[ পাতা-৭ ] 2020-11-30
 
টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক আধুনিকীকরণ প্রকল্প
ব্যয় বাড়ছে ৭৪১ কোটি টাকা
 
দেশের বিভাগীয় ও জেলা শহর এবং উপজেলাগুলোতে নির্ভরযোগ্য ও ব্যয় সাশ্রয়ী টেলিকমিউনিকেশন সুবিধাদি গড়ে তুলতে প্রকল্প ব্যয় নেওয়া হয় ২০১৭ সালের জুলাইয়ে। গেল জুনে প্রকল্পের বাস্তবায়নকাল শেষ হলেও তা সম্ভব হয়নি। এখন প্রকল্পের কাজ শেষ করতে নতুন করে ২ বছর সময় চাওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে বাড়তি ৭৪১ কোটি ৫৪ লাখ টাকাও চাইছে উদ্যোগী মন্ত্রণালয়। ব্যয় ও সময় বৃদ্ধির এ প্রস্তাব জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী বৈঠকে উপস্থাপনের প্রস্তুতি চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন।

প্রকল্পের উদ্যোগী মন্ত্রণালয় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় বলছে, ভিশন-২০২১ এর লক্ষ্য সামনে রেখে বর্তমান সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য অর্জনে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর অবকাঠামো নির্মাণ এবং সেইসঙ্গে টেলিযোগাযোগ সেবা প্রদানকারী যন্ত্রপাতি আধুনিকীকরণ অত্যাবশ্যক। বাংলাদেশের সব বিভাগ, জেলা, উপজেলা ও গ্রোথ সেন্টারে স্থাপিত টেলিফোন এক্সচেঞ্জগুলো গড়ে ১০ থেকে ১৫ বছর ধরে চালু থাকায় এগুলোর আয়ুষ্কাল এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। এসব এক্সচেঞ্জের প্রযুক্তিও বর্তমানে সেকেলে এবং স্পেয়ার পার্টস না পাওয়ার কারণে এগুলো আর দীর্ঘ সময় চালানো সম্ভব নয়। ফলে জরুরি ভিত্তিতে প্রতিস্থাপন করা না হলে এক্সচেঞ্জগুলো অচিরেই পর্যায়ক্রমে বন্ধ হয়ে যাবে। এ অবস্থায় প্রকল্পটি নেওয়া হয়।

কমিশন সূত্রে জানা গেছে, মূল প্রকল্পটি একনেক সভায় অনুমোদিত হয় ২০১৭ সালের ১৭ অক্টোবর। মূল অনুমোদিত ব্যয় ছিল ২ হাজার ৫৭৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। এখন প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে মোট ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ৩ হাজার ৩১৪ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। এছাড়া ২০২০ সালের জুন মেয়াদে এটি বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। মেদাদ শেষেও কাজ শেষ না হওয়ায় ২০২২ সালের জুন মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। একনেকে অনুমোদন পেলে সময় বাড়বে দুই বছর, ব্যয় বাড়বে ৭৪১ কোটি ৫৪ লাখ টাকা বা মূল ব্যয়ের প্রায় ২৯ শতাংশ।

সংশোধনী প্রস্তাবনায় বাস্তবায়নকারী সংস্থা ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ বলছে, মূল প্রকল্পটি ২০১৭ সালের ১৭ অক্টোবরে পাস হলেও এক্সিম ব্যাংক অব চায়না ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে ঋণচুক্তি সই হয় ২০১৮ সালের ১০ এপ্রিল। অর্থাৎ অনুমোদনের প্রায় ১৮ মাস পরে কাজ শুরু হয়। আবার ৪২ জেলায় জিপন স্থাপনে অতিরিক্ত সময় প্রয়োজন। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে সব বিভাগীয় ও জেলা শহর এবং উপজেলাগুলোতে নির্ভরযোগ্য ও ব্যয় সাশ্রয়ী টেলিকমিউনিকেশন সুবিধাদি গড়ে তোলা, দেশে টেলিডেনসিটি বৃদ্ধি এবং টেলিএক্সেস সুবিধা বাড়ানো সম্ভব হবে বলে মনে করে এ বিভাগ।

