চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আমদানি পণ্যের কনটেইনার খালাস নিতে প্রথমে যেতে হয় ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টারে। সেখান থেকে সংশ্লিষ্ট আমদানিকারকের কনটেইনারটির অবস্থান জানানো হয়। অভিযোগ উঠেছে- বর্তমানে ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টারের দেওয়া তথ্যানুযায়ী কনটেইনার খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। জেনারেল কার্গো বার্থে (জিসিবি) নিয়মিত ঘটছে এমন ঘটনা। ফলে পণ্য খালাসে সময়ক্ষেপণ হচ্ছে। এতে একদিকে ব্যয় বাড়ে, অন্যদিকে রপ্তানি ব্যাহত হচ্ছে শিল্পের কাঁচামাল সংকটে।
এ ছাড়া বন্দর থেকে এলসিএল (একই কনটেইনারে একাধিক আমদানিকারকের পণ্য) কনটেইনারের পণ্য খালাস এবং রপ্তানি পণ্যের কনটেইনার পাঠাতে বিলম্ব হচ্ছে। সম্প্রতি এ তিন সমস্যায় ভোগান্তিতে পড়ছেন ব্যবসায়ীরা। ফলে আমদানি পণ্য খালাসে বিঘœ সৃষ্টির পাশাপাশি রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
এলসিএল পণ্য খালাসে সাত থেকে ১০ দিন সময়ক্ষেপণ হচ্ছে জানিয়ে এসব সমস্যা দ্রুত সমাধানের অনুরোধ জানিয়েছে পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ। তারা বলছেন, এতে দেশের প্রধান রপ্তানি খাত পোশাক কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য গতিশীল করতে চট্টগ্রাম বন্দরের ডেলিভারি শেড বৃদ্ধি এবং শেডের আধুনিকায়নের দাবি জানিয়েছেন বিজিএমইএ নেতারা। বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল (পিসিটি) চালু হলে এ সমস্যা থাকবে না।
একাধিক সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বন্দরে আসা আমদানি পণ্যের কনটেইনারে দুই ধরনের পণ্য থাকে। যে কনটেইনারে একাধিক আমদানিকারকের পণ্য থাকে, সেটিকে এলসিএল (লেস-দেন-কনটেইনার-লোড) এবং এফসিএল (ফুল কনটেইনার লোড) বলে। এফসিএল কনটেইনার বন্দর ইয়ার্ড থেকে সরাসরি আমদানিকারকের গুদান বা কারাখানায় চলে যায়। এলসিএল কনটেইনারে আসা পণ্য বন্দরে সংরক্ষিত বিভিন্ন শেডে রাখা হয়; সেখান থেকে আমদানিকারকের প্রতিনিধিরা পণ্য খালাস নেন। শেডে স্থান সংকট এবং পণ্য গুছিয়ে না রাখায় খুঁজে পেতে সমস্যা হয়। যদিও আন্তর্জাতিক মানদ- অনুযায়ী পণ্য মার্কিং করে গুছিয়ে রাখার বিধান রয়েছে। কিন্তু চট্টগ্রাম বন্দরে দুর্বল পরিচালন ব্যবস্থার কারণে তা মানা হচ্ছে না।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, এলসিএল কনটেইনারে অধিকাংশই পোশাক রপ্তানির সংশ্লিষ্ট পণ্য থাকে। ফলে এসব পণ্য পেতে দেরি হলে সঠিক সময়ে পণ্য উৎপাদন সম্ভব হয় না। একইভাবে এফসিএল কনটেইনার খুঁতে পেতে দেরি হওয়ায় খালাসে বিঘœ ঘটে। বিশেষ করে জিসিবির এ, বি, জে, আর, ৮-বি, সিসিআর, এনসিওয়াই ও এক নম্বর ইয়ার্ডে লোকেশন অনুযায়ী কনটেইনার খুঁজে পাওয়া যায় না। ফলে পণ্যের কায়িক পরীক্ষা ও শুল্কায়ন সম্পন্ন করতে না পারলে খালাস প্রক্রিয়া বাতিল করতে হয়।
এদিকে ক্রেতার কাছে রপ্তানি পণ্য পৌঁছাতে কারখানা থেকে ট্রাক বা লরিতে করে ক্রেতার নির্দেশনা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট আইসিডিতে পাঠানো হয়। সেখানে শুল্কায়নসহ যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করে জেটিতে অপেক্ষমাণ জাহাজে তুলে দেওয়া হয়। ফলে প্রাইভেট আইসিডির ট্রেইলরগুলো দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকে; এতে বিলম্ব হয় রপ্তানিবাহী কনটেইনার পাঠাতে। কিন্তু বন্দর ইয়ার্ডে রপ্তানিপণ্যের কনটেইনার রাখান স্থান সংরক্ষিত থাকলে সেখানে ট্রেইলরগুলো চলে যেতে পারত। জিসিবি ও এনসিটিতে এ সুযোগ থাকলেও সিসিটি ইয়ার্ডে এ সুবিধা নেই।
বিজিএমইএ-এর পোর্ট অ্যান্ড শিপিং বিষয়ক স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন চৌধুরী আমাদের সময়কে বলেন, এলসিএল কন্টেইনারে একাধিক আমদানিকারকের পণ্য থাকে। বিশেষত পোশাক রপ্তানিকারকদের পণ্যই বেশি থাকে। গুরুত্বপূর্ণ এই পণ্য ডেলিভারি শেডে বিচ্ছিন্নভাবে ১০ থেকে ১৫ দিন পড়ে থাকে। সঠিক সময়ে পণ্য না পেলে উৎপাদন ব্যাহত হয় এবং সঠিক সময়ে রপ্তানি করা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। রপ্তানি পণ্য জাহাজের হুক পয়েন্টে পাঠাতে হচ্ছে; ইয়ার্ডে জায়গা থাকলে রপ্তানির গতি আরও বাড়ত। এ ছাড়া ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টারে তথ্যানুযায়ী কনটেইনার পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। সময় নষ্ট হচ্ছে। দ্রুত সেবা দিতে দক্ষ জনবল বাড়ানো উচিত। এসব সমস্যা চিহ্নিত করে গতকাল সোমবার বন্দর চেয়ারম্যানকে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলেও জানান নাসির উদ্দিন।
চট্টগ্রাম বন্দর সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, পিসিটি চালু হলে এসব সমস্যা অনেকাংশেই কমে আসবে। ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টারের তথ্যানুযায়ী কনটেইনার না পাওয়া বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটি হয়তো মাঝে মাঝে হতে পারে। সবসময় হয় না।’