[ শিল্প ও বাণিজ্য ] 2022-01-18
 
আরও ১০০ কোটি ডলার যোগ হচ্ছে ইডিএফে
 
রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলে (ইডিএফ) আরও এক বিলিয়ন বা ১০০ কোটি ডলার যোগ হচ্ছে। বর্তমানে এর আকার ৬০০ কোটি ডলার, যা দিয়ে দেশের রপ্তানি খাতের বৈদেশিক মুদ্রা ঋণের চাহিদা পুরোপুরি মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। বৈদেশিক মুদ্রার এ পুনঃঅর্থায়ন তহবিল থেকে ১১০ কোটি ডলারের ঋণের আবেদন জমে আছে। তহবিল সংকটে যা নিষ্পত্তি হচ্ছে না। এ অবস্থায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে আরও ১০০ কোটি ডলার ইডিএফে যুক্ত করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

জানা গেছে, দুটি কারণে এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। প্রথমত, করোনার কারণে ঋণ পরিশোধের মেয়াদ বাড়ানোর ফলে আগের ঋণ ফেরত আসতে দেরি হচ্ছে। আগে ২৭০ দিন মেয়াদে এ ঋণ দেওয়া হতো। করোনা পরিস্থিতিতে রপ্তানিকারকদের সহযোগিতা করতে মেয়াদ বাড়িয়ে ৩৬০ দিন করা হয়। দ্বিতীয়ত, সাম্প্রতিক সময়ে রপ্তানি চাঙ্গা থাকায় ঋণের চাহিদাও বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে দুই হাজার ৪৭০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২৮ দশমিক ৪১ শতাংশ বেশি।

বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ইডিএফ থেকে ঘূর্ণায়মান প্রক্রিয়ায় এক হাজার ৯৯০ কোটি ডলার বিতরণ হয়েছে। অর্থবছর শেষে এর পরিমাণ প্রায় চার হাজার কোটি ডলারে দাঁড়াবে। মাত্র ২ শতাংশ সুদে বৈদেশিক মুদ্রায় এ ঋণ পান রপ্তানিকারকরা, যা প্রধানত রপ্তানির প্রয়োজনে কাঁচামাল আমদানির জন্য দেওয়া হয়। করোনাকালে এ তহবিলে ২৫০ কোটি ডলার যোগ করা হয়েছে। বাড়তি তহবিল থেকে ১০ হাজার ৯১১ জন উদ্যোক্তাকে ঋণ দেওয়া হয়েছে। তবে অনেকে এই তহবিল থেকে ঋণ নিয়ে ফেরত দিতে পারছেন না বলে জানা গেছে। রপ্তানিকারকরা এ ঋণ নেন কোনো ব্যাংক থেকে, যা বাংলাদেশ ব্যাংক পুনঃঅর্থায়ন করে।

ইডিএফ তহবিলের সঙ্গে সম্পৃক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, আগে ঋণ আবেদন মাত্র দুই থেকে তিন দিনে নিষ্পত্তি হতো। বর্তমানে ২০ থেকে ২২ দিন লাগছে। এর কারণ তহবিল ঘাটতি। এ পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক তহবিল বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে ৫০ কোটি ডলার যোগ করা হবে। পরে আরও ৫০ কোটি ডলার যোগ হবে। তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বৈদেশিক মুদ্রার মজুত থেকে অর্থ নিয়ে বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার করা হলে তা রিজার্ভের হিসাবের বাইরে রাখার পরামর্শ দিয়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সম্মতির অপেক্ষায় রয়েছে।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর সমকালকে বলেন, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় রপ্তানি খাতকে সহায়তার জন্য ইডিএফ বাড়ানোর দরকার হলে বাংলাদেশ ব্যাংক বা সরকার সে সিদ্ধান্ত অবশ্যই নিতে পারে। তবে রিজার্ভ থেকে ইডিএফে নিয়ে, তা আবার রিজার্ভের হিসাবে দেখানো ঠিক হবে না।

ইডিএফ থেকে বেশি ঋণ নেন দেশের টেক্সটাইল খাতের কোম্পানিগুলো। এ খাতের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিটিএমএর সভাপতি মোহাম্মাদ আলী খোকন সমকালকে বলেন, তুলার দাম দ্বিগুণ হয়ে গেছে। রপ্তানি আদেশ বেড়েছে। আগের ঋণসীমা দিয়ে এখন প্রয়োজনীয় কাঁচামাল বা মধ্যবর্তী পণ্য আমদানি করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে ইডিএফের তহবিল বাড়ানো দরকার। পাশাপাশি যেসব গ্রাহক সময়মতো ঋণ ফেরত দিচ্ছেন, তাদের দ্রুত আবার অর্থায়ন করার নিয়ম করা দরকার।

প্রি-শিপমেন্ট ক্রেডিট স্কিম সহজ হতে পারে :এদিকে রপ্তানিকারকদের সহায়তা করতে স্থানীয় মুদ্রার তহবিল প্রাক্‌-জাহাজীকরণ ঋণ বা প্রি-শিপমেন্ট ক্রেডিট স্কিম আরও সহজ করতে বাংলাদেশ ব্যাংককে পরামর্শ দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি অর্থ বিভাগ থেকে এ বিষয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। ৫০০ কোটি টাকার এ তহবিলের সুদহার ৫ শতাংশ হলেও রপ্তানিকারকরা ঋণ নিতে খুব একটা আগ্রহ দেখান না। কয়েকজন রপ্তানিকারক জানিয়েছেন, সাধারণত তাদের মাসের ২৫ তারিখ থেকে পরবর্তী মাসের ১০ তারিখ পর্যন্ত টাকার সংকট থাকে। কিন্তু প্রি-শিপমেন্ট ক্রেডিট স্কিম থেকে ঋণ পেতে অনেক সময় লেগে যায়। পদ্ধতিগত জটিলতাও অনেক। অন্যদিকে সুদহারও বেশি। স্বল্পমেয়াদি ঋণে ৫ শতাংশ সুদ দিয়ে এবং জটিল পদ্ধতি অনুসরণ করে ঋণ নেওয়ার ঝামেলায় ব্যবসায়ীরা যেতে চান না। এর চেয়ে ডিসকাউন্টিং করা ব্যবসায়ীদের জন্য লাভজনক। সর্বোচ্চ ৩ দশমিক ৮ শতাংশ হারে ডিসকাউন্ট করা যাচ্ছে। ফলে রপ্তানিকারকরা এই তহবিল থেকে ঋণ নিতে আগ্রহ দেখান না। জানা গেছে, এ তহবিলের ঋণের জন্য ইডিএফের মতো এক পৃষ্ঠার আবেদন ও সুদহার কমানো হতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত মাত্র ৬৭টি প্রতিষ্ঠান এই তহবিল থেকে ৫১৩ কোটি ৫১ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছে।
Print Close  
Print Close  
News Source
            Top
            Top
 
Home / About Us / Benifits /Invite a Friend / Policy
Copyright © Hawker 2009-2010, Allright Reserved