[ প্রথম পাতা ] 2020-11-30
 
ঝুঁকি বাড়াচ্ছে আকাশপথ
কভিড সনদ ছাড়াই বিদেশ থেকে যাত্রী আনছে বিমান সংস্থাগুলো
 
ইউরোপ-আমেরিকায় শুরু হয়েছে করোনা মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ। এই ঢেউ যাতে বাংলাদেশে আছড়ে পড়তে না পারে, সে ব্যাপারে সতর্কতামূলক কঠোর অবস্থান নিয়েছে সরকার। এর অংশ হিসেবে আকাশপথে আগত যাত্রীদের জন্য করোনার নেগেটিভ সনদ বাধ্যতামূলক করার কথা বলা হয়েছে সরকারের শীর্ষপর্যায় থেকে। তবে প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন এয়ারলাইনসের ফ্লাইটে সনদ ছাড়াই যাত্রী দেশে আসছে।

এই অবস্থায় দেশের করোনা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। উদ্বেগ জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরও। সনদ ছাড়া যাতে বিমান সংস্থাগুলো যাত্রী পরিবহন না করে সে বিষয়ে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষকে (বেবিচক) অনুরোধ জানিয়েছে তারা।

তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সরকারের শীর্ষপর্যায় থেকে করোনার সনদ বাধ্যতামূলক করার কথা বলা হলেও এসংক্রান্ত নির্দেশনা জারি হয়নি। ফলে আগের নির্দেশনা মেনে বাংলাদেশিদের সনদ ছাড়াই পরিবহন করছে বিমান সংস্থাগুলো।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের হেলথ ডেস্ক সূত্র জানায়, শুধু নভেম্বরেই চার হাজার ১০৭ জন যাত্রীকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে। গত শনিবার ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন বিমান সংস্থায় আসা যেসব যাত্রীর করোনার সনদ ছিল না, তাদের আশকোনায় হজ ক্যাম্প ও দিয়াবাড়িতে স্থাপিত কোয়ারেন্টিন সেন্টারে পাঠানো হয়েছে। দেশে করোনাভাইরাসের আবির্ভাবের পর থেকে এ পর্যন্ত ১৮ হাজার ৫৮১ জনকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে। 

করোনামুক্ত সনদ ছাড়া যাত্রীদের যাতে কোনো বিমান কর্তৃপক্ষ পরিবহন না করে, সে বিষয়ে বেবিচককে বারবার বলা সত্ত্বেও তারা কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. শাহনীলা ফেরদৌসী। ‘কভিড-১৯ এবং স্বাস্থ্যবিষয়ক হালনাগাদ তথ্য অবহিতকরণ সভায়’ তিনি এ অভিযোগ করেন।

ডা. শাহনীলা বলেন, ‘করোনামুক্ত সনদ ছাড়া বিদেশ থেকে যাঁরা আসছেন, সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে তাঁদের দিয়াবাড়িতে কোয়ারেন্টিন করা হয়। তবে আগামীতে যাত্রীর সংখ্যা এতই বেশি হবে যে তাঁদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করা একটি চ্যালেঞ্জ। এ ক্ষেত্রে এসব যাত্রীকে আন্তর্জাতিক প্রবশপথে করোনা পরীক্ষা করাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’

করোনামুক্তির সনদ না নিয়ে আসা যাত্রী বাড়ছে উল্লেখ করে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কর্মরত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ডা. শাহরিয়ার সাজ্জাদ গতকাল রবিবার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘করোনামুক্তির সনদ বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত আমরা বাস্তবায়ন করছি। যারা সনদ ছাড়া আসছে তাদের আমরা প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে পাঠাচ্ছি। ইতিমধ্যে কোয়ারেন্টিন সেন্টারের সিট পূর্ণ হয়ে গেছে। খালি না হলে কাউকে রাখা যাবে না।’

সনদ নিয়ে এলে যাত্রীদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে পাঠানোর দরকার পড়ত না মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে পরিস্থিতি জানানো হয়েছে। নতুন করে এখন আদেশ দেওয়া হয়েছে, কোয়ারেন্টিন সেন্টারে এখন নমুনা সংগ্রহের বুথ ও ল্যাব স্থাপন করা হবে। ওখানেই করোনা পরীক্ষা করে যদি রিপোর্ট নেগেটিভ হয়, বাসায় হোম কোয়ারেন্টিনে চলে যাবে। আর পরিজিভ হলে হাসপাতালে পাঠানো হবে।’

বুথ ও ল্যাব স্থাপন হওয়ার আগ পর্যন্ত যেসব যাত্রী আসবে তাদের জন্য কী ব্যবস্থা করা হবে জানতে চাইলে ডা. শাহরিয়ার বলেন, ‘কাজ শুরু হয়েছে, সপ্তাহখানেকের মধ্যে হয়ে যাবে বলে আশা করছি। কোয়ারেন্টিন সেন্টার থেকে মেয়াদ শেষ করে কেউ কেউ বেরও হয়ে যাচ্ছে। খালি হলে সেখানে পাঠানো হবে।’

করোনা সনদ ছাড়া কেন যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে জানতে চাইলে টার্কিশ এয়ারলাইনস বাংলাদেশের সেলস অ্যান্ড ট্রাফিক এজেন্ট এজাজ কাদরি গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত বিদেশি নাগরিকদের জন্য করোনামুক্তির সনদ বাধ্যতামূলক। বাংলাদেশি কেউ সনদ নিয়ে না আসলে তাদের বহন করা যাবে না, এমন কোনো নির্দেশনা নেই।’

তবে তাঁরা সনদ ছাড়া না আসতে উৎসাহিত করেন দাবি করে তিনি বলেন, ‘কেউ সনদ ছাড়া এলে সেটা বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ প্রয়োজন অনুসারে ব্যবস্থা নিচ্ছে।’

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ এইচ এম তৌহিদ উল আহসান বলেন, ‘কভিড-১৯ নেগেটিভ সনদ ছাড়া বাংলাদেশি নাগরিকদের দেশে আসতে বাধা নেই। যদি কেউ আসে তাকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে পাঠাতে হবে—এখন পর্যন্ত এটাই নির্দেশনা।’ সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও করণীয় নিয়ে গত ১২ অক্টোবর বেবিচক ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের এক নির্দেশনায় বলা হয়, ‘বিদেশ থেকে বাংলাদেশে আগমনকারী সব যাত্রীর করোনা নেগেটিভ সনদ যাচাই করতে হবে। প্রয়োজন অনুসারে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা নিতে হবে।’ ওই চিঠিতে আরো বলা হয়, গত ২২ সেপ্টেম্বর মন্ত্রিপরিষদসচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভার সিদ্ধান্তের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বেবিচকসহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থাকে বলা হয়েছে।
Print Close  
Print Close  
News Source
            Top
            Top
 
Home / About Us / Benifits /Invite a Friend / Policy
Copyright © Hawker 2009-2010, Allright Reserved