জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি পরে পেট্রল-অকটেনে লাভ হলেও ডিজেলে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) লোকসান হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান এমবিএম আজাদ। তিনি জানান, জ্বালানি তেল বিক্রি করে বিপিসির ৫৩ হাজার কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। পরে লাভ হলেও তার থেকে সরকারকে ফেরত দেওয়া হয়েছে ৮-১০ হাজার কোটি টাকার মতো। এখনো তাদের আরও ২৭ হাজার কোটি টাকা ঋণ রয়ে গেছে। গতকাল শনিবার রাজধানীর বনানীর ঢাকা গ্যালারিতে এডিটরস গিল্ড বাংলাদেশের ‘বিশ^ জ¦ালানি সংকট
ও বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। এডিটরস গিল্ড সভাপতি মোজাম্মেল বাবুর সঞ্চালনায় বৈঠকে অংশ নেন সরকারের সংশ্লিষ্ট শীর্ষ কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞরা।
জ্বালানি তেলে এনবিআরের ট্যাক্স মওকুফ বা কমানোর সম্ভাব্যতার বিষয়ে বিপিসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘ট্যাক্সের বিষয়টা আইন এবং সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী হয়। আমরা সেই সিস্টেমের একটা অংশ, সেটি অনুসরণ করা আমাদের প্রথম দায়িত্ব। সরকার তার রাজনৈতিক অবস্থান থেকে যে সিদ্ধান্ত দেবে, আমরা সেটা বাস্তবায়ন করব।’ বিপিসির সক্ষমতা ও দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে তিনি বলেন, ‘গত ৩৬ বছরে দেশের জ¦ালানি সরবরাহ ঠিক রাখতে যে দক্ষতা ও সক্ষমতা দরকার তা এখন পর্যন্ত আছে। এখানে দুর্নীতির কোনো সুযোগ নেই। আমদানি এবং মজুদ ব্যবস্থাপনায় কোনো ঘাটতি নেই। অনেকে এখন লাভ করছি বললেও আমাদের ২৭ হাজার কোটি টাকা ঋণ রয়ে গেছে।’
ট্যাক্স বৃদ্ধির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব ও সাবেক বিদ্যুৎ সচিব আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘এনবিআরের ট্যাক্স জিডিপি রেশিও বাংলাদেশে খুব খারাপ। যিনি যত বেশি ধনী, তার ওপর ট্যাক্স তত বেশি হচ্ছে। ট্যাক্স কমিয়ে দিলে উন্নয়নের টাকা কম হবে। উন্নয়ন হলে সবাই সুবিধা ভোগ করবে। বাংলাদেশের বাস্তবতায় তেল-গ্যাসের দাম বারবার বাড়ানো-কমানো সম্ভব নয়। বহির্বিশে^র চেয়ে দেশে দাম কম, সে জন্য এটি করা যাচ্ছে না। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটি আরেকটু সময় নিয়ে ভাবতে হবে। এক্ষেত্রে বিদ্যুতের সমস্যা সমাধানে ব্যাপকভাবে উৎপাদনে যেতে হবে সৌরবিদ্যুতের। রাস্তা, রেল, কারখানা, অফিস-আদালত ব্যাপকভাবে সৌরবিদ্যুতে যেতে পারলে সুবিধা হবে। সোলার আমদানি করতে গেলেও কম দামে পাওয়া যাবে।’
পেট্রোবাংলার সাবেক চেয়ারম্যান ড. হোসেন মনসুর বলেন, ‘বিবিয়ানা থেকে যে গ্যাস আমরা কিনি, সেখানে ৪-৫ গুণ ভর্তুকি দিতে হয়। বেশি দামে কিনে ভর্তুকি দিয়ে কম দামে বিক্রি করতে হয় স্টেক হোল্ডারদের কাছে। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, চাহিদাও বাড়ছে, সেটি মাথায় রাখতে হবে। তেল-গ্যাসের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করতে পারলে দেশে দাম আরও বাড়বে। উন্নত দেশে পরিণত হতে হলে অবশ্যই এটি করতে হবে। হায় হায় করে লাভ নেই।’
বৈঠকে আরও বক্তব্য দেন অর্থনীতিবিদ ও পিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর, ভূতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ড. বদরুল ইমাম, জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ড. জামালউদ্দিন আহমেদ, আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ, পাওয়ার অ্যান্ড এনার্জির সম্পাদক মোল্লা এম আমজাদ হোসেন ও জ¦ালানি বিশেষজ্ঞ খন্দকার আব্দুস সালেক।