[ পাতা ১২ ] 2020-11-30
 
ওয়েবিনারে অভিমত
শিল্পনীতিতে করোনার প্রভাব মোকাবিলার কৌশল চাই
 
অতিমারি করোনার কারণে দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্য, আমদানি-রপ্তানি এবং কর্মংস্থানের ক্ষেত্রে তা বেশ বোঝা যাচ্ছে। বিশেষ করে অতিক্ষুদ্র, কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাত বেশি বেকায়দায় রয়েছে। এ ক্ষতি কাটিয়ে টেকসই উন্নয়নের পথে থাকতে সুস্পষ্ট নীতি নির্দেশনা প্রয়োজন। শিল্পনীতিতে এ বিষয়গুলোকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও উদ্যোক্তারা।

শিল্পনীতিবিষয়ক এক ওয়েবিনারে গতকাল রোববার এমন মতামত দিয়েছেন তারা। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) ওয়েবিনারের আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন। ঢাকা চেম্বার সভাপতি শামস মাহমুদের সভাপতিত্বে ভার্চুয়াল মাধ্যমে আয়োজিত এ সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান। সম্মানিত অতিথি ছিলেন এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাসুদুর রহমান।

ওয়েবিনারে জানানো হয়, নতুন জাতীয় শিল্পনীতির কাজ চলছে। বর্তমান নীতি প্রণয়ন করা হয় ২০১৬ সালে। প্রতি পাঁচ বছরে একবার এ নীতি সংস্কার এবং সমন্বয় করে নতুন শিল্পনীতি ঘোষণা করে সরকার।

শিল্পমন্ত্রী বলেন, করোনার ক্ষতি থেকে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের এসব কার্যক্রমের প্রশংসা করেছে। করোনা পরিস্থিতিতে যে কোনো দুর্যোগ মোকাবিলায় টেকসই দিকনির্দেশনার বিষয়টি এবারের জাতীয় শিল্পনীতিতে গুরুত্ব দেওয়া হবে। এ ছাড়া নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি, বৃহৎ শিল্প খাতের ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজকে শক্তিশালী করা এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির কৌশল নেওয়া হবে। তিনি বলেন, অগ্রাধিকারমূলক খাতকে নীতি সহায়তা দেওয়া, চতুর্থ শিল্প বিপ্লব উপযোগী প্রযুক্তির ব্যবহারের মতো বিষয়গুলো নতুন জাতীয় শিল্পনীতিতে গুরুত্ব পাবে। এসব পদক্ষেপের ফলে ব্যবসার পরিবেশ উন্নয়ন এবং ব্যবসা সহজ করার সূচকসহ বিভিন্ন সূচকে দেশের অবস্থান উন্নত ও সংহত হবে। ফলে শিল্প ও সেবা খাতে আরও বেশি করে দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ হবে।

জাতীয় অর্থনীতিতে শিল্প খাতের অবদান প্রসঙ্গে নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, শিল্প খাতের অবদান এখন ৩৫ শতাংশ। এ হার আরও বাড়ানো এবং করোনা-পরবর্তী সময়ে অর্থনৈতিক উন্নয়ন বেগবান করতে অতিক্ষুদ্র, কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতের উন্নয়নে বিশেষ মনোযোগ দিয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়। প্রয়োজনে উদ্যোক্তাদের আরও সহযোগিতা দেওয়া হবে। করোনার ক্ষতি থেকে পুনরুদ্ধারে এসব খাতের জন্য সরকারের বরাদ্দ করা প্রণোদনার অর্থ দ্রুত ছাড় করতে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, করোনার প্রভাবে অর্থনীতিতে সংকট তৈরি হয়েছে সত্য। তবে সরকার ও সংশ্নিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বিত উদ্যোগ অর্থনীতির চালিকাশক্তিকে সঠিক পথে রেখেছে। এমন পরিস্থিতি মোকাবিলার মাধ্যমে উন্নয়নের পথে থাকার প্রচেষ্টা একটি বিশেষ সুবিধা সৃষ্টি করেছে। ফলে আগামীতে অর্থনীতি আরও মজবুত হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

আতিউর রহমান বলেন, আর্থ-সামাজিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। উন্নয়নের এই ধারাকে আগামীতে অক্ষুণ্ণ রাখতে সবাইকে একটি সমন্বিত ও সবুজ অর্থনীতি গড়ে তুলতে হবে। তিনি বলেন, করোনায় সৃষ্ট অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় রপ্তানি বহুমুখীকরণে আরও মনোযোগ দিতে হবে। পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ চাহিদাকে চাঙ্গা রাখার পরামর্শ দেন তিনি।

মাসুদুর রহমান বলেন, এসএমই খাতের সবচেয়ে বড় সমস্যা অর্থায়নের। এ ছাড়া বাজার ব্যবস্থা, নতুন প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্ত করা ও দক্ষ জনশক্তির সংকটও রয়েছে। এসব সমস্যা সমাধানে জুঁতসই সমাধান খোঁজার পরামর্শ দেন তিনি। উদ্যোক্তাদের সহায়তায় ফাউন্ডেশনের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন তিনি। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের এসএমই ক্লাস্টারগুলোতে অভিন্ন সুবিধা নিশ্চিত করতে ফাউন্ডেশন কাজ করছে বলে জানান তিনি।

বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্টের (বিল্ড) চেয়ারপারসন আবুল কাশেম খান শিল্প খাতের সংশ্নিষ্ট সব নীতিমালার মধ্যে সমন্বয় সৃষ্টির ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, নবীন উদ্যোক্তাদের জন্য ব্যবসা শুরুর প্রক্রিয়া আরও সহজ করতে হবে।
Print Close  
Print Close  
News Source
            Top
            Top
 
Home / About Us / Benifits /Invite a Friend / Policy
Copyright © Hawker 2009-2010, Allright Reserved