Hawkerbd.com     SINCE
 
 
 
 
বিকাশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ সিআইডির [ শেষের পাতা ] 05/08/2022
বিধিবহির্ভূত লেনদেন
বিকাশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ সিআইডির
মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) বিকাশের বিরুদ্ধে বিধিবহির্ভূত লেনদেনে সম্পৃক্ততার অভিযোগ উঠেছে। এখন পর্যন্ত মোট চার ধরনের লেনদেনের ক্ষেত্রে এসব অসংগতি ধরা পড়েছে। এর মধ্যে মার্চেন্ট হিসাবগুলোয় সবচেয়ে বেশি বেআইনি লেনদেন পাওয়া গিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংককে পাঠানো পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) অন্তত দুটি প্রতিবেদনে বিধিবহির্ভূতভাবে হিসাব খোলা ও লেনদেনের তথ্য-প্রমাণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এসব ঘটনায় বিকাশ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেছে সংস্থাটি।

ব্যবসায়ীদের জন্য বিকাশের বিশেষ অ্যাকাউন্টের নাম মার্চেন্ট। এর মাধ্যমে ক্রেতার কাছ থেকে পণ্য বা সেবা বিক্রির বিল গ্রহণ করতে পারেন ব্যবসায়ীরা। মার্চেন্ট অ্যাকাউন্টগুলোতে ব্যক্তিগত হিসাবের চেয়ে বেশি সুবিধা পাওয়া যায়। সম্প্রতি কিছু মার্চেন্ট হিসাবে গুণিতক ও অনুক্রমিক লেনদেনের তথ্য ধরা পড়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গোয়েন্দা শাখা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) কাছে। পরে এসব মার্চেন্ট হিসাবের সার্বিক কার্যক্রম অনুসন্ধানের জন্য পাঠানো হয় সিআইডিতে। অনুসন্ধান শেষে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে দুটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে সিআইডি।

সিআইডির প্রতিবেদনে বলা হয়, বিকাশের মার্চেন্ট হিসাব থেকে দূরবর্তী বিভিন্ন জেলার এজেন্ট হিসাবে অর্থ পাঠানো, এজেন্ট হিসাবে উচ্চহারে লেনদেন, ৭০ টাকা বা এর গুণিতক অংকে মার্চেন্ট পেমেন্ট এবং অনুক্রমিক অংকে মার্চেন্ট পেমেন্টের মাধ্যমে লেনদেন করা হয়েছে। আর এর সবগুলোই নিয়মবহির্ভূত। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশে অসংগতি পাওয়া গিয়েছে মার্চেন্ট হিসাবে লেনদেনের ক্ষেত্রে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে পাঠানো মার্চেন্ট নম্বরের মধ্যে একটি নম্বর রয়েছে ম্যাচিং ফ্যাব্রিক্স ও শাড়ি হাউজের নামে। বিকাশের কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটির অবস্থান গুলশানে। কিন্তু এ প্রতিষ্ঠানের নামে খোলা মার্চেন্ট হিসাবটি উদ্ধার হয়েছে দিনাজপুর থেকে। তন্ময় সান্যাল নামের এক ব্যক্তি অনলাইনভিত্তিক গেমসের চিপস বিক্রির জন্য ম্যাচিং ফ্যাব্রিক্স ও শাড়ি হাউজের নামে খোলা মার্চেন্ট হিসাবটি ব্যবহার করতেন।

একইভাবে ঢাকার আশুলিয়ার মোল্লা ডেকোরেটর অ্যান্ড টেলিকমের নামে খোলা মার্চেন্ট হিসাবটি ব্যবহার করছেন বিকাশ এজেন্ট মো. রাজু আহম্মেদ। বিধিবহির্ভূতভাবে নিজের এজেন্ট পয়েন্টে এ মার্চেন্ট অ্যাকাউন্টটি ব্যবহার করে লেনদেন করছেন তিনি। আরেকটি মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে চট্টগ্রামের প্রতিষ্ঠান টু স্টার পোলট্রি অ্যান্ড সেলস সেন্টারের নামে। কিন্তু সেই বিকাশ মার্চেন্ট অ্যাকাউন্টটি উদ্ধার করা হয়েছে পার্শ্ববর্তী বিকাশ এজেন্ট পয়েন্ট বায়েজিদ কুলিং কর্নার অ্যান্ড টেলিকম থেকে। সেখানে ক্যাশআউট করতে আসা গ্রাহকদের কাছ থেকে মার্চেন্ট হিসাবে পেমেন্ট নেয়া হতো, যা বিধিসম্মত নয়। কোনো গ্রাহক বিকাশের মাধ্যমে টাকা পাঠাতে চাইলে দূবরর্তী এজেন্ট নম্বরে মার্চেন্ট টু এজেন্ট (এম টু এ) নিয়মে টাকা ট্রান্সফার করে লেনদেন করা হতো।

