[ প্রথম পাতা ] 2020-11-30
 
চট্টগ্রাম বন্দর সম্প্রসারণ কঠিন হয়ে পড়েছে
 
চট্টগ্রাম বন্দরের সম্প্রসারণ কঠিন হয়ে পড়েছে। বন্দরের চারপাশে সরকারি, বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে ওঠায় এটির অবকাঠামো বৃদ্ধি এক প্রকার অসম্ভব হয়ে পড়েছে। ফলে এই বন্দরকে কেন্দ্র করে তার আশপাশের সীমানা পরিধি সম্প্রসারণের মাধ্যমে সেবা কার্যক্রম বৃদ্ধির সুযোগ সংকুচিত হয়ে গেছে। এর ফলে চট্টগ্রাম বন্দরের পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল (পিসিটি) নির্মাণকাজ শুরু করতে গিয়ে কয়েকটি সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে স্থানচ্যুত করতে হয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ জানান, বন্দর কেন্দ্রিক আরো কিছু পরিষেবা সম্প্রসারণের চিন্তা থাকলেও প্রয়োজনীয় জমি না থাকায় তা সম্ভব হচ্ছে না। চট্টগ্রাম বন্দরের সম্প্রসারিত বে টার্মিনাল নির্মাণের প্রাথমিক কাজ শুরু হলেও তার সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরের সড়ক যোগাযোগ সহজ করা যাচ্ছে না। বিশেষ করে বে টার্মিনাল এলাকায় প্রথমে যে কনটেইনার ডেলিভারি ইয়ার্ড নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তার সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরের জেটির যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। বন্দরের জেটি থেকে প্রায় ছয় কিলোমিটার দূরত্বের সমুদ্র উপকূলীয় ডেলিভারি ইয়ার্ড পর্যন্ত সড়ক যোগাযোগ নিয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষ চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারছে না বলে জানা যায়।

চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে কনটেইনার জট নিরসনের লক্ষ্যে জাহাজ থেকে জেটিতে কনটেইনার নামানোর পর ঐ বন্ডেড কনটেইনারগুলো সরাসরি বে টার্মিনালের ডেলিভারি ইয়ার্ডে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। ফলে ডেলিভারি ইয়ার্ড থেকেই যাতে কনটেইনারগুলো কাস্টমস প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সহজে নিয়ে যাবে। এতে করে বন্দরের ভেতরটা যেমন কনটেইনার জটমুক্ত হবে, একই সঙ্গে আমদানিকারকগণ সহজে তাদের পণ্য নিজ নিজ গন্তব্যে নিয়ে যেতে পারবে। চট্টগ্রাম শহরের ভেতর দিয়ে প্রতিদিনকার বন্দরমুখী হাজার হাজার ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, লরির চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে। যার ফলে নগরীতে যানজট কমে আসবে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জেটি থেকে কনটেইনার হালিশহরের বিপরীতে বে টার্মিনালে নেওয়ার জন্য ইতিমধ্যে আমেরিকার ঈগল রেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। ঈগল রেল কোম্পানি রোপওয়ের মাধ্যমে ডেলিভারি ইয়ার্ডে পৌঁছাতে পারলেও তা আর্থিকভাবে সাশ্রয়ী হবে না বিধায় ঐ প্রস্তাবনা থেকে ফিরে আসে। আবার সরাসরি সড়ক যোগাযোগও সম্ভব নয়। কারণ ঐ পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি অবকাঠামো ও বাসাবাড়ি থাকায় সম্ভব নয়। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বে টার্মিনাল পর্যন্ত ফ্লাইওভার নির্মাণ করা যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে।

চট্টগ্রাম বন্দর ১ হাজার ৬০০ একরের বেশি জমির ওপর গড়ে উঠেছে। কিন্তু বন্দরের জমির বড় একটি অংশ সরকারি, আধা সরকারি, বেসরকারি ও ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের নিকট লিজ ও ভাড়া দেওয়া হয়েছে। বন্দর তার জমিসমূহ স্বল্পমেয়াদি লিজ ও ভাড়ায় প্রদান করলেও ঐ সব প্রতিষ্ঠান যে অবকাঠামো ও স্থাপনা গড়ে তুলেছে তা একপ্রকার স্থায়ী বন্দোবস্তের ন্যায়। ফলে এগুলো সরিয়ে ফেলা সহজ কাজ নয়। চট্টগ্রাম বন্দর তার কর্ণফুলী নদীর উভয় পাড়ে শিল্পকারখানা, জেটি, গুদামসহ অসংখ্য প্রতিষ্ঠানকে ভাড়া ও লিজ প্রদান করেছে। বাংলাদেশের প্রধান নৌস্থাপনাও চট্টগ্রাম বন্দর ঘেঁষে রয়েছে। তেল সেক্টরের কেন্দ্রীয় স্থাপনাসমূহ কর্ণফুলী নদীর পাড়ে। আরো রয়েছে ড্রাইডকসহ অনেক সহায়ক স্থাপনা। বন্দরের অদূরে রয়েছে দুটি রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল। রয়েছে অনেকগুলো বেসরকারি কনটেইনার ডিপো। পতেঙ্গা এলাকায় রয়েছে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। ঐ বিমানবন্দরে শহর থেকে পৌঁছাতে সময় লাগে ২/৩ ঘণ্টা। কারণ বিমানবন্দর অভিমুখী ঐ সড়ক দিয়ে পণ্য ও যাত্রীবাহী শতশত যানবাহন চলাচল করে। ফলে ঐ সড়কে সবসময় যানজট লেগেই থাকে। এ পরিপ্রেক্ষিতে ইতিমধ্যে নগরীর লালখান বাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত উড়ালসেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। তাও আবার বন্দরের পাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে। ফলে চট্টগ্রাম বন্দরকে বিভিন্ন ধরনের স্থাপনা ও অবকাঠামো ঘিরে ধরেছে। বন্দর সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞজনের মতে, চট্টগ্রাম বন্দরকে আর কোনোভাবেই সম্প্রসারণ করা বা বাড়ানো সম্ভব নয়। তাদের মতে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বন্দরসমূহ দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার আওতায় রাখা হয়েছে। সিঙ্গাপুরের মতো ছোট দেশেও বন্দরকে বাড়ানোর জন্য অনেক খালি জায়গা রাখা হয়েছে।

এদিকে, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রশাসন) মো. জাফর আলম ইত্তেফাককে বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর যে সময় প্রতিষ্ঠা হয় তখন বন্দর সংলগ্ন ও কর্ণফুলীর তীরবর্তী এলাকায় যে স্থাপনার জন্য জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল তা সেই সময়কার জন্য জরুরি ছিল। তখন এর উত্তম ব্যবহার ছিল। বর্তমান অবস্থায় দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিসহ আমদানি-রপ্তানির পরিমাণ বৃদ্ধির কারণে বন্দর সম্প্রসারণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। যুগের চাহিদাকে কোনোভাবেই অস্বীকার করা সম্ভব নয়।
Print Close  
Print Close  
News Source
            Top
            Top
 
Home / About Us / Benifits /Invite a Friend / Policy
Copyright © Hawker 2009-2010, Allright Reserved