উচ্চ মূল্যস্ফীতিসহ বিভিন্ন কারণে এমনিতেই তারল্য সংকটে রয়েছে অনেক ব্যাংক। আবার ঈদের আগে ব্যাংক থেকে নগদ টাকা তোলার চাপ বেড়েছে। এ সময়ে সংকটে থাকা ব্যাংকগুলো চাহিদা
মেটাতে ধার নেওয়া বাড়িয়েছে। গত বুধবার এক দিনেই বিভিন্ন ব্যাংক রেকর্ড ৩২
হাজার ৬১৫ কোটি টাকা ধার করে। এর মধ্যে শুধু কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেয় ২৮ হাজার
৮৬৭ কোটি টাকা। বাকি ৩ হাজার ৭৪৮ কোটি টাকা নিয়েছে আন্তঃব্যাংক কলমানি
থেকে। এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এক দিনে সর্বোচ্চ ২৪ হাজার ৯২৬ কোটি
টাকা ধারের রেকর্ড ছিল গত ২৭ ফেব্রুয়ারি। আর সাম্প্রতিক সময়ে আন্তঃব্যাংকে
ধারের পরিমাণ রয়েছে ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য
অনুযায়ী, সব মিলিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে এখন ব্যাংকগুলোর স্বল্পমেয়াদি ধারের
স্থিতি রয়েছে ৬০ হাজার কোটি টাকার বেশি। ব্যাংকগুলো ট্রেজারি বিল ও বন্ডের
অতিরিক্ত বিনিয়োগ বন্ধক রেখে এসব ধার নেয়। বুধবার প্রচলতি ধারার
ব্যাংকগুলো ৮ থেকে ১০ শতাংশ সুদে নিয়েছে ২৩ হাজার ৪১০ কোটি টাকা। আর
শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলো ৪ থেকে ৭ শতাংশ মুনাফার বিপরীতে ৫ হাজার ৪৫৭ কোটি
টাকা। এর বাইরে শরিয়াহভিত্তিক পরিচালিত
কয়েকটি ব্যাংকের চলতি হিসাব ঋণাত্মক আছে। এসব ব্যাংককে বিল ও বন্ডের মতো
উপকরণ ছাড়াই বিপুল অংকের ধার দিয়ে রেখেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ঘোষণা
করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অনেক দিন ধরে সরকারি হিসাবেই মূল্যস্ফীতি ১০
শতাংশের কাছাকাছি আছে। গত ডিসেম্বরের মধ্যে এই মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশের নিচে
এবং আগামী জুনে সাড়ে ৭ শতাংশের নিচে নামানোর ঘোষণা দিয়েছে কেন্দ্রীয়
ব্যাংক। যদিও মূল্যস্ফীতি কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। পয়েন্ট টু
পয়েন্ট ভিত্তিতে গত ফেব্রুয়ারি মাসে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৬৬ শতাংশ। রোজার
কারণে চলতি মাসের বেশির ভাগ পণ্যের দর আরেক দফা বেড়েছে। জিনিসের দর বেশি
থাকলে স্বাভাবিকভাবে মানুষের সঞ্চয় ক্ষমতা কমে। এর মধ্যে আবার ডলার বিক্রির
বিপরীতে বাজার থেকে টাকা উঠে
আসছে। চলতি অর্থবছরের এ পর্যন্ত প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার বিক্রির বিপরীতে
কেন্দ্রীয় ব্যাংকে উঠেছে ১ লাখ কোটি টাকার বেশি। আবার সরকারের ঋণ চাহিদার বেশির ভাগই ব্যাংক থেকে তোলা হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য
অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ব্যাংক খাতে সরকারের ঋণ বেড়েছে
১০ হাজার ৭৫১ কোটি টাকা। অথচ এ সময়ে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে সরকার নিয়েছে
৪৫ হাজার ৪৭৩ কোটি টাকা। এর বিপরীতে বাংলাদেশ
ব্যাংক থেকে আগে নেওয়া ঋণের ৩৪ হাজার ৭২৩ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে। এতে করে
ট্রেজারি বিল ও বন্ডের সুদহার দ্রুত বেড়ে এখন গত এক দশকের সর্বোচ্চ
পর্যায়ে উঠেছে। চলতি মাসে স্মার্ট দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৬১ শতাংশ। এর সঙ্গে
সাড়ে তিন শতাংশ যোগ করে গ্রাহক পর্যায়ে সর্বোচ্চ সুদহার গিয়ে ঠেকেছে ১৩
দশমিক ১১ শতাংশ। গত জুনে যেখানে সর্বোচ্চ সুদহার ছিল ৯ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের বাইরে গত
বুধবার এক ব্যাংক আরেক ব্যাংক থেকে একদিন মেয়াদি কলমানিসহ বিভিন্ন মেয়াদে
ধার নিয়েছে ৩ হাজার ৭৪৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে একদিন মেয়াদি কলমানিতে গড়ে ৮
দশমিক ৭৭ শতাংশ সুদে ধারের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৯২৩ কোটি টাকা। আর চার
দিন মেয়াদ থেকে ১৮২ দিন মেয়াদে নেওয়া হয়েছে বাকি টাকা। সাড়ে ৯ শতাংশ থেকে
সর্বোচ্চ ১১ দশমিক ২৫ শতাংশ সুদে এ অর্থ নিয়েছে ব্যাংকগুলো।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন
কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, ব্যাংক খাতের ঋণের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ আর ফেরত
আসছে না। নানা কারণে এসব ঋণ নিয়মিত দেখানো হলেও আটকে থাকা ঋণের প্রবাহ কম।
আবার ব্যাংক খাতে ১০ শতাংশের কম ঋণখেলাপি দেখানো হলেও চাপে
থাকা ঋণের পরিমাণ ৩০ শতাংশের মতো। এ পরিস্থিতি কাটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক
ব্যাংক খাতের সুশাসন ফেরানো ও খেলাপি ঋণ কমাতে সম্প্রতি একটি রোডম্যাপ
ঘোষণা করেছে। এ ছাড়া চরম খারাপ অবস্থায় থাকা কয়েকটি ব্যাংক একীভূতকরণের
উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ব্যাংক খাতের অনিয়ম ঠেকাতে নতুন করে বিভিন্ন নীতিমালা
করা হচ্ছে।