[ শেষ পাতা ] 2020-08-11
 
পূর্ণাঙ্গ আন্তর্জাতিক রূপ পাচ্ছে ওসমানী বিমানবন্দর
 
অবশেষে পূর্ণাঙ্গ আন্তর্জাতিক রূপ পাচ্ছে সিলেট ওসমানী বিমানবন্দর। পৃথিবীর অষ্টম বৃহৎ নির্মাতাপ্রতিষ্ঠান চীনের পেইচিং আরবান কনস্ট্রাকশন গ্রুপ (বিইউসিজি) এরই মধ্যে গ্রাউন্ডওয়ার্ক শুরু করেছে। প্রকল্পের কার্যাদেশ পেয়ে ওই কোম্পানির অন্তত এক ডজন বিশেষজ্ঞ এখন ঢাকা ও সিলেটে অবস্থান করছেন। কভিড মহামারী দেখা না দিলে এত দিনে প্রকল্পটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হয়ে যেত। ইতিমধ্যে বিমানবন্দরটির সংস্কার ও সম্প্রসারণের জন্য আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের জোর প্রস্তুতি চলছে। আগামী মাসেই প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন দুই হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে সিলেটে লন্ডন থেকে আসা আন্তর্জাতিক ফ্লাইট ল্যান্ড করতে পারলেও চার শতাধিক আসনের সুপরিসর বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজ প্রয়োজনীয় জ্বালানি ও পূর্ণ আসনের যাত্রী নিয়ে উড্ডয়ন করতে পারছে না। রানওয়ের তেমন সক্ষমতা নেই। যদিও লন্ডন থেকে এ পরিমাণ যাত্রী ও জ¦ালানি নিয়ে ওই উড়োজাহাজ রওনা হয়ে সিলেটে অবতরণ করতে পারছে। এটা সম্ভব হচ্ছে লন্ডন থেকে যখন উড়োজাহাজটি সিলেটে আসে ততক্ষণে সব জ¦ালানি শেষ, ঢাকায় ফেরার মতো লোডে থাকে। নতুন প্রকল্পের আওতায় এখানে রয়েছে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ফুয়েলিং সিস্টেম, অর্থাৎ সুবিশাল জেট-১ ফুয়েল ডিপো। দেশের তৃতীয় বৃহৎ এই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্মাণকাজ আগামী তিন বছরের মধ্যেই শেষ করার লক্ষ্য নিয়ে তৎপর রয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্র্তৃপক্ষ (বেবিচক)।

বেবিচকের প্রকৌশল শাখা থেকে জানা গেছে, বেবিচকের বড় সব প্রকল্পই বড় বাধার মুখে পড়ছে। সিলেট এয়ারপোর্টের কাজের দরপত্র নিয়েও বঞ্চিত ঠিকাদাররা নানা অভিযোগ, অজুহাত তুলে প্রকল্পটিকে বাধার মুখে ফেলেন। শেষ পর্যন্ত সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনায় আজকের অবস্থানে আসে। একইভাবে কক্সবাজার রানওয়ে সম্প্রসারণের মতো অগ্রাধিকার প্রকল্পটিও সিন্ডিকেটের বাধার মুখে পড়ে আবারও পিছিয়েছে। এখন আরও ছয় মাস অপেক্ষা করতে হবে। ব্যয়ও বাড়বে অনেক। ঠিকাদাররা কাজ না পেয়ে প্রভাব খাটিয়ে এভাবে বিলম্ব ও অনিশ্চয়তার মুখে ফেলে দিচ্ছেন এসব প্রকল্প।

এ বিষয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী জানান, দেশের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোর যাত্রী ও কার্গো হ্যান্ডেলিং সক্ষমতার মান ও পরিধি বৃদ্ধির লক্ষ্যেই বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ হাতে নিয়েছে বেবিচক। এরই মধ্যে দুটি মেগা প্রকল্পসহ ২০ হাজার কোটি টাকার বিশাল কর্মযজ্ঞ শুরু করেছে সিভিল এভিয়েশন কর্র্তৃপক্ষ। আরও কয়েকটি প্রকল্পের দরপত্রের কাজ শেষ হয়েছে। প্রকল্পগুলোর কাজ আগামী দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে শেষ হবে। এসব উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শেষ হলেই বদলে যাবে বিমানবন্দরগুলোর চেহারা। এর মধ্যে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেরর থার্ড টার্মিনাল, সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও কক্সবাজার বিমানবন্দরের সংস্কার, সম্প্রসারণ ও উন্নয়নে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ সমাপ্ত করার তাগিদ দিয়েছেন। এর মধ্যে থার্ড টার্মিনালের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী। এর প্রায় ৫ শতাংশ কাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। দ্বিতীয় প্রকল্প হিসেবে সিলেট ওসমানীকে পূর্ণাঙ্গ আন্তর্জাতিক রূপ দিতে বিইউসিজিকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে কোম্পানির বিশেষজ্ঞরা ঢাকায় এসে নকশার খুঁটিনাটি বিশ্লেষণ করছেন। তিনি বলেন, আমাদের টাগের্ট আগামী তিন মাসের মধ্যে যেকোনো মূল্যে প্রধানমন্ত্রীকে দিয়ে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনায় আনুষ্ঠানিক ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা। এ ছাড়া কক্সবাজারের রানওয়ে সম্প্রসারণ প্রকল্পের প্রথম দরপত্র দুর্ভাগ্যজনকভাবে পিছিয়ে গেছে। সবকিছু ঠিক থাকার পরও তা বাতিল হয়ে গেছে, যা ছিল অনাকাক্সিক্ষত। সবকিছু যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেও যদি চূড়ান্ত পর্যায়ে গিয়ে সেটা বাতিল হয়ে যায়, তাহলে দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে কীভাবে? এখন কক্সবাজার রিটেন্ডার করা হলে প্রকল্পের সময় যেমন বাড়বে, ব্যয়ও বেড়ে যাবে অনেক। অথচ কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের কোল ঘেঁষে নীলাভ জলরাশির মাঝে বিশাল ৩৮০-এর মতো উড়োজাহাজ অবতরণ করবে এমন স্বপ্ন দেখেন খোদ প্রধানমন্ত্রী।

জানতে চাইলে বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের একটি আন্তর্জাতিক দৃষ্টিনন্দন টার্মিনাল ও কন্ট্রোল টাওয়ারের নির্মাণকাজ। টার্মিনাল বিল্ডিংয়ের সঙ্গে এয়ারফিল্ড গ্রাউন্ড লাইট অ্যাপ্রোন স্থাপনের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। সবকিছু যথাযথ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেই বিইউসিজিকে গত ২৪ মার্চ কার্যাদেশ দেওয়া হয়।

বেবিচক প্রধান প্রকৌশলী আবদুল মালেক জানান, বিইউসিজি তিন দশক ধরে সুনামের সঙ্গে বিভিন্ন আন্তর্জাতিকমানের বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন নির্মাণকাজ করে আসছে। সবকিছু বিবেচনায় সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরের কাজের জন্য বিইউসিজিকে কাার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে।

বেবিচকের এক কর্মকর্তা বলেন, ই-প্রকল্পের আওতায় একটি পূর্ণাঙ্গ আন্তর্জাতিক টার্মিনালের যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। নতুন বোর্ডিং ব্রিজ, ব্যাগেজ হ্যান্ডেলিং সিস্টেম, ফ্লাইট ইনফরমেশন ডিসপ্লে সিস্টেমসহ অন্যান্য অত্যাধুনিক টার্মিনাল বিল্ডিং সম্পর্কিত সব ধরনের যন্ত্রপাতি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যার ফলে বিমানবন্দরের যাত্রী সেবার মান বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে। বিমানবন্দর টার্মিনালে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য এই প্রকল্পের আওতায় পৃথক সাব-স্টেশন স্থাপনের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। এ ছাড়া বিমানবন্দরের নিরাপত্তার জন্য ফায়ার ফাইটিং সিস্টেম এবং স্বাচ্ছন্দ্যে টার্মিনাল ব্যবহারের জন্য সেন্ট্রাল এয়ার কন্ডিশনিং সিস্টেম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সিএএবি কর্র্তৃপক্ষ নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা ও বিমানবন্দরের নিরাপত্তায় নিয়োজিত সদস্যদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করে। সম্প্রতি এটি বিভিন্ন ধরনের অত্যাধুনিক নিরাপত্তাযন্ত্র ক্রয় করে। এর মধ্যে ছিল বিশ্বমানের ইডিএস সিস্টেম। কার্গোতে ইডিএস ও আরএথ্রি এরিয়া সংযোজনের মাধ্যমে কার্গো স্ক্যানিং আরও নিখুঁত এবং সম্পূর্ণ ঝুঁকিমুক্ত করা হয়। যাত্রী সেবার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে লিফট এক্সকেলেটর, এয়ারপোর্ট সাইনেজ ও নজরদারি জোরদার করার জন্য সিসিটিভি ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। পাশাপাশি উড়োজাহাজের জেট-১ জ্বালানি সরবরাহের জন্য অত্যাধুনিক ফুয়েল হাইড্রান্ট সিস্টেম স্থাপন করা হবে। এতে সব উড়োজাহাজ খুব সহজে ও নিরাপদে বিমানবন্দর থেকে জ¦ালানি সংগ্রহ করতে পারবে। তা ছাড়া বিমানবন্দর টার্মিনাল ব্যবহারকারী যাত্রীদের নিরাপদ পানি সরবরাহের লক্ষ্যে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট ও কার্যকর পয়ঃনিষ্কাশনব্যবস্থার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। উড়োজাহাজের পাইলট এবং এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারদের সুবিধার কথা মাথায় রেখে ও নিরাপদ বিমান উড্ডয়নের জন্য সম্পূর্ণ ভয়েস কন্ট্রোল কমিউনিকেশন্স সিস্টেম ও ভয়েস রেকর্ডিং রাডার সিস্টেম স্থাপন করা হবে।
Print Close  
Print Close  
News Source
            Top
            Top
 
Home / About Us / Benifits /Invite a Friend / Policy
Copyright © Hawker 2009-2010, Allright Reserved