[ লাভ-ক্ষতি ] 2021-11-28 |
|
|
|
|
ইউরোপের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার করোনায় আবারও ঝুঁকিতে
|
|
|
ইউরো মুদ্রা ব্যবহারকারী ১৯ দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে করোনার প্রভাব এখনো সীমিত পর্যায়ে রয়েছে
ইউরোপে করোনা-পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার যখন পূর্ণোদ্যমে চলছে, শিল্প-কারখানার চাকা ঘুরতে শুরু করেছে, তখন আবারও চোখ-রাঙানি দিচ্ছে কভিড-১৯ মহামারি। এ অঞ্চলের বেশ কয়েকটি দেশে নতুন সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আসছে শীত মৌসুম ঘিরে পরিস্থিতি আবারও ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে, যা আবারও হুমকিতে ফেলবে ইউরোপের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার।
গত মঙ্গলবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও) সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, করোনা মহামারিতে ইউরোপে আগামী মার্চের মধ্যেই আরো সাত লাখ মানুষের মৃত্যু ঘটতে পারে। এতে মোট প্রাণহানি ২২ লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে। ইউরোপীয় অঞ্চলের মধ্যে রাশিয়া, সাবেক সোভিয়েতভুক্ত দেশগুলো এবং তুরস্কও রয়েছে।
সিএনএন বিজনেসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউরো মুদ্রা ব্যবহারকারী ১৯ দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে করোনার প্রভাব এখনো সীমিত পর্যায়ে রয়েছে। ব্যাবসায়িক কর্মকাণ্ডের অন্যতম পরিমাপক আইএইচএস মার্কিটের সূচক। গত অক্টোবরে এ সূচক ছয় মাসে সর্বনিম্ন হওয়ার পর নভেম্বরে বেড়েছে, যা ইউরোপে ব্যাবসায়িক কর্মকাণ্ড বেড়ে যাওয়ার প্রমাণ দেয়।
কিন্তু ভবিষ্যৎ নিয়ে এখনই শঙ্কা তৈরি হয়েছে। কারণ করোনা সংক্রমণের ব্যাপকতায় গত সপ্তাহে অস্ট্রিয়া দেশব্যাপী আবার লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছে। ইউরোপের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক দেশ জার্মানিতে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় নতুন করে কঠোর বিধি-নিষেধ আরোপ করা হচ্ছে কি না, এমন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
আইএইচএস মার্কিটের ব্যবসাবিষয়ক প্রধান অর্থনীতিবিদ ক্রিস উইলিয়ামসন বলেন, ‘নভেম্বরে ব্যাবসায়িক কর্মকাণ্ড অর্থনীতিবিদদের ধারণাকে ছাড়িয়ে গেছে। কিন্তু নতুন সংক্রমণ যেভাবে বেড়ে চলেছে, তাতে ডিসেম্বরে ব্যাবসায়িক কর্মকাণ্ড ব্যাহত হবে। ফলে চতুর্থ প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি শ্লথ হবে।’
ইউরোপীয় কমিশনের এক হিসাবে বলা হচ্ছে, ইউরোজোনে নভেম্বরে ভোক্তা আস্থা উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে। ২০২০ সালে করোনা মহামারিতে ইউরোপে অর্থনৈতিক উৎপাদন কমে যায় ৬.৩ শতাংশ। তবে সাম্প্রতিক টিকা কার্যক্রমের ফলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বেড়েছে। জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ইউরোজোনে জিডিপি প্রবৃদ্ধি আগের প্রান্তিকের চেয়ে হয়েছে ২.২ শতাংশ।
ইউরোপের ক্যাপিটাল ইকোনমিকসের অর্থনীতিবিদ জেসিকা হিন্ডস বলেন, ‘জার্মানিতে পরিস্থিতি কোন দিকে যায় তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। যদি এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় দেশটি লকডাউনে যায়, তাহলে হতে পারে বছর শেষে পুরো ইউরোপ আবারও অচলাবস্থায় পড়ে যেতে পারে।’
গত মঙ্গলবার ফ্রান্সে করোনা সংক্রমণ ৩০ হাজারের বেশি হয়েছে। এ মাত্রার সংক্রমণ গত আগস্টে সর্বশেষ দেখা গিয়েছিল। ফলে ফ্রান্সও নতুন করে কঠোর কভিড-১৯ বিধি-নিষেধ আরোপ করতে পারে। সরকারি কর্মকর্তারা এরই মধ্যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু করেছেন।
মহামারি ছাড়াও আরো বেশ কিছু অর্থনৈতিক সংকটে রয়েছে ইউরোপ। চীনের মন্থর অর্থনীতির প্রভাব, মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়া ও জ্বালানিসংকট। এতে ব্যবসার খরচ আরো বেড়ে যাবে, প্রকারান্তরে ভোক্তার পকেট থেকেও অতিরিক্ত অর্থ খসবে। তাই সামনের দিনগুলোতে ইউরোপের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কোন দিকে যায়, এ নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। |