অনুসন্ধান সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, ঢাকা ও এর আশপাশের আরো বেশকিছু মার্চেন্ট নম্বর পাওয়া গিয়েছে, যেগুলোতে ৭০ টাকা বা এর গুণিতক অংকে মার্চেন্ট পেমেন্ট হয়েছে। এছাড়া বেশ কয়েকজন বিকাশ এজেন্ট তাদের হেফাজতে থাকা মার্চেন্ট অ্যাকাউন্টে কোনো পণ্য বা সেবা না কিনেই গুণিতক হারে পেমেন্ট করেছেন, যা নিয়ম অনুযায়ী সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে প্রথমে ২০০০ টাকা, এরপর ১৯৯৯ টাকা, এভাবে পর্যায়ক্রমে ১ টাকা করে কমিয়ে অনুক্রমিক অংকে মার্চেন্ট পেমেন্টের মাধ্যমে লেনদেন করা হয়েছে।

মার্চেন্ট হিসাবের পাশাপাশি এজেন্ট হিসাবে বিধিবহির্ভূত লেনদেনেরও প্রমাণ পেয়েছে সিআইডি। যেমন বিকাশ এজেন্ট হিসেবে ২০১৬ সালে হিসাব চালু করেন এহেছানুল হক নামে এক ব্যক্তি। কিন্তু তার এজেন্ট নম্বরটি উদ্ধার করা হয়েছে চাচাতো ভাই জাহেদুল আলমের হেফাজত থেকে। ওই এজেন্ট নম্বরে তিন মাসে ৪ হাজার ১০১ বার ক্যাশ ইনের মাধ্যমে ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৭২ হাজার ৪১৯ টাকা পাঠানো হয়েছে। এত অল্প সময়ের মধ্যে অনেক বেশি ক্যাশ ইন হওয়ার কারণ হিসেবে এহেছানুল হক সিআইডিকে জানিয়েছেন, তাদের এলাকায় অবস্থানরত ইট ভাটা, নদী ও খাল খনন, পোশাক কারখানা এবং ডেইরি ফার্মে কর্মরত কর্মীদের মজুরির টাকা তাদের পরিবারের কাছে বিভিন্ন সময় ক্যাশ ইনের মাধ্যমে পাঠানো হয়। এছাড়া এলাকার ব্যবসায়ীরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মালামাল কেনাবেচা করেন, যার লেনদেনও বিকাশে ক্যাশ ইনের মাধ্যমে করা হয়।

নিয়ম অনুযায়ী, একজন এজেন্ট প্রতিদিন সকালে বিকাশের ডেইলি সেলস অফিসারের কাছ থেকে ডিজিটাল মানি কিনে নেন। এরপর গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী দিনভর তা ক্যাশ ইন করেন। সে হিসেবে এজেন্টের ডিজিটাল মানির তথ্য বিকাশের কাছে থাকে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিয়মবহির্ভূতভাবে এ এজেন্ট তার অ্যাকাউন্টে অর্থ লেনদেন করেছেন।

অনুসন্ধানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, একটি বিকাশ অ্যাকাউন্ট চালু করতে কয়েকটি ধাপ পার হতে হয়। এর মধ্যে বিকাশের কয়েক স্তরের কর্মকর্তাদের দায়িত্ব থাকে গ্রাহকদের সব তথ্য সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই করে সেটি চালু করা। কিন্তু বিধিবহির্ভূত লেনদেনে জড়িয়ে পড়া বিকাশ হিসাবগুলোর ক্ষেত্রে সঠিকভাবে গ্রাহকের তথ্য যাচাই-বাছাই করা হয়নি। ফলে অনেকেই মার্চেন্ট ও এজেন্ট অ্যাকাউন্ট খুলে বেআইনি লেনদেনে জড়িয়েছেন। অনেক ক্ষেত্রে এসব কার্যক্রমের সঙ্গে স্থানীয় পর্যায়ে বিকাশের ডিলার ও বিক্রয় প্রতিনিধিরা (এসআর) জড়িয়ে যাচ্ছেন।

