Hawkerbd.com     SINCE
 
 
 
 
শতকোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ [ প্রথম পাতা ] 20/07/2022
শতকোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ
অচল ডেমো ট্রেনের জন্য প্রায় এক কোটি টাকার মালপত্র কিনেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এই মালপত্র ‘জরুরি প্রয়োজন’ উল্লেখ করে কেনা হয়েছে। ফলে সীমিত দরপত্র পদ্ধতিতে এগুলো কেনা হয়। ২০২০ সালের ৪ নভেম্বর কেনা মালপত্র ওই বছরের ২৯ ডিসেম্বর রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের সহকারী সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক বুঝে নেন।

যদিও এই মালপত্র আর ব্যবহার করা হয়নি। সেই মালপত্রের মধ্যে ২২ ধরনের যন্ত্রাংশ চুক্তি অনুযায়ী সরবরাহ করেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। যথাযথ মালপত্র সরবরাহ না করায় সরকারের ক্ষতি হয়েছে প্রায় এক কোটি পাঁচ লাখ টাকা।

বাংলাদেশ রেলওয়ের ভাণ্ডার বিভাগের ক্রয়, মজুদ ও বিতরণ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত ২০২০-২১ অর্থবছরের হিসাবের ওপর করা নিরীক্ষা প্রতিবেদনে এমন চিত্র উঠে আসে। প্রতিবেদনে দেখা যায়, মোট ৫০ ক্যাটাগরিতে ১১৭ কোটি ৩৯ লাখ ৫৮ হাজার ৮৩৫ টাকার দুর্নীতি হয়েছে। এই ৫০ ক্যাটাগরিতে আপত্তি তুলেছে নিরীক্ষাদল।

এসব আপত্তির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বেশির ভাগের জবাবে সন্তুষ্ট হতে পারেনি নিরীক্ষাদল। অসন্তুষ্টির বিষয়টি প্রতিবেদনেও উল্লেখ করা হয়েছে।

রেলওয়ের ‘ভাণ্ডার বিভাগের ক্রয়, মজুদ ও বিতরণ ব্যবস্থাপনার’ দায়িত্ব রেলওয়ের রোলিং স্টক (আরএস) বিভাগের অধীনে। এই নিরীক্ষা আপত্তির বিষয়ে কথা বলতে রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (আরএস) মো. মঞ্জুর-উল-আলম চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি। রেল ভবনে তাঁর দপ্তরে গেলেও তিনি সাক্ষাৎ দেননি।

নিরীক্ষা আপত্তিতে বেশি দামে মালপত্র কেনা, মাল না নিয়েই বিল পরিশোধ করা, ব্যবহার উপযোগী নয়—এমন মালপত্র কেনা, জরুরি প্রয়োজন দেখিয়ে কেনা কোটি টাকার মালপত্র ফেলে রাখার ঘটনাও উল্লেখ করা হয়েছে। চুক্তি না মেনে মালপত্র কেনা এবং ঠিকাদারকে সুবিধা দেওয়ার কথাও আছে ওই প্রতিবেদনে।

নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, জিল্লুর রহমান নামের একই ব্যক্তি ভিন্ন ভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে রেলওয়ের দরপত্রে অংশ নেন। নিয়ম না মেনে তাঁর মাধ্যমে প্রায় আড়াই কোটি টাকার মালপত্র কেনা হয়েছে। আরেকটি ঘটনায় সীমিত দরপত্রের সীমা ছাড়িয়ে প্রায় সাড়ে ৬৬ লাখ টাকার মালপত্র কেনা হয়েছে। দরপত্রে অকৃতকার্য ঠিকাদারকেও প্রায় ২৬ লাখ টাকার কাজ দেওয়া হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়, প্রয়োজন না থাকার পরও প্রায় সাত লাখ টাকার ‘এমএস শিট’ স্টিলের পাত কিনে ফেলে রাখা হয়েছে। দরপত্র ছাড়াই প্রায় ১২ লাখ টাকার চুক্তি করা হয়েছে। প্রায় আড়াই কোটি টাকার মালপত্র মজুদের খাতায় হিসাবে না রেখে আড়াল করা হয়। রেলের নিয়ম অনুযায়ী, সীমিত দরপত্র পদ্ধতিতে যেসব মালপত্র কেনা হবে সেগুলোর বিল দেওয়ার আগে কারিগরি পরীক্ষা করে দেখা হয়। কিন্তু কারিগরি পরীক্ষা ছাড়াই প্রায় ৭৫ লাখ টাকার বিল পরিশোধ করা হয়েছে।

এদিকে রেলওয়ের নিজস্ব ছাপাখানা থাকা সত্ত্বেও স্থানীয় বাজার থেকে প্রায় ২৬ লাখ টাকার মনিহারি দ্রব্য কেনা হয়েছে। নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়, বিভিন্ন ধরনের ফরম, ব্লক, শিট রেলওয়ের ছাপাখানায় তৈরি করা সম্ভব। নিরীক্ষাদল বলছে, রেলের ছাপাখানায় সব মেশিন সচল অবস্থায় আছে। তবু সীমিত দরপত্রের মাধ্যমে এগুলো বাইরে থেকে কেনা হয়েছে।

