সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে অর্থ পেয়ে দেশের ছোট ও মাঝারি বা এসএমই খাতের অবস্থার উন্নতি হলেও ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পগুলোর উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে পুরোপুরি ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারেনি। গতকাল রবিবার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত অনলাইন সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যেসব উদ্যোক্তা অবদান রাখছে তাদের বেশির ভাগ হচ্ছে কুটির ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। তাই তাদের অর্থনৈতিক উত্তরণের মাধ্যমেই প্রকৃত অর্থনীতির অবস্থা সচল করা সম্ভব হবে। এতে দেশে উৎপাদন, কর্মসংস্থান ও আর্থিক লেনদেন বৃদ্ধি পাবে। তাই সিএসএমই খাতের সার্বিক উন্নয়নে জাতীয় শিল্পনীতিতে নতুন সেবার কথা ভাবা হচ্ছে বলে তিনি জানান।
মন্ত্রী আরো বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের ক্ষুদ্র ও ছোট ব্যবসায়ীরা অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তাই চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের কথা মাথায় রেখে শিল্প খাতে নতুন নীতি প্রণয়ন করা হবে। ক্ষুদ্র ও কুটির উদ্যোক্তাদের ট্রেড লাইসেন্সের পাওয়ার ক্ষেত্রে যে সমস্যা তৈরি হচ্ছে তা দ্রুত সমাধান করা হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সিএসএমই খাতের অবদান ২৫ শতাংশ, অথচ চীনে ৫০ শতাংশ, শ্রীলঙ্কা ও ভিয়েতনামে ৪০ শতাংশ ও ফিলিপাইনে ৩৫ শতাংশ। আবার এই অতিমারিতেও বৈদেশিক মুদ্রা পাঠিয়ে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা সচল রেখেছেন প্রবাসী শ্রমিকরা। এতে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে বাংলাদেশ বিশ্বে অষ্টম স্থান অর্জন করেছে। এরই মধ্যে দেশের রিজার্ভ ৪০.৯৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে বেড়ে ৪১ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে। আবার চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে দেশের রপ্তানি আয় বেড়েছে।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান। তিনি বলেন, করোনা সব কিছু থমকে দিয়েছে। বাঙালিরা ঐতিহাসিকভাবে লড়াকু। তাই করোনার ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে সক্ষম হচ্ছে। তবে যে ক্ষতি হয়েছে তা কাটিয়ে উঠতে দরকার সমন্বিত পরিকল্পনার। অনুষ্ঠানে পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান খালেকুজ্জামান বলেন, উৎপাদন বৃদ্ধি করার জন্য দক্ষ জনবল তৈরি করা জরুরি। তাই শিক্ষা ও শিল্প খাতের মধ্যে একটা যোগসূত্র তৈরি করা দরকার। তিনি আরো বলেন, বর্তমানে অঞ্চলভিত্তিক প্রণোদনা দেওয়া জরুরি। প্রযুক্তির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে না পারলে উৎপাদন বৃদ্ধি করা যাবে না বলে তিনি মনে করেন। অর্থনীতিতে ক্ষুদ্র, মাঝারিসহ সব ধরনের উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীর উন্নয়নের কথা ভাবা জরুরি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই ও স্পেশাল প্রগ্রাম বিভাগের জেনারেল ম্যানেজার হোসনে আরা সিখা বলেন, সরকার যে প্যাকেজ ঘোষণা করেছে তার ৭৫ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়া সম্ভব হয়েছে। ট্রেড লাইসেন্সের যে সমস্যা আছে তা দ্রুত সমাধান করা উচিত বলে তিনি মনে করেন। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের চেয়ারম্যান মোস্তাক হাসান বলেন, ট্রেডিং লাইসেন্স নিয়ে যে সমস্যা হচ্ছে, তা ব্যাংকে আইডি খুললেই সমাধান করা সম্ভব। এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন মাসুদুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে অর্থনীতিতে নব্বইয়ের দশকের পর থেকে পরিবর্তন এসেছে। তবে বর্তমানে এসএমইর সংজ্ঞা নিয়ে যে সমস্যা হচ্ছে, তা দ্রুত ঠিক করা হবে বলে মনে করেন তিনি।