বিএফআইইউর বিশেষ পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবির বণিক বার্তাকে বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে পাঠানো সুনির্দিষ্ট কিছু বিষয় নিয়ে আমরা কাজ করেছি। সেখানে বিকাশের বেশকিছু বিধিবহির্ভূত লেনদেনের তথ্যপ্রমাণ আমরা পেয়েছি। এসব হিসাব খোলার ক্ষেত্রে যাদের সংশ্লিষ্টতা ছিল, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আমরা সুপারিশ করেছি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গোয়েন্দা ইউনিটের কাছে পাঠানো সিআইডির দুটি প্রতিবেদনেই বিকাশ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, সার্বিক অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, উল্লেখিত বিকাশ মার্চেন্ট হিসাবগুলো মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের নিয়ম ভঙ্গ করে বিধিবহির্ভূতভাবে খোলা হয়েছে। মার্চেন্ট হিসাবগুলো বিকাশ এজেন্ট পয়েন্টে রেখে তাতে বিধিবহির্ভূতভাবে লেনদেন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে। এ অবস্থায় বিকাশের মার্চেন্ট হিসাবগুলোর নিবন্ধন বাতিল, যেসব ডেইলি সেলস অফিসার (ডিএসও) ওইসব মার্চেন্ট হিসাব নিয়ম ভঙ্গ করে খুলে দিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।

পাশাপাশি যেসব এজেন্ট পয়েন্টে মার্চেন্ট হিসাবগুলো রেখে বিধিবহির্ভূতভাবে লেনদেন করেছে, তাদের এজেন্টশিপ বাতিল, নিবন্ধনদাতা ডিস্ট্রিবিউটরের ডিস্ট্রিবিউশনশিপ বাতিলের সুপারিশসহ বিকাশ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে বিকাশের হেড অব করপোরেট কমিউনিকেশনস শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম বণিক বার্তাকে বলেন, গ্রাহকদের অ্যাকাউন্ট খোলার ক্ষেত্রে তার জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাই করা হয়। আবার মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট খোলার সময় ট্রেড লাইসেন্সসহ প্রয়োজনীয় সব ধরনের কাগজপত্র যাচাই করে দেখা হয়। এর পরও যদি কোনো হিসাবে অসংগতি ধরা পড়ে, সেক্ষেত্রে সঙ্গে সঙ্গে তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়। এসব ব্যবস্থা নেয়ার পরও যদি কোনো বিকাশ হিসাব থেকে বিধিবহির্ভূত লেনদেন হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে অবশ্যই তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
News Source
 
 
 
 
Today's Other News
• আবু জমজম স্মৃতি কাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত
• তিন কর্মকর্তাকে এসইভিপি পদে পদোন্নতি দিল ব্র্যাক ব্যাংক
• ‘ন্যাশনাল ব্যাংকের পর আপাতত একীভূতকরণ প্রস্তাব আর নয়’
• ঋণখেলাপি চিহ্নিত করতে প্রার্থীর তথ্য চেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক
• মার্কেন্টাইল ব্যাংকের লভ্যাংশ ঘোষণায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সম্মতি
• চাঁদপুরে কয়েক কোটি টাকা নিয়ে ব্যাংক ব্যবস্থাপক উধাও
• আপাতত মার্জারে যাচ্ছে ১০ ব্যাংক, এর বাইরে নয়: বাংলাদেশ ব্যাংক
• গ্রাহকদের টাকা নিয়ে উধাও ব্যাংকের ব্যবস্থাপক
• একীভূতকরণের খবরে ইউসিবির শেয়ারের দাম বেড়েছে, কমেছে ন্যাশনাল ব্যাংকের শেয়ারের দাম
• একীভূতকরণের খবরে ইউসিবির শেয়ারের দাম বেড়েছে, কমেছে ন্যাশনাল ব্যাংকের শেয়ারের দাম
More
Related Stories
 
Forward to Friend Print Close Add to Archive Personal Archive  
Forward to Friend Print Close Add to Archive Personal Archive  
 
 
Home / About Us / Benifits / Invite a Friend / Policy
Copyright © Hawker 2013-2012, Allright Reserved