নিরীক্ষাদলের এই আপত্তির জবাবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে রোলিং স্টক বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, ট্রেন পরিচালনার জন্য টিকিট ও ফরম ছাপাতে প্রিন্টিং প্রেস কাজ করে যাচ্ছে। একটি মাত্র মেশিন দিয়ে ছাপার কাজ করা হয় এবং মাঝেমধ্যে সেই মেশিনও অচল থাকে। তাই জরুরি সামগ্রী বাইরে থেকে কেনা হয়েছে।

এসব দুর্নীতির বিষয়ে জানতে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক ধীরেন্দ্র নাথ মজুমদারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি কথা বলতে চাননি। তাঁর দপ্তরে গেলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হুমায়ুন কবীরের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।

নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অনিয়মিতভাবে প্রায় ৮৩ লাখ টাকার চুক্তি করে রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট দপ্তর, যেখানে ক্রয় ভাণ্ডারের নাম, স্বাক্ষর, স্ট্যামপ নম্বর ও তারিখ উল্লেখই ছিল না। এভাবেই প্রায় এক কোটি ৮৩ লাখ টাকার মালপত্র কেনা হয়েছে। আবার দরপত্র মূল্যায়ন কমিটিতে মন্ত্রণালয়ের বাইরের কাউকে না রেখে প্রায় সোয়া কোটি টাকার মালপত্র কেনা হয়েছে। আর যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই বিভিন্ন কাজে ৫২ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়েছে।

নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, রেলের পশ্চিমাঞ্চল ভাঙ্গারি হিসেবে মালপত্র বিক্রি করতে না পারায় প্রায় ৭৩ কোটি টাকার রাজস্ব হারিয়েছে সরকার। ২০২০-২১ অর্থবছরে ৮৫ কোটি টাকার মালপত্র বিক্রি করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়।

এ বিষয়ে নিরীক্ষাদলের কাছে সংশ্লিষ্ট বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, কভিড পরিস্থিতির কারণে পরিবহন ও সরকারি অফিস বন্ধ থাকায় রেলের বিভিন্ন বিভাগ থেকে কাঙ্ক্ষিত ভাঙ্গারি মালপত্র পাওয়া যায়নি। ফলে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হয়নি।

আপত্তির এমন জবাব নিষ্পত্তির জন্য সহায়ক নয় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চল লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হলেও ভাঙ্গারি মালপত্রের ক্ষেত্রে পূর্বাঞ্চল লক্ষ্য অর্জন করতে পেরেছে।  

নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঠিকাদার চুক্তি অনুযায়ী ওজন মাপার মেশিন সরবরাহ না করায় সরকারের ক্ষতি হয়েছে প্রায় সাড়ে ৬২ লাখ টাকা। আবার একই ব্যক্তি বিভিন্ন নামে প্রায় ১০ লাখ টাকার চুক্তি করেছে। হাতের লেখা একই থাকার পরেও সেটা রেলের কর্মকর্তারা তা আটকাননি। এ ছাড়া আইন না মেনে অনিয়মিত চুক্তি, বীমা না করা, আয়কর ও ভ্যাট ফাঁকি দেওয়ার ঘটনাও ছিল নিয়মিত বিষয়।

এই নিরীক্ষা প্রতিবেদনের বেশির ভাগ আপত্তির জবাব দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তবে সেসব জবাবে নিরীক্ষাদল সন্তুষ্ট হতে পারেনি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই জবাবগুলো ‘আপত্তি নিষ্পত্তির জন্য সহায়ক নয়’ বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে নিরীক্ষাদল।

সার্বিক বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এ ধরনের অনিয়ম সরাসরি দুর্নীতির মধ্যে পড়ে। নিরীক্ষা আপত্তিগুলো সঠিকভাবে নিষ্পত্তি হওয়া প্রয়োজন। তা না হলে এমন দুর্নীতি থামানো যাবে না। উল্টো দুর্নীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের আড়াল করলে তাঁদের উৎসাহ দেওয়া হবে। ’
News Source
 
 
 
 
Today's Other News
• ঝিনাইদহ প্রাথমিকে অনলাইনে বদলি জালিয়াতি চক্রের সন্ধান
• ঘুষ নিতে গিয়ে ধরা খেলেন ভুয়া সিআইডি কর্মকর্তা
• ডিজিটাল ইমিগ্রেশন ব্যবস্থা শুরু যুক্তরাজ্যে, কমবে জালিয়াতি
• ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়ে হাতিয়ে নিতেন অর্থ
• প্রবাসীদের সাথে প্রতারণার মাধ্যমেই মামুনের বিলাসী গাড়ি-বাড়ি
• রাজশাহীতে সেনাবাহিনীতে চাকরি দেয়ার নামে প্রতারণা, গ্রেফতার ৩
• প্রশিক্ষণের নামে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি টাকা, ঢাকায় ফ্ল্যাট, গাড়ি
• মাত্র পাঁচ বছরেই সম্পদে টইটম্বুর কুষ্টিয়ার আতা
• মানব পাচার চক্রে ২২ বাংলাদেশি
• বিলিংয়ের ৯৮% আদায়ের দাবি ঢাকা ওয়াসার, গায়েব ৩২২১ কোটি টাকা
More
Related Stories
 
Forward to Friend Print Close Add to Archive Personal Archive  
Forward to Friend Print Close Add to Archive Personal Archive  
 
 
Home / About Us / Benifits / Invite a Friend / Policy
Copyright © Hawker 2013-2012, Allright Reserved