[ শেষের পাতা ] 2020-11-30
 
মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে কঠোর অবস্থানে বাংলাদেশ
 
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের নতুন সরকারের সঙ্গে কাজ শুরু করতে চায় বাংলাদেশ। এ লক্ষ্যে আস্থা বাড়ানোর পদক্ষেপ হিসেবে দেশটির বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে কঠোর অবস্থান নিয়েছে ঢাকা।

এছাড়া দুর্গম পাহাড়ি এলাকার অরক্ষিত সীমান্ত অথবা সমুদ্রপথে বাংলাদেশে ঢুকে বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপগুলো নাশকতা চালাতে পারে- এমন আশঙ্কাও রয়েছে নিরাপত্তা বাহিনীর।

অভিযোগ রয়েছে মিয়ানমারের আরাকান আর্মি, আরাকান লিবারেশন পার্টির (এএলপি) মতো গ্রুপগুলো বাংলাদেশের পাহাড়ি অঞ্চলের ক্রিয়াশীল বিভিন্ন সশস্ত্র গ্রুপকে অস্ত্র সরবরাহ করে থাকে।

আরাকান আর্মি মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী হলেও তারা মুসলিম সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাবিরোধী। এ কারণেও সংগঠনটির ব্যাপারে বাংলাদেশের অবস্থান কঠোর। 

সম্প্রতি এএলপি নামে একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন মিয়ানমারের সরকারের সঙ্গে শান্তিচুক্তি করেছে। তাদের মাঠপর্যায়ের অস্ত্রধারীরা এখন পার্বত্য চট্টগ্রামের সশস্ত্র গ্রুপগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করে অস্ত্র পাচারের চেষ্টা করছে।

তাদের প্রতিরোধ করতেও টহল জোরদার করা হয়েছে। পাহাড়ে বিজিবির তিন ব্যাটালিয়ন বাড়ানো হচ্ছে। 

মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের ২৮৮ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। এ সীমান্ত দুর্গম হওয়ার কারণে অনেক স্থান অরক্ষিত। সীমান্তসংলগ্ন বাংলাদেশ অংশে ১০৩৬ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে।

এ সড়কে টহল বাড়ানো যাবে। এছাড়া সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়াও নির্মাণ করা হচ্ছে। মিয়ানমার সীমান্ত খুবই অপরাধপ্রবণ।

ইয়াবাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। সীমান্তে টহল বাড়ানোর উদ্যোগ নিলে এসব অপরাধ কমে আসবে।

এছাড়া মিয়ানমারের কিছু আচরণে বাংলাদেশ খুবই অসন্তুষ্ট। সীমান্তে বেশ কিছু মাইন পুঁতে রেখেছে মিয়ানমার বাহিনী। ১৫ মার্চ বান্দরবান সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণের ঘটনায় মনিরুল্লাহ নামের এক রোহিঙ্গা নিহত হন।

জুলাইয়ে একই সীমান্তে দুটি তাজা মাইন পাওয়ার পর তা ধ্বংস করা হয়। 

বাংলাদেশের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যেসব মাইন উদ্ধার করা হচ্ছে তা এন্টি পার্সোনাল। সামরিক বাহিনী ছাড়া এ ধরনের মাইন কেউ তৈরি বা ব্যবহার করতে পারে না।

এ বিষয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী অনেকবার বৈঠক করতে চেয়েও ব্যর্থ হয়েছে। কারণ বৈঠকে উপস্থিত হওয়ার কথা বলেও মিয়ানমার পক্ষ আসেনি। 

এমনিতে বাস্তুচ্যুত হওয়া রোহিঙ্গারা রাখাইনে প্রবেশ করতে চাইলে মিয়ানমার সেনাবাহিনী গুলি চালায়। কিন্তু বাংলাদেশে ইয়াবা পাচারের সঙ্গে যুক্ত রোহিঙ্গাদের নির্বাধায় চলতে দেয়া তারা। ইয়াবা পাচারকারী রোহিঙ্গারা রাজধানী নেইপিদো পর্যন্ত চলে যেতে পারে। 

পার্বত্য চট্টগ্রামে সশস্ত্র গ্রুপগুলোর সেব সদস্য নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে পড়েছে স্বীকারোক্তিতে তারা জানিয়েছে যে, মিয়ানমার ও ভারতের মিজোরামে আশ্রয় পেয়ে থাকে তারা।

আস্থা বাড়াতে বাণিজ্য বৃদ্ধির সুপারিশ : মিয়ানমারের সঙ্গে আস্থা বাড়াতে বাণিজ্য বৃদ্ধির পদক্ষেপ নেয়ার সুপারিশ করেছেন নিরাপত্তা কর্মকর্তারা। তাদের মতে, মিয়ানমার সীমান্তে একটি স্থলবন্দর স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এটি চালু হলে চোরাচালান কমবে। 

কর্মকর্তারা বলেন, মিয়ানমার থেকে বার্মিজ কাপড়, পেঁয়াজ, ছোলাসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক কিছু আমদানি হয়ে থাকে। চোরাচালান ছাড়া বৈধপথে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে এগুলো আমদানিতে খরচ বেশি হয়।

স্থলবন্দর হলে মিয়ানমারের সঙ্গে বৈধ বাণিজ্য বাড়বে। এতে দু’দেশের সম্পর্কে আস্থা বাড়বে, যা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ইতিবাচক পরিবেশ সৃষ্টি করবে। 

মিয়ানমারের সম্প্রতি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে অং সান সু চির এনএলডি জয়ী হয়েছে। অবশ্য রাখাইন রাজ্যে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে নয়টি টাউনশিপে ভোটগ্রহণ স্থগিত রয়েছে।

আটটি টাউনশিপে ভোট হয়েছে। এতে আঞ্চলিক দলগুলো ভালো করেছে। আরাকান ন্যাশনালিস্ট পার্টি ৯ আসন পেয়েছে। আর সু চির এনএলডি পেয়েছে ৪ আসন।

৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে স্থগিত ৯টি টাউনশিপে ভোট হবে। আরাকান আর্মিসহ বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপগুলো ভোট করার উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে। ফলে রাখাইন রাজ্যে এখন পরিস্থিতি অনেক শান্ত।

তাই মিয়ানমারে নতুন সরকার গঠন হলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন আলোচনা শুরু করার পরিবেশ সৃষ্টি হবে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা জানান, মিয়ানমারের সঙ্গে ভারত সম্পর্ক জোরদার করেছে। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব ও সেনাপ্রধান একসঙ্গে মিয়ানমার সফর করেছেন।

এছাড় দেশ দুটি যৌথভাবে অনেক কাজ করছে। মিয়ানমারের ওপর দিয়ে ভারত-মিয়ানমার-থাইল্যান্ড ত্রিদেশীয় সড়ক নির্মাণ হচ্ছে। সড়কটি ইস্ট-ওয়েস্ট করিডোরে যুক্ত হয়ে লাওস, ভিয়েতনাম পর্যন্ত সংযোগ স্থাপন করবে।

মিয়ানমারের কালাদান নদী ব্যবহার করে ভারত মিজোরাম রাজ্যের অপর অংশের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করছে। ভারত এত কিছু করলেও বাংলাদেশ মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করতে পারছে না।

Print Close  
Print Close  
News Source
            Top
            Top
 
Home / About Us / Benifits /Invite a Friend / Policy
Copyright © Hawker 2009-2010, Allright Reserved