মন্ত্রণালয় বলছে, বিটিসিএলের আইপি কোর সিস্টেমও দীর্ঘদিন আগের এবং সীমিত ক্ষমতাসম্পন্ন। এছাড়া বাস্তবতার কারণে একটি সময়োপযোগী গ্রাহকবান্ধব স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা প্রয়োজন। যার মাধ্যমে জনগণের কাছে টেলিযোগাযোগ সেবা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে। পাশাপাশি দক্ষ জনবল তৈরিতে আধুনিক ইনস্ট্রুমেন্টস এবং টুলস প্রয়োজন। বর্তমানে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার জন্য ইউনিয়ন পর্যন্ত ব্রডব্যান্ড সেবা সম্প্রসারিত হচ্ছে। তাই দেশব্যাপী বিস্তৃত একটি আধুনিক ও শক্তিশালী আইপি নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা অরিহার্য।

প্রকল্পের মূল কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছেÑ তিনটি আইপি মাল্টিমিডিয়া সাবসিস্টেম প্লাটফর্ম স্থাপন, ৬৪ জেলায় অপটিক্যাল ট্রান্সপোর্ট নেটওয়ার্ক স্থাপন, ব্রডব্যান্ড সুবিধা দেওয়ার জন্য জিগাবিট প্যাচিভ অফটিক্যাল নেটওয়ার্ক (জিপিওএন) ও অ্যাসেস গেটওয়ে স্থাপন, অফটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল এবং কপার নেটওয়ার্কের জন্য আউটসাইড প্লান্ট ওয়ার্ক, বিটিসিএলের আইপি নেটওয়ার্ক স্থাপন, দেশব্যাপী প্রায় ১ হাজার ৩১৮ কিলোমিটার ভূ-গর্ভস্থ ব্যাকবোন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক ও যন্ত্রপাতি স্থাপন, নেটওয়ার্ক অপারেশন এবং রক্ষণাবেক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন, আধুনিক বিজনেস অপারেশন সাপোর্ট সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে সার্ভিস দেওয়া ইত্যাদি।

প্রকল্পের বিভিন্ন অঙ্গে বাড়তি কাজ যোগ হওয়া ও খরচ বাড়ায় সংশোধনীতে বাড়তি অর্থ চাওয়া হয়েছে। মূল প্রকল্পে ৫২টি জিপিওএন (জিপন) সাইটের সংস্থান রয়েছে, যা মোট ২২টি জেলা সদরে গ্রাহকদের চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হবে। কিন্তু বিটিসিএলের বিভিন্ন আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে প্রকল্প কার্যালয়ে অবশিষ্ট ৪২টি জেলা সদরে জিপন সাইটের চাহিদা পাওয়ার জন্য নতুনভাবে ৪২টি সাইট স্থাপনের জন্য যন্ত্রপাতি বাবদ ৩৬০ কোটি টাকা বাড়তি ব্যয় হবে। আবার, মূল প্রকল্প প্রস্তাবে পূর্ত কাজের জন্য ৭৯ কোটি ৪৩ লাখ টাকা বরাদ্দ ছিল। এ বরাদ্দ করা টাকা দিয়েই জরুরি ভিত্তিতে ২৮৮টি সীমানা প্রাচীর নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। পিডব্লিউডি রেট শিডিউল পরিবর্তনের কারণে ২৮৮টি সীমানা প্রাচীর নির্মাণের জন্য মোট ৪১ কোটি ২৮ লাখ টাকা বেশি ব্যয় হবে। একই সঙ্গে বিটিসিএলে বর্তমানে পর্যাপ্ত পরিমাণ আইপিভি-৪ ব্লক মজুত না থাকায় আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দর পদ্ধতিতে ক্রয় প্রক্রিয়াকরণে প্রায় ১৫ কোটি টাকা ফরেইন এক্সচেঞ্জ প্রয়োজন হবে। অনুমোদনকালীন সময়ের চেয়ে বর্তমানে যন্ত্রপাতি আমদানিতে কাস্টমস ট্যারিফ আগের তুলনায় বেড়েছে। ৪২টি জেলায় জিপিওএন সাইট স্থাপনে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আমদানিতে সিডি ভ্যাট খাতে অর্থের প্রয়োজন হবে।
Print Close  
Print Close  
News Source
            Top
            Top
 
Home / About Us / Benifits /Invite a Friend / Policy
Copyright © Hawker 2009-2010, Allright Reserved