Hawkerbd.com     SINCE
 
 
 
 
বিত্তবানরা বিনিয়োগ করছেন ডলার ও স্বর্ণে [ প্রথম পাতা ] 02/11/2022
বিত্তবানরা বিনিয়োগ করছেন ডলার ও স্বর্ণে
সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংকে মেয়াদি আমানত বা এফডিআর ভাঙানোর মচ্ছব শুরু হয়েছে। ব্যাংকের মুনাফার হার কম হওয়া ও মূল্যস্ফীতি ব্যাপক মাত্রায় বেড়ে যাওয়ায় এখন বিনিয়োগের বিকল্প মাধ্যম খুঁজছেন বিত্তবানরা। এমনকি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলোও তাদের মেয়াদি আমানত ভেঙে ফেলছে। আর এসব অর্থ বিনিয়োগ হচ্ছে ডলার ও স্বর্ণের বাজারে। বর্তমানে খোলাবাজারে ডলারের ব্যাপক চাহিদা সৃষ্টি হওয়ায় এক শ্রেণির মানুষ মৌসুমি ডলার ব্যবসায় যুক্ত হয়েছেন। তাদের মাধ্যমে হাত ঘুরে ডলার চলে যাচ্ছে বিভিন্ন বড় করপোরেট গ্রুপের হাতে। সেখান থেকে পাচার হয়ে যাচ্ছে এসব ডলার। এতে একদিকে ব্যাংকে কমছে আমানতের পরিমাণ, অন্যদিকে হ্রাস পাচ্ছে ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণের সক্ষমতা। ফলে বেসরকারি খাতে অর্থের প্রবাহ ব্যাপক মাত্রায় হ্রাস পাচ্ছে। যার ফলে ব্যক্তি খাতের জৌলুস কমার পাশাপাশি কর্মসংস্থানও হ্রাস পাচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার আশঙ্কায় বর্তমানে আতঙ্কিত বিত্তশালীরা। সে কারণে ব্যাংকের এফডিআর ভেঙে তারা প্রতিনিয়ত ডলার, পাউন্ড, ইউরো ও স্বর্ণে বিনিয়োগ করছেন। ফলে প্রতিদিন খোলাবাজার থেকে ১৫ থেকে ২০ মিলিয়ন ডলার চলে যাচ্ছে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে। প্রতি সপ্তাহে যাচ্ছে প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলার। এছাড়া প্রতি মাসে খোলাবাজার থেকে ৫০০ মিলিয়ন ডলার পাচার হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন। যদিও এ বিষয়ে সরকার, বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ পাচার রোধের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) কাছে কোনো তথ্য-উপাত্ত নেই। এমনকি তাদের এ বিষয়ে কোনো চর্চাও নেই বলে গত সোমবারের এক বক্তব্যে প্রতীয়মান হয়েছে।

ডলার বাজারের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান, ডলারের সংকটময় সময়ে গতকাল বাজারে ডলারের চাহিদা ছিল আকাশচুম্বী। দেশের দুটি বড় করপোরেট গ্রুপের পক্ষ থেকে খোলাবাজারে ডলারের চাহিদা ছিল প্রায় ২০ মিলিয়ন। ডলার ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মানি এক্সচেঞ্জগুলো এ ডলার সরবরাহ করতে গলধঘর্ম হয়ে পড়ে। পরে তারা পরিচিত কয়েকজন ব্যক্তি পর্যায়ের ডলার ব্যবসায়ীর কাছ থেকে শর্তসাপেক্ষে ডলার সংগ্রহ করে করপোরেট গ্রুপ দুটিকে সরবরাহ করে বলে জানা গেছে। আরও জানা যায়, প্রতিদিন অনেক বড় ব্যবসায়ীরা কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ও সাধারণ মানুষ ব্যাংকে গচ্ছিত টাকা তুলে নিচ্ছেন। এ টাকা দিয়ে তারা ডলার কিনছেন এবং তা দেশের পাচার হচ্ছে বলে জানা যাচ্ছে। আর পাচারের গন্তব্যের শীর্ষে রয়েছে সিঙ্গাপুর। পরের অবস্থানে আরও রয়েছেÑসংযুক্ত আরব আমিরাত, ইউরোপের বিভিন্ন দেশ, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিদিন প্রতিষ্ঠানটি ১০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি রাষ্ট্রায়ত্ত বিভিন্ন ব্যাংকে সরবরাহ করছে। অথচ ডলার সংকটের কারণে সরকার প্রয়োজনীয় জ্বালানি ও অতি প্রয়োজনীয় সামগ্রী আমদানি করতে পারছে না বলে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা জানিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকসমূহে সরবরাহ করা ডলারের গন্তব্য কোথায়, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিশেষজ্ঞ মহল।

এ বিষয়ে সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন শেয়ার বিজকে বলেন, সরকার বলছে, স্পট মার্কেট থেকে গ্যাস কেনার জন্য পর্যাপ্ত রিজার্ভে পর্যাপ্ত অর্থ নেই। তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংক যে প্রতিদিন এক থেকে দেড়শ’ মিলিয়ন ডলার বাজারে ছাড়ছে, সেই ডলার যাচ্ছে কোথায়? অর্থবছরের প্রথম তিন মাস ২০ দিনের মধ্যেই ৪৬০ কোটি ডলার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে দেয়া হলো কীসের জন্য? এ ডলার তারা কোন কাজে লাগিয়েছে, সেটা বোঝা যাচ্ছে না। অথচ গত অর্থবছরের পুরো সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক খোলাবাজারে বিক্রি করেছিল মাত্র ৭০৭ কোটি ডলার। এবার চার মাসেরও কম সময়ে বিক্রি করা হয়েছে গত বছরের পুরো সময়ের ৬০ শতাংশের ওপরে।

জানা যায়, যুক্তরাজ্যে বিনিয়োগ ক্যাটেগরিতে স্থায়ী বসবাস (পিআর) পেতে দুই মিলিয়ন পাউন্ড প্রয়োজন হয়। পর্তুগাল, মাল্টাসহ বিভিন্ন দেশে ৫ লাখ ইউরো এবং অস্ট্রেলিয়ায় ১ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা লাগে। এসব ক্ষেত্রে মাঝারি ও বড় ব্যবসায়ী এবং আমলাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি কর্মচারীরা বিনিয়োগ করছেন বলে জানা গেছে। এছাড়া অস্ট্রেলিয়ায় সম্পদের মূল্য ২০ থেকে ৩০ শতাংশ কমে যাওয়ায় সেখানেও বিনিয়োগ করছেন বাংলাদেশিরা। দেশের এ সংকটকালীন সময়ে অসৎ ব্যবসায়ী ও আমলারা তাদের কালোটাকা পাচার করে দেশকে বিপদে ফেলছেন বলে অনেকে মনে করেন।

একটি সূত্র জানিয়েছে, গত সপ্তাহে একটি বড় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের কর্ণধারের জামাতা যুক্তরাজ্যে গেছেন। তিনি তার আত্মীয়-স্বজনের নামে যুক্তরাজ্যে বাড়ি কেনার জন্য অবস্থান করছেন। সেখানে তিনি ১০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবেন।

জানা যায়, গত সোমবার ডলার সংকটের কারণে অনেক ব্যাংক এলসি খুলতে পারেনি। সংকট মেটাতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ডলার সহায়তার অনুরোধ জানিয়ে আসছে ব্যাংকগুলো। সোমবারের বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, নিজস্ব উৎস থেকে ডলার সংস্থান করেই কেবল এলসি খুলতে হবে। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের বর্তমান বাস্তবতায় সামগ্রিকভাবে কোনো সহায়তা দেয়া হবে না। বেসরকারি ব্যাংকে ডলার সহায়তা দেয়া হলে তা পাচার হওয়ার শঙ্কা রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাই সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, রিজার্ভ থেকে ডলার সহায়তা না করা বাংলাদেশ ব্যাংকের ভালো সিদ্ধান্ত ছিল।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দেশের একজন ব্যবসায়ী শেয়ার বিজকে বলেন, অনেকেই অবৈধ আয়ের অর্থ বিদেশে নিয়ে যাচ্ছেন। কারণ এখন দেশে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টির আশঙ্কা দেখছেন তারা। তাই ভবিষ্যতে দেশের পরিস্থিতি কী হবে এমন শঙ্কা থেকেই তারা বিদেশে অর্থ নিয়ে যাচ্ছেন। এজন্য দেশে ডলার সংকট তৈরি হয়েছে।

একটি বেসরকারি কর্মী জাকারিয়া জানান, বেতন থেকে প্রতি মাসে তিনি ২০ হাজার টাকা করে মেয়াদি আমানত (ফিক্সড ডিপোজিট বা এফডি) হিসেবে সঞ্চয় করেন। মেয়াদ শেষ না হতেই হঠাৎ করে তার এফডিআর ভাঙার জন্য এসেছেন বেসরকারি একটি ব্যাংকে। তিন বছরের মেয়াদি আমানত দুই বছরের মাথায় ভাঙার জন্য আসেন। তিনি শেয়ার বিজকে বলেন, ব্যাংকে টাকা রেখে এখন লাভ হচ্ছে না। উল্টো লোকসান হচ্ছে। ভ্যাট ও আবগারি শুল্ক পরিশোধের পর মূল টাকা থেকে আরও টাকা চলে যাচ্ছে। তাই টাকা তুলে স্বর্ণে বিনিয়োগের কথা ভাবছেন তিনি।

প্রতিদিনই এমন অনেক গ্রাহক এফডিআর ও ডিপিএসের মতো সঞ্চয় নগদায়ন করতে ব্যাংকের শাখায় হাজির হচ্ছেন। দিন দিন এ ধরনের গ্রাহকের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। গতকাল রাজধানীর মতিঝিল ও গুলশান বিভিন্ন ব্যাংকের শাখা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।

জানতে চাইলে এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ব্যাংকে দুই শ্রেণির গ্রাহক মেয়াদি আমানত রাখেন। এক শ্রেণি মেয়াদি আমানত থেকে মাস শেষে প্রাপ্ত সুদের ওপর নির্ভর করেই জীবনযাপন করেন। তারা যদি মেয়াদি আমানত নগদায়ন করে ফেলেন, তাহলে বুঝতে হবে ব্যাংক যে সুদ দিচ্ছে, তা দিয়ে বর্তমান পরিস্থিতিতে দৈনন্দিন ব্যয় মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। দ্বিতীয়ত, ভবিষ্যৎ আর্থিক নিরাপত্তার কথা ভেবে গ্রাহকরা ব্যাংকে মেয়াদি আমানত রাখেন। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে মেয়াদি আমানত নগদায়ন করা ব্যাংক ও গ্রাহক দুই শ্রেণির জন্যই বিপজ্জনক। মেয়াদি আমানত ভেঙে ফেলার মানেই হচ্ছে গ্রাহকের ভবিষ্যতের নিরাপত্তাকে ঝুঁকিতে ফেলা। একই সঙ্গে মেয়াদি আমানত কমতে থাকা দেশের ব্যাংকিং খাতের জন্যও নেতিবাচক।

ব্যাংক আমানত নগদায়নের পাশাপাশি বিভিন্ন ব্রোকাজের হাউস থেকেও শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীরা অর্থ উত্তোলন করে তা স্বর্ণ ও ডলারে বিনিয়োগ করছেন বলে জানা গেছে।
News Source
 
 
 
 
Today's Other News
• প্রবাসীদের বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠানোর আহ্বান’
• ‘প্রবাসীদের বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠানোর আহ্বান’
• বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠানো ও দেশের সাফল্য তুলে ধরার আহ্বান
• মেঘনা ব্যাংকের নতুন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী আহ্সান খলিল
• আন্তর্জাতিক ঠিকাদারদের বৈদেশিক মুদ্রায় এলসি খোলার সুযোগ
• ব্যাংক একীভূতকরণ: সামন্তবাদী বিয়েতে অপ্রস্তুত কেন্দ্রীয় ব্যাংক
• জনতা ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালককে চৌদ্দগ্রাম ব্যাংকার্স সোসাইটির শুভেচ্ছা
• সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হতে বিডিবিএলের পর্ষদে অনুমোদন
• জনতা ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালককে চৌদ্দগ্রাম ব্যাংকার্স সোসাইটির শুভেচ্ছা
• জনতা ব্যাংকের ম্যানেজার্স ইন্ডাকশন প্রশিক্ষণ কোর্স উদ্বোধন
More
Related Stories
 
Forward to Friend Print Close Add to Archive Personal Archive  
Forward to Friend Print Close Add to Archive Personal Archive  
 
 
Home / About Us / Benifits / Invite a Friend / Policy
Copyright © Hawker 2013-2012, Allright Reserved