ঞের সূচনা হবে এবং পরিকল্পিত জাপানিজ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার মাধ্যমে তার পরিসমাপ্তি ঘটবে। তাকেশি ইতো বলেন, এই অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের জন্য জাপানি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আগ্রহ দেখিয়েছে। ভূমি উন্নয়নের কাজ শেষ হলে বিনিয়োগের জন্য চূড়ান্ত চুক্তি হবে। জাপানি বিনিয়োগকারীদের দ্রুত সেবা দিতে আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে বেজা। ২০১৩ সালে এই অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার আলোচনা শুরু হয়। ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান সফরে বিষয়টি চূড়ান্ত হয়। কিন্তু ২০১৫ সালে রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং পরের বছরে গুলশানের হলি আর্টিজানে সন্ত্রাসী হামলায় এ উদ্যোগ পিছিয়ে যায়। ২০১৭ সালের ২ মে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) সঙ্গে জাপান সরকারের মনোনীত প্রতিষ্ঠান সুমিতমোর করপোরেশনের একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়। এর পর ইতোমধ্যে সম্ভাব্যতা যাচাই, পরিবেশগত সমীক্ষা, ভূমি অধিগ্রহণসহ অন্যান্য প্রক্রিয়ার কাজ শেষ হয়েছে। এখন এ অঞ্চলের উন্নয়ন ও পরিচালনার জন্য বেজা ও সুমিতমো করপোরেশনের মধ্যে গতকাল চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। বেজার পক্ষে শোহেলের রহমান চৌধুরী ও সুমিতোমোর পক্ষে ইয়াসুশি ফুকুদা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।