[ অনলাইন ] 22/05/2024 |
|
|
|
‘আমি ঘুষ নেইনি দুর্নীতি করিনি’ |
|
|
আমি কোনো অন্যায় করিনি। ঘুষ গ্রহণ বা দুর্নীতি করিনি। আমি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছি। মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে অবাক ও মর্মাহত হয়েছি। শাস্তি পাওয়ার মতো কোনো কাজ আমি করিনি। কেউ যদি তদন্ত করে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ আনতে পারে, তাহলে এর পরিণতি ভোগ করতে আমি প্রস্তুত।’ গতকাল যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার ঘোষণার পর গণমাধ্যমকে এসব কথা বলেন সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ। নিজ বাসায় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।
২০২১ সালের ২৩ জুন পর্যন্ত সেনাপ্রধানের দায়িত্বে ছিলেন জেনারেল আজিজ আহমেদ। এর আগে ২০১২ সালের ৫ ডিসেম্বর থেকে ২০১৬ সালের ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত তিনি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক ছিলেন। তা ছাড়া কুমিল্লার ৩৩ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান থাকাকালে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ ও তার ভাই এবং পরিবারের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে দেশটি। এই নিষেধাজ্ঞার প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘শাস্তি পাওয়ার মতো কোনো কাজ আমি করিনি। আমার ওই ভাইটা ২০০২ সালের পর থেকে বাংলাদেশে ছিল না। তার আগেই বিদেশে চলে গিয়েছিল। আমি ২০১২ সালে বিজিবিতে ছিলাম। তখনকার অভিযোগগুলো আনা হয়েছে। আমি আমার পদ-পদবি ব্যবহার করে তাকে চলে যেতে সাহায্য করেছি ইত্যাদি ইত্যাদি।’ তিনি বলেন, ‘আমার ভাই যে আগেই বিদেশে চলে গেছে। সে তো আর বাংলাদেশে আসার প্রয়োজন পড়ে নাই যে আমি তাকে সহযোগিতা করব। আমি কোনো সহযোগিতাই করিনি। আমি অবাক ও মর্মাহত হয়েছি। বিষয়টি দুর্ভাগ্যজনক। যে দুটো অভিযোগ আনা হয়েছে, তা সত্য নয়, মিথ্যা। তা ছাড়া আলজাজিরার তথ্যচিত্র ও মার্কিন নিষেধাজ্ঞা একই সূত্রে গাঁথা বলে মনে করছি।’
আজিজ আহমেদ আরও বলেন, ‘আমি ভাইকে আমার অফিশিয়াল ক্যাপাসিটি ব্যবহার করে, প্রচলিত নিয়মকানুন এভয়েড করে সহযোগিতা করেছি, এই অভিযোগ আমি মেনে নিতে পারছি না।’
সামরিক ঠিকাদারি চুক্তি ও ঘুষ দুর্নীতির বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে সাবেক জেনারেল আজিজ বলেন, ‘দ্বিতীয় যে বিষয়টি মার্কিন বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আমি আমার ভাইদের মিলিটারি কন্ট্রাক্ট দিয়ে, ঘুষ নিয়ে করাপশন করেছি। আমি আপনাদের মাধ্যমে আবারও বলতে চাই, পূর্বেও বলেছিলাম ডয়চে ভেলেতে আমি যখন ইন্টারভিউ দিয়েছিলাম, আমি চার বছর বিজিবির মহাপরিচালক ছিলাম, তিন বছর সেনাপ্রধান ছিলাম। এই সাত বছরে বিজিবিতে অথবা সেনাবাহিনীতে আমার কোনো ভাইকে কোনো কন্ট্রাক্ট দিয়েছি এর কোনো প্রমাণ কেউ আমাকে দেখাতে পারবে কি?’ তিনি বলেন, ‘আমি কোনো কন্ট্রাক্ট দিই নাই। আমি সেটা খুব গর্বের সঙ্গে, জোর দিয়ে ডয়চে ভেলের ইন্টারভিউতে বলেছিলাম। এখন আমি আর উর্দি পরিহিত নই, এখন কেউ যদি তদন্ত করে আমার বিরুদ্ধে প্রমাণ আনতে পারেন যে আমি বিজিবি অথবা সেনাবাহিনীতে আমার কোনো ভাইকে কন্ট্রাক্ট দিয়েছিলাম। তাহলে আমি এর পরিণতি ভোগ করতে প্রস্তুত।’
গত সোমবার গভীর রাতে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে নিষেধাজ্ঞা জারির আদেশ জারি করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলারের বিবৃতিতে বলা হয়, উল্লেখযোগ্য দুর্নীতিতে সম্পৃক্ততার কারণে জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদকে পূর্বে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর প্রধান, ডিপার্টমেন্ট অব স্টেট, ফরেন অপারেশন অ্যান্ড রিলেটেড প্রোগ্রামস অ্যাপ্রোপ্রিয়েশনস অ্যাক্টের ৭০৩১ (সি) ধারার আওতায় অন্তর্ভুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছে পররাষ্ট্র দপ্তর। ফলে আজিজ আহমেদ এবং তার পরিবারের সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য হবেন। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আজিজ আহমেদের কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অবমূল্যায়ন এবং সরকারি প্রতিষ্ঠান ও প্রক্রিয়ার ওপর জনগণের আস্থা কমেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, আজিজ আহমেদ তার ভাইকে বাংলাদেশে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য জবাবদিহি এড়াতে সহযোগিতা করেন। এটি করতে গিয়ে তিনি নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপের মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য দুর্নীতিতে জড়িয়েছেন। এ ছাড়া অন্যায্যভাবে সামরিক খাতে কন্ট্রাক্ট পাওয়া নিশ্চিত করার জন্য তিনি তার ভাইয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছেন। তিনি নিজের স্বার্থের জন্য সরকারি নিয়োগের বিনিময়ে ঘুষ নিয়েছেন। আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও আইনের শাসন শক্তিশালী করতে যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গীকার পুনরায় নিশ্চিত করা হলো।
জানা গেছে, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন’ নামে একটি তথ্যচিত্র প্রকাশ করা হয়। তথ্যচিত্রটি সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ এবং তার ভাইদের কর্মকাণ্ড নিয়ে ছিল। |
News Source
|
|
|
|
|
|
|
|
Today's Other News
|
Related Stories |
|
|